Header Ads

বাংলা মিডিয়াম থেকেই ইংরেজি নন-ফিকশন বেস্টসেলার লেখক পীযূষ রঞ্জন ঘোষ



পীযূষ রঞ্জন ঘোষ যাকে খুব কম বয়স থেকেই বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ার জন্য সমাজ তাঁকে খারাপ চোখে দেখত। "ছোট শহর থেকে জীবনে বড় হওয়া যায়না", "তোর দ্বারা জীবনে কিছুই হবেনা" -- এসব কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে বছরের পর বছর ধরে। আর আজ সেই পীযূষ রঞ্জন ঘোষ এক বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদে কাজ করেন। এর পাশাপাশি তিনি আজকে একজন সফল লেখক। লোকে তাঁকে বেস্টসেলার লেখক বলেই চেনেন। এছাড়াও তিনি একজন কর্পোরেট স্পিকার। 


পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ আর নেশায় লেখক পীযূষ রঞ্জন ঘোষের জন্মানো ও বেড়ে ওঠা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরে। তাঁর বাবা রেলের একজন সরকারি চাকুরিজীবী। তিনি পড়াশোনা করেন বাংলা মিডিয়াম স্কুল থেকে। বাংলা মিডিয়ামে পড়ার সময় লোকে তাঁকে বলতেন "বাংলা মিডিয়ামে পড়ে খুব বেশিদূর যাওয়া যায় না৷"

তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা লিখতে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ক্লাস টু থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন ম্যাগাজিনে কবিতা লিখতে থাকেন। তিনি ক্লাস ফোরে পড়ার সময় তাঁর ক্লাসের দিদিমণিরা বলতেন "তোমাকে সমাজে সফল হতে হলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। নাহলে তুমি সেভাবে বড় হতে পারবে না।" দিদিমণিদের কথামতো তিনি কবিতা লেখা ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন কারণ তাঁকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে যে।  

"বাংলা মিডিয়ামে পড়ে নাকি কিছুই হয়না" একথা শুনে তাঁর বাবা তাঁকে এক জ্যোতিষীর কাছে হাত দেখাতে নিয়ে যান"। সেই জ্যোতিষী তাঁর হাত দেখে বলেন পীযূষবাবুর দ্বারা নাকি জয়েন্ট এন্ট্রান্স হবে না। যা শুনে তিনি প্রবলভাবে ঐ জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছুঁড়ে দেন। এরপর থেকেই একটা গভীর আত্মবিশ্বাস ভর করে বসলো তাঁর ওপর। নিজের আত্মবিশ্বাস ও জেদকে কাজ লাগিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল উভয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ১০০ এর মধ্যে রেঙ্ক করলেন তিনি৷ 

যাদবপুরে এসে ইন্ডাক্সনের সময় তিনি ইংরেজি বলতে গিয়ে আটকে যান। তখন তাঁর মনে হয়েছিল হয়তো কলকাতার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে পড়লে তিনি একটু স্মার্ট হতে পারতেন। পরবর্তীকালে চাকরির ইন্টারভিউতে ইংরেজি বলতে না পারার জন্য তাঁর বাংলাতে ইন্টারভিউ হয়। 

তিনি চাকরি করার সময় কিছুটা আর্থিক ঋণে জড়িত হয়ে পড়েন। তাঁর পরিবারের কিছু সমস্যার জন্য তিনি ঋণে জর্জরিত হন৷ ফলে 'সঞ্চয়িতা' কিনতে গেলেও হোঁচট খেতে হয় তাঁকে। এই বইটি কেনার জন্য বছর তিনেক অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। ধীরে ধীরে তিনি কিছুটা নিজের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করলেন। আমেরিকাতে এক বহুজাতিক সংস্থাতে কাজের সুযোগ পেলেন। তাতে মোটা মাইনে, গাড়ি-বাড়ি বানানো ও বিদেশে সুখে স্যাটেলড হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখানে তিনি বেশিদিন টিকতে পারলেন না। একসময় তাঁর মনে হয়েছিল বিদেশে স্যাটেলড হয়ে গাড়ি-বাড়ি-সম্পত্তি বানানোই জীবনের সব নয়। তাঁকে  শিকড়ের সাথে, বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে হলে থাকতে হবে বাংলাতে।

শিকড়ের টানে আমেরিকাতে কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এলেন তিনি। নতুন শহর নিউটাউনে এসে তিনি ১২ জন নিউটাউনবাসীদের নিয়ে শুরু করলেন নিউটাউন বইমেলা। যে বইমেলাতে বিশেষ সহযোগিতা করেন হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন ও তাঁর স্ত্রী হিডকোর সভাপতি উর্মিলা সেন। তখন সাতটা স্টল থেকে শুরু করে এই বইমেলা আজকে রাজ্যের দ্বিতীয় বইমেলাতে পরিণত হয়েছে। তারপর থেকেই শুরু হলো তাঁর লেখক জীবনের শুরু। ক্রমেই তিনি হয়ে উঠলেন একজন ইংরেজি নন-ফিকশন বেস্টসেলার লেখক। 

এককালে লোকে যাকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ার জন্য কটুক্তি করতো সেই ছেলেটি আজকে  ইংরেজির একজন নন-ফিকশন বেস্টসেলার লেখক। শুধু তাই নয়, তিনি কর্পোরেট স্পিকার হিসেবে নানান ইন্টারপ্রিনারদের বিভিন্ন অ্যাডভাইস দিয়ে থাকেন। তিনি বাংলা টেলিভিশনে মাইন্ড পাওয়ার নামে প্রথম সাব-কনশাস মাইন্ড শো শুরু করেন। তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি 'মাইন্ডস্ট্রোলোজি'র প্রবক্তা, যা লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীদের বিজ্ঞান মানসিকতায় অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। তিনিই হলেন বাংলার প্রথম মাইন্ডস্ট্রোলজার। 

সুতরাং, কোনো মানুষকে অযথা নিম্ন চোখে দেখার কোনো মানে নেই। বাংলা মিডিয়ামে পড়েও অনেক কিছু করা যায়। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আর বাংলা মিডিয়াম সেই মাতৃভাষার মাধ্যম। কাজেই বাঙালিকে নিজের ভাষার মাধ্যমকে অপমান করার মানসিকতা বর্জন করতে হবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments