Header Ads

কুস্তি চর্চাতেও পারদর্শী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কলকাতায় জোড়াসাঁকোর প্রবল প্রতাপশালী জমিদার ও ব্রাহ্মধর্ম-প্রচারক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চৌদ্দ ছেলে-মেয়ের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  ছোট থেকেই তাঁকে প্রথাগত বিদ্যার ধার ধারতে হয়নি। স্কুল-পালানো রবীন্দ্রনাথের নানা বিষয়ে গৃহ-শিক্ষার কোনো অভাব হয়নি। তিনি বিজ্ঞান-শিক্ষা অর্জন করেছেন, চর্চা করেছেন পৃথিবীর নানান ভাষা, ওস্তাদের কাছে প্রাচ্য সঙ্গীত আর পাশ্চাত্য সঙ্গীত-শিক্ষকের কাছে শিখেছেন ক্লাসিকাল মিউজিক, নিজের বাবার কাছে বেদ-উপনিষদ পড়ে তা হৃদয়ঙ্গম ও ব্যাখ্যা করতে শিখেছেন, অন্য দিকে পড়েছেন পৃথিবীর ইতিহাস, সাহিত্য।  


রবীন্দ্রনাথের চোখে ঘুম ছিল খুবই কম। অনেক রাতে ঘুমোতে যেতেন তিনি। আবার উঠে পড়তেন ভোর ভোর। রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁর বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণাতেই জুডো, জিমনাস্টিক এবং কুস্তি চর্চা করতেন। 

সেজোদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে হিরা সিং নামের এক কানা পালোয়ানের কাছে কুস্তি শেখা শুরু হল কিশোর রবির।  সকাল হতে না হতেই কুস্তির প্যাঁচ কষে বেশ খানিকটা মাটি মাখামাখি করে শেষকালে একটা জামা গায়ে জড়িয়ে চলে যেতেন ঘরে। সকালবেলায় ছেলের ওই মাটি-মাখার ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগেনি মা সারদা দেবীর। তাঁর ভয় ছিল ছেলের গায়ের রং মেটে হয়ে যাবে। তাই তিনি ছুটির দিনে বাদামবাটা, সর, কমলালেবুর খোসা আরো কত কী দিয়ে ভেতরের বারান্দায় বা ছাদে বসিয়ে করাতেন দলাই মলাই।  

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'জীবনস্মৃতি'-তে লিখেছেন, "ভোরে অন্ধকার থাকিতে উঠিয়া লংটি পরিয়া প্রথমেই এক কানা পালোয়ানের সঙ্গে কুস্তি করিতে হইত।" 

কুস্তি ও জিমন্যাস্টিকসের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে লাঠিখেলাও শিখতে হয়েছে। শেখানোর জন্য যাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল, সে জাতে ছিল মুচি। খেলা শুরুর আগে নিয়ম হলো- গুরুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবে শিষ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণ আর গুরু জাতে শূদ্র। অতএব কে কাকে প্রণাম করবে, এ এক সমস্যা দেখা দিল। দেবেন্দ্রনাথ সিদ্ধান্ত দিলেন, শিষ্য, রবীন্দ্রনাথই প্রণাম করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো জাতভেদ চলবে না। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুস্তিতে প্রচণ্ড পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বহু জায়গাতে কুস্তির আসরেও তিনি অংশ নিতে থাকেন। ১৮৬৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রবীন্দ্রনাথ জিমনাস্টিক শেখা শুরু করেন। যা শেখার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল বিকেলবেলা। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "সাড়ে চারটার পর ফিরে আসি ইস্কুল থেকে। জিমনাস্টিকের মাস্টার এসেছেন। কাঠের ডান্ডার উপর ঘন্টাখানেক ধরে শরীরটাকে উলটপালট করি। তিনি যেতে না যেতে এসে পড়েন ছবি-আঁকার মাস্টার।"

প্রতিবেদন- সুমিত দে



No comments