Header Ads

বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদের চরে উদ্ধার প্রাক-পাল যুগের দুষ্প্রাপ্য বিষ্ণু মূর্তি


গত ৬ ই এপ্রিল লালপাহাড়ির দেশ অর্থাৎ বাঁকুড়া জেলাতে ঘটে গেল এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের সানতোড় গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তর্গত সোনাপোতাল গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর চরে ৬ ই এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটায় দ্বারকেশ্বর নদে দেখা মিলল বিষ্ণুর বামন অবতারের অতি প্রাচীন প্রস্তর মূর্তি। এই প্রাচীন মূর্তিটিতে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুদেব পদ্মের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চতুর্ভুজের এক হস্তে পদ্ম এবং আরেক হস্তে রয়েছে শঙ্খ। এছাড়াও মূর্তিটিকে ঘিরে তার পরিমণ্ডলে আরো চারজনকে পদ্মের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।  


৬ ই এপ্রিল সকালে দ্বারকেশ্বর  নদ থেকে বালি তোলার সময় এই প্রস্তর মূর্তিটি উদ্ধার হয়। যা অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার হাজার বছরেরও বেশী প্রাচীন বলে মূর্তির গঠন শৈলী থেকে অনুমান করা যায়। 

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন এই পাথরের মূর্তি উচ্চতায় প্রায় চার থেকে সাড়ে চার ফুট এবং চওড়াও প্রায় আড়াই ফুট। এবং ওজনও চার থেকে পাঁচ কুইন্টাল বলে তাদের ধারণা। কারণ পনেরো-ষোলো  জন লোক লাগিয়েও মূর্তিটি তুলতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়। গ্রামবাসীরা দাবী জানাচ্ছেন যে গ্রামেই মন্দিরে স্থান পাক এই বিষ্ণুর বামন অবতার।  

বিশেষজ্ঞদের মতে মূর্তিটি আনুমানিক অষ্টম শতকের। মূর্তি উদ্ধারের কথা জানাজানি হতেই গ্রামবাসীরা মূর্তিটি দেখার জন্য দ্বারকেশ্বরের চরে ভিড় জমান। যা দেখে সকলেই প্রায় হতবাক হয়ে যান। পাথরের তৈরি এমন ঐতিহাসিক নিদর্শনকে নিজের চোখের সামনে উপভোগ করতে কার না ভালো। মূর্তি উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ওন্দা থানার পুলিশও আসেন৷ মূর্তিটি উদ্ধারের পর মূর্তিটি আপাতত থানাতেই সযত্নে রাখা হয়েছে। 

এর আগেও বাঁকুড়ার অনেক জায়গাতেই বামন বিষ্ণু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে কিন্তু সদ্য প্রাপ্ত মূর্তিটির সঙ্গে পূর্বে উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলির রূপের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। আগের ৫ টি মূর্তির পদ্ম পাদপীঠের নীচে যে রকম লাঞ্ছনা চিহ্ন আছে এটিতে তা নেই। এখানে শ্রীবৎস প্রতীকটিকে শুধু খোদিত এবং এখানে বিষ্ণুর হাতে গদা নেই। নতুন মূর্তিটির মুখের গঠনেও অভিনবত্ব আছে। চৌকান আকৃতির মুখমন্ডল এবং অর্ধনিমিলিত চোখে দেবতা তাকিয়ে আছেন।  

মূর্তি উদ্ধার প্রসঙ্গে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, "এটি প্রাক-পাল যুগের একটি অনবদ্য মূর্তি। এই ধরণের বামন বিষ্ণু মূর্তি খুব বেশি দেখা যায় না। গুপ্ত যুগের মূর্তিগুলিতে যে ধরণের অলঙ্করণের কাজ দেখা যায় এই মূর্তিটিতেও তার খানিক প্রভাব রয়েছে। গলায় একাবলী থাকা এমন মূর্তি খুবই দুষ্প্রাপ্য।" জিওলজিকাল সার্ফে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিরেক্টর শম্ভু চক্রবর্তী বলেন, "মূর্তিটি টাল্ক ক্লোরাইট সিস্ট পাথরের তৈরি বলেই মনে হচ্ছে।"

সোনাপোতাল গ্রামে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন সূর্য মন্দির। সুর্য মন্দির র‍য়েছে।আনুমানিক খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় প্রাপ্ত ইটের দেউলটি বাঁকুড়ার মন্দির স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। মন্দির সংস্করণের সময়ে বেশ কিছু অংশ সংযোজন করা হলেও মূল অংশে প্রাচীন অলংকৃত ইটের উপর পঙ্খের কারুকার্য অক্ষুন্ন রয়েছে। মন্দিরের উপরের একটি অংশে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি বসানো রয়েছে। দোল পূর্ণিমার সময় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। সারা বছর ধরেই স্থানীয় একজন বৃদ্ধা মহিলা নিত্যদিন পুজো করেন। মন্দিরের আনুমানিক উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এই মন্দির লাগোয়া তপোবনে বিষ্ণু মূর্তি স্থাপিত হলে দুই গ্রামের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বাড়বে এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও লোকেদের আনাগোনা বাড়বে। ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments