Header Ads

সাইকেলে কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে লাদাখ পৌঁছালেন বঙ্গসন্তান পরিমল কাঞ্জি


সাইকেল চালিয়ে কলকাতা থেকে লাদাখ যাওয়ার সাক্ষী বাঙালি বারবার হয়েছে। দু'চাকার দুনিয়ায় ভর করে ১৯৩৩ সালে কলকাতার আঠারো বি ব্রজলাল দত্ত লেনে অবস্থিত 'স্পীডি স্টারস্' নামে একটি সংঘের কয়েকজন তরুণ বঙ্গসন্তানেরা প্রথম কলকাতা থেকে কাশ্মীর যান। বছরখানেক আগে সত্যেন দাস নামের এক বাঙালি রিক্সা চালিয়ে লাদাখ যান। সেসব এখন অতীত। চলতি বছরে আরো এক বাঙালি সাইকেল চালিয়ে কলকাতা থেকে লাদাখ পৌঁছে গেলেন। এই ব্যক্তিটি হলেন পরিমল কাঞ্জি। 


৫৫ বছর বয়সে পরিমল কাঞ্জি সাইকেল চালিয়ে লাদাখ চলে গেলেন। তিনি ভ্রমণে বেরোতে দারুণ ভালোবাসেন। ভ্রমণপিপাসু মানুষদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন তিনি। পকেটে অল্প টাকা, বেড়াতে যাওয়ার উপায় কই? তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। বেড়াতে যাওয়ার জন্য যানবাহন বলতে ভরসা তার একটি সাইকেল। ভ্রমণের অতিরিক্ত নেশা তাঁকে বাড়ির চার দেওয়ালে বন্দী রাখতে পারেনি। তিনি সাইকেল নিয়েই বেরিয়ে পড়েন ভারত ভ্রমণে। কলকাতা থেকে সাইকেলে প্যাডেল ঘুরিয়ে তিনি পৌঁছে গেলেন লাদাখে। 

চাকার সামনের বোর্ডে বড় বড় করে ইংরেজি হরফে লেখা কলকাতা। ক্রিং ক্রিং আওয়াজে ছুটে চলেছে পরিমল কাঞ্জির সাইকেল। ক্লান্তিহীন তেজ বুকে তাঁর চোখে-মুখে অ্যাডভেঞ্চারের ছোঁয়া। কখনও হালকা বিশ্রাম নেওয়া, কখনও খাবার খাওয়া তারপর ফের সাইকেলে এগিয়ে যাওয়া। সেটি নিয়েই সমতল থেকে পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছেন পরিমল বাবু। পথের দু'পাশে লোকেরা অবাক হয়ে তাঁকে দেখছে।

পরিমলবাবু বাজারের একটি থলেতে কিছু জামাকাপড় ও শুকনো খাবার ভরে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। চলতি বছরের ২১ শে জানুয়ারি লাদাখের উদ্দেশ্যে তিনি যাত্রা শুরু করেন। সাইকেলে চেপে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু ও শ্রীনগর পেরিয়ে তিনি লাদাখ পৌঁছান। বর্তমানে লে-লাদাখ হয়ে মানালির পথে অবস্থান করেছেন তিনি। তারপর হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, নেপাল ও সমস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি পেরিয়ে তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করবেন।   

সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিমলবাবুকে নিয়ে জোর চর্চা চলছে। রীতিমতো তিনি ভাইরাল হয়ে উঠেছেন। সাইকেলে করে তিনি ১৫,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেললেন। সাতমাস ধরে টানা সাইকেল চালাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন সূর্য ডোবার পর কোনো ফাঁকা জায়গা পেলে সেখানেই তাঁবু ফেলে তিনি রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয় কেউ খাবার দিয়ে গেলে তা খেয়ে কোনোক্রমে রাতটুকু বিশ্রাম করে অতিক্রম করছেন তিনি। সূর্যোদয়ের পর ঘুম থেকে উঠে তাঁবু গুটিয়ে সাইকেল নিয়ে পুনরায় বেরিয়ে পড়া। এভাবেই রুটিনমাফিক সাইকেলে ভ্রমণ করছেন তিনি।  

পথে যেতে যেতে তেমন কোনো বাঁধা বিপত্তি ঘটেনি তাঁর। কেবল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উপচে পড়ার সময় তাঁকে দুটো মাস শ্রীনগরে কাটাতে হয় এই যা। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর তিনি সাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে লাদাখ পৌঁছান। পরিমলবাবু পেশায় একজন প্রেসার কুকার সারাইয়ের মিস্ত্রি। পথে যেতে যেতে পরিবেশ রক্ষার বার্তাও তিনি ছড়াচ্ছেন। ভারতের প্রত্যেকটা রাজ্য চষে বেড়িয়ে সেখানকার খাবার-দাবার, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে তিনি পরিচিত হওয়ার জন্যই এ ভ্রমণ মূলত করছেন। যা সফল হতে খুব একটা দেরী নেই তাঁর। পরিমল কাঞ্জি ভারত ভ্রমণ শেষ করে খুব শীঘ্রই বাড়ি ফিরে আসুক এই কামনা করি৷ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments