Header Ads

সুপ্রীম কোর্টের কালো ব্রোঞ্জের মা ও শিশু স্থাপত্যের নির্মাণ করেন খড়গপুরের চিন্তামণি কর


১৯৮০ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী সুপ্রীম কোর্টের একেবারে সামনে কালো ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মিত একটি অসাধারণ মা ও শিশুর মূর্তি বসানো হয় যা নির্মাণ করেছিলেন খড়গপুরের চিন্তামণি কর। এই মূর্তির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে এক মা তার কোলে থাকা প্রজাতান্ত্রিক ভারতবর্ষকে আগলে আছে। শিশুর হাতে একটি আইনের বই আছে এবং সেই বইতে একটি দাড়ি-পাল্লা রয়েছে যা সবার জন্য সমান আইনকে বোঝায়।


অসাধারণ এই মূর্তিটির উচ্চতা ২১০ সেমি বা ৬ ফুট ১১ ইঞ্চ। বিখ্যাত বাঙালি ভাস্কর চিন্তামণি কর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই ভাস্কর্যটির নির্মাণ করেন। চিন্তামণি কর জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল খড়গপুরে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট থেকে উনি শিক্ষালাভ করেন। গিরধারী মহাপাত্র ও ভিক্টর জিওভানেল্লির কাছ থেকে উনি ভাস্কর্য শেখেন। ১৯৩৮ সালে তিনি পাড়ি দেন প্যারিস। প্যারিসের বিখ্যাত অ্যাকাডেমি ডি লা গ্র্যান্ডি চৌমিরি তে তিনি ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেন।

১৯৪৬ এ তিনি লন্ডনে রয়্যাল সোসাইটি অফ ব্রিটিশ স্কাল্পচারের সদস্য হন। গ্রেট ব্রিটেনের হয়ে ১৯৪৮ অলিম্পিকে উনি শিল্প বিভাগে রূপো জেতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসেন এবং পশ্চিমবঙ্গের গর্ভনমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্টের অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি বিভিন্ন রকম ধাতু, কাঠ, টেরাকোটা এবং পাথর দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণে পারদর্শী ছিলেন।

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি  ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত হন। ২০০৫ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার নরেন্দ্রপুরে ওনাকে উৎসর্গ করে গড়ে তোলা হয় 'চিন্তামণি কর অভয়ারণ্য'। 

২০০৫ সালে অর্থাৎ ওনার মৃত্যুর ঠিক কিছুদিন আগে চিন্তামণি কর 'ভাস্কর ভবন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ম্যান্টেন্যান্স ট্রাস্ট' তৈরি করে যান, যা পরে একটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। এই ট্রাস্ট এখনও গরীব ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য করে চলেছে। 

২০০৫ সালের ৩ রা অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেন। অনেকের কাছে চিন্তামণি কর নামটি অচেনা। অথচ তিনি ছিলেন সমগ্র বাংলা ও বাঙালির গর্ব। 

প্রতিবেদন- অমিত দে

No comments