Header Ads

নয়টি বসন্ত অতিক্রম করে ফেললো পরিচালক সৃজিতের হেমলক সোসাইটি


২০১২ সালের আজকের দিনে  মুক্তি পেয়েছিল পরিচালক সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'হেমলক সোসাইটি'। দেখতে দেখতে ৯ টা বসন্ত অতিক্রম করে ফেললো এই ছবি৷ 'হেমলক সোসাইটি' সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত তৃতীয় ছবি৷ তার আগে তিনি 'অটোগ্রাফ' ও 'বাইশে শ্রাবণ' এর মাধ্যমে দর্শকদের বাংলা ছবির দিকে নজর ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ছবি দুটো অল্প সময়েই তুমুল সাফল্য অর্জন করে ফেলে। বাংলা ছবি দেখতে আগে যে দর্শকেরা কোনোদিন থিয়েটারের ছায়াও মাড়াতেন না তারাও হলমুখী হতে শুরু করলেন তারই হাত ধরেই। 


সত্যি কথা বলতে বাংলাতে সেই সময় দুষ্টু-মিষ্টি প্রেমের ছবি, সাংসারিক টানাপোড়েন ও হিরো-হিরোইন-ভিলেন এরকম কনসেপ্টগুলো ভেঙে ফেলার খুব দরকার ছিল৷ 'হেমলক সোসাইটি'র মতো ছবি নতুন পথ দেখালো বাংলা ছবিকে৷ যে ছবির ভাবনা সম্পূর্ণ নতুন, এমন ভাবনা নিয়ে বাংলা এমনকি ভারতের অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রিতেও ছবি তৈরি হয়নি। 'হেমলক সোসাইটি' মুক্তির পর ছবিটি এতোটাই সফল হয়েছিল যে ২০১৫ সালে 'হেমলক সোসাইটি' ছবি থেকে রিমেক করে মারাঠিতে তৈরি হলো 'ওয়েলকাম জিন্দেগী'। 

'হেমলক সোসাইটি' একটি ডার্ক কমেডি ফিল্ম। তবে ছবিটি একটি সামাজিক সচেতনতার বার্তা বহন করে। হেমলক সোসাইটি নামের এক সোসাইটি যারা আত্মহত্যা বন্ধ করতে আত্মহত্যা পথযাত্রী মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়। আত্মহত্যার মুখ থেকে লোকেদের ফিরিয়ে এনে নতুন জীবনদান করা এই সোসাইটির লক্ষ্য। সোসাইটি তার লক্ষ্যে সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। ছবির মুখ্য চরিত্র আনন্দ কর ও মেঘনা। আনন্দ কর যার হাতেই তৈরি এই হেমলক সোসাইটি। আর মেঘনা যে জীবনে চলার পথে তার মায়ের অনুপস্থিতি অনুভব করে প্রতি মুহূর্তে। তার প্রিয় গায়ক সিদ্ধার্থ রায় (শিলাজিৎ মজুমদার), যার গানগুলো সে গুনগুন করে গায়৷ সে তার বাবার জীবনে নতুন সৎ মা-র আবির্ভাবকে মন থেকে মানতে পারছে না৷ তার বাগদত্তা শান্তনুর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় বেচারি বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে যায়৷ অবশেষে মেঘনা আত্মহত্যা করার জন্য ওষুধ দোকানে ঘুমের বড়ি কিনতে গেলে দেখা হয় আনন্দ করের সাথে৷  আনন্দ মেঘনাকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচিয়ে হেমলক সোসাইটিতে নিয়ে যায়। তারপর বাকীটা তো আপনারা হলে, টিভিতে কিংবা অ্যাপে যেখানেই হোক বারবার দেখেছেন। 

ছবির চরিত্র নির্ধারণ, গল্পের জালবুনন, দৃশ্য তৈরি সবই পরিচালক নিখুঁত ভাবে বানানোর চেষ্টা করেছেন৷ ছবির লুককে অনেকটা আন্তর্জাতিক লুক দেবারও প্রচণ্ড চেষ্টা করেছেন তিনি৷ অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন ও গান নির্বাচনও পরিচালক যথাযথভাবে করেছেন এই ছবিতে। অনুপম রায়ের সঙ্গীত পরিচালনা ও কলাকুশলীদের অভিনয় ছবির গভীরতা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। 

অনুপম রায়ের কণ্ঠে 'এখন অনেক রাত', রূপম ইসলামের কণ্ঠে 'ফিরিয়ে দেওয়ার গান', শিলাজিৎ এর কণ্ঠে 'জল ফড়িং', লোপামুদ্রার কণ্ঠে 'আমার মতে' এবং শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে 'এই তো আমি চাই', ছবির পাশাপাশি এই গানগুলোও যেন এক একটা মাস্টারপিস। ৯ টা বছর পরও লোকেদের গাড়িতে বা বাড়িতেও গানগুলো বাজতে থাকে৷ 

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক, দীপঙ্কর দে, শিলাজিৎ মজুমদার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, সুদেষ্ণা রায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও অন্যান্যরা সকলেই দুর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন। সমালোচকদের কাছেও বহুল চর্চিত ও প্রশংসিত হয় 'হেমলক সোসাইটি।' ছবিটি বক্স অফিসেও দারুণভাবে সফল হয়। বহু পুরস্কারও জিতে নেয় ছবিটি৷ 

৯ টি বসন্ত কেটে যাওয়ার পরও 'হেমলক সোসাইটি' ছবিটি নিয়ম করে অনেকেই দেখেন এখনও। 'মরবে মরো ছড়িয়ো না' ছবির এই ডায়ালগগুলোও হৃদয়ে গেঁথে আছে আপামর বাঙালি দর্শকদের। 'হেমলক সোসাইটি' মাস্টারপিস হিসেবেই বহুদিন থেকে যাবে৷ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments