Header Ads

বিভূতিভূষণ সরকার যিনি স্বাধীনতার বিপ্লব থেকে শিল্প বিপ্লব করেছিলেন


স্বাধীনতার বিপ্লব থেকে শিল্প বিপ্লব। এক বীর বঙ্গসন্তানের অজানা গল্প। যিনি ছাত্রজীবনে নিজেকে উজাড়  করে দিয়েছিলেন সশস্ত্র  বিপ্লবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছে। তাঁর হাত ধরেই বাঙালির ব্যবসা এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। বাঙালিকে ব্যবসা শেখানোর গুরুদায়িত্বও তিনি পালন করেছিলেন। এই মহান বাঙালি ব্যক্তিটি হলেন বিভূতিভূষণ সরকার। 


সালটা ১৯৩০। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে যুবসমাজ। ফাঁসির মঞ্চে এক এক করে জীবনদান করছে বিপ্লবীরা। চট্টগ্রামে তখন মাস্টারদার নেতৃত্বে সশস্ত্র বিপ্লব নাড়িয়ে দিচ্ছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের ভীত। বিপ্লবের দগদগে আগুনে আকাশ-বাতাস উত্তাল হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের বাতাসে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে গুলির আওয়াজ ও নাক পাতলে গন্ধ আসছে বারুদের। 

১৯৩০ সালে মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয়। সেই বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভূতিভূষণ সরকারও হয়ে উঠলেন একজন আদর্শ বিপ্লবী। তখন তাঁর মাত্র ১৩ বছর বয়স। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের কারণে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হলেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বার্মার আকিয়াব প্রদেশের থারওয়াডি জেলে বন্দী হন৷  

বিভূতিভূষণ সরকার  কারাগারে যখন বন্দী ছিলেন তখন তাঁর ম্যাট্রিক পরীক্ষা আসন্ন। তিনি জেলে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ কারাগারে তাঁকে পড়াশোনার সুযোগ দানে অস্বীকার করলে তিনি প্রতিবাদ করেন৷ যদিও ম্যাট্রিক পরীক্ষার মাস দুয়েক আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। তাঁর হাতে সময় কম। তিনি কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন? যাইহোক তিনি অল্প সময়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেন। আর পরীক্ষা দিয়েই তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। 

ম্যাট্রিক্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি আইএসসি পরীক্ষা দেন। যে পরীক্ষাতে তিনি দ্বিতীয় হন৷ তারপর বিএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং এমএসসিতে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন৷ এরপর তিনি আইসিএস পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যোগ থাকার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁর পরীক্ষা দেওয়া বাতিল করে দেয়। 

ব্রিটিশদের হাজার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি পারলেন না আইসিএস পরীক্ষা দিতে৷ অতঃপর বিভূতিভূষণ সরকার  শিল্প-উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। শুরু হলো তাঁর জীবনের আরেক সোনালী অধ্যায়। ইতিমধ্যে তিনি চট্টগ্রাম থেকে তাঁর আবাস উঠিয়ে কলকাতায় স্থিত হয়েছেন। সেখানেই তিনি বিয়ে করলেন একজন বিখ্যাত ডাক্তারের কন্যাকে। ১৯৪৩ সালে তিনি ৬ টাকার সামান্য পুঁজি নিয়ে যাদবপুরে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর স্ত্রীর নামানুসারে এই শিল্পের তিনি নামকরণ করেন 'কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস'। তাঁর মেধা ও দক্ষতায় কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস অচিরে একটি সর্ববৃহৎ গ্লাস কনটেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে পরিণত হয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে এটি ভারতের অন্যতম নেতৃস্থানীয় কাচশিল্পের মর্যাদা লাভ করে।  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments