ইয়াশ বিধ্বস্ত সাগরদ্বীপ ও গোসাবার দুর্গত মানুষদের পাশে 'রক্তিম'
ইয়াশের পর কেটেছে অনেকগুলো দিন কিন্তু সুন্দরবন ও তার পাশ্ববর্তী এলাকাগুলো এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি৷ সামনে আরো একটি ভরা কোটালের ভ্রুকুটি। পাশাপাশি সপ্তাহখানেক ধরে গোটা রাজ্যে যেভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাতে নদীর বাঁধ ভেঙে আরো বহু গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যাচ্ছে। ইয়াশ যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় বর্ষার আগমনে দুশ্চিন্তার মেঘ জমছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী ও নদীপ্রবণ এলাকাগুলোতে।
ইয়াশের পর সুন্দরবন ও তার পাশ্ববর্তী এলাকায় প্রথম দিন থেকেই অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, ফাউন্ডেশনগুলি নানাভাবে ত্রাণ কার্য চালাচ্ছে। এখনও সেই ত্রাণ কার্য চলছে। এমনকি আশা করা যাচ্ছে এখনও মাসখানেক হয়তো চলতে পারে ত্রাণের কাজ। ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকায় অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এনজিও ও ফাউন্ডেশনের মতো সাহায্যে এগিয়ে এসেছে 'রক্তিম' নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
বেরঙিন কলম নামের এক ফেসবুক পেজের আয়োজন ও অন্যান্য পেজের সহযোগিতায় একটি মানবিক উদ্যোগের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে "রক্তিম"। তারা সম্প্রতি শুরু করেছে 'এবার লড়াই মানুষ বাঁচাই' নামের একটি প্রকল্প। যে প্রকল্পটির প্রথম পর্বের আয়োজন করা হয় গত ৬ ই জুন ও দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন করা হয় গত ১৮ ই জুন। 'রক্তিম' এর সদস্যরা ৬ ই জুন 'এবার লড়াই মানুষ বাঁচাই' এর প্রথম পর্বে পৌঁছে গিয়েছিল সাগরদ্বীপ এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম সুমতিনগরে, ইয়াশ ঝড়ে বিধ্বস্ত কিছু মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। এরপর গতকাল ১৮ ই জুন ২০২১ শুক্রবার অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে তারা পৌঁছে গিয়েছিল গোসাবা অঞ্চলের একটি গ্রাম, হরিমন্দির পাড়াতে।
প্রথম কর্ম কাণ্ডে তাদের এই উদ্যোগে 'অকবির কবিত্ব', 'মনমর্জিয়া', 'নিরুত্তর', 'নিস্তব্ধতা', 'আগামী', 'ব্যাকরণ', 'আনমনার পটচিত্র', 'রেড হুড কলকাতা' ও 'হিজিবিজি' প্রভৃতি ফেসবুক পেজগুলি আর্থিক সহয়তা প্রদান করেছে এবং দ্বিতীয় কর্মকাণ্ডে 'বেরঙিন কলম' ছাড়াও সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে 'গোলাপজামুন' পরিচালিত 'প্লুমেরিয়া' স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা, 'আঁকিয়েদের আড্ডা' শিল্পের গ্রুপ, 'আগামী কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন', 'দ্য আনডিসাইডেড', 'নিরুত্তর', 'অকবির কবিত্ব' এবং 'নিবভাঙ্গা কলম' ফেসবুক পেজ।
'রক্তিম' স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা অনুর্দ্ধ ২৫। প্রথম ক্ষেত্রে যে দুই মানুষকে তারা সর্বদা পাশে পেয়েছে তারা হলেন দীপ দাস ও সুমিত চ্যাটার্জী এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্য ভাবে পাশে পেয়েছি দীপ দাস, ভাস্বতী মন্ডল, দেবাঞ্জন বসাক ও অরুনাংশু দে কে।
'রক্তিম' ২ টি প্রকল্প মিলিয়ে মোট ৩৫০ টি পরিবারকে সাহায্য করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথম ক্ষেত্রে তারা যেসব ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেছে তা হলো চাল, ডাল, আলু, সোয়াবিন, তেল, নুন, মুড়ি ছাতু, বিস্কুট, দুধ গুঁড়ো প্যাকেট, সাবান, মাস্ক ও স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং দ্বিতীয় প্রকল্পে মোট ১৫০ টি পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার, মশার ধূপ, ডিটারজেন্ট, সাবান, স্যাভলন, ইলেকট্রল পাউডার, মুড়ি, ছাতু ও স্যানিটারি ন্যাপকিন।
'রক্তিম' এর সদস্যরা লিটারেসি প্যারাডাইসকে বলেন, "আমরা জানি এইটুকু জিনিস দিয়ে তাদের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাও আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি তাদের দৈনিক খাবার দিয়ে কিছুটা সাহায্য করা। জায়গাটি খুবই প্রত্যন্ত দিকে, ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা সব সময় থেকে যায়, তাই আমরা এই আশা রাখবো যে ওই প্রান্তীয় মানুষগুলি যেন ভালো থাকে। আমরা সকলেই খুবই অভিভূত সকলের উপস্থিতি ও সাহায্য পেয়ে। প্রত্যেককে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতে 'রক্তিম' পৌঁছে যাবে আরও সংকটাপন্ন মানুষের দোরগোড়ায়।"
প্রতিবেদন- নিজস্ব সংবাদদাতা
Post a Comment