কিংবদন্তি বাঙালি শুটিং কোচ দ্রোণাচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী আর নেই
দ্রোণাচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী যার নামটা আজ চাপা পড়ে গেছে। কিংবদন্তি বাঙালি শুটিং কোচ ছিলেন তিনি। নিজের হাতে পাঁচজন অলিম্পিয়ানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। অথচ তিনি নিজেকে নিয়ে বলতেন "আমি কিছুই করিনি। চেষ্টা করেছি শুধু। শুটারদের মধ্যে তাগিদ ছিল, তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে৷"
প্রতিদিন সকাল নটায় পানভেল শুটিং রেঞ্জে দিন শুরু হতো তাঁর৷ দুপুরে বাড়িতে আসতেন দুপুরের খাবার খেতে। তারপর বিকেল থেকে তিনি অলিম্পিয়ানদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করতেন৷ শুটাররা তাঁকে প্রচণ্ড স্নেহ ও সম্মান করতেন। যেটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি ছিল।
বিখ্যাত শুটার অঞ্জলি ভাগবত, গগন নারাং, সুমা শিরুর, দীপালি দেশপান্ডে এবং প্রবাসী বাঙালি অয়নিকা পাল এনারা ছিলেন তাঁর ছাত্র-ছাত্রী। অয়নিকা বাদে বাকী চার অলিম্পিয়ানই অর্জুন পুরস্কার জয়ী৷ অয়নিকা পাল হলেন তাঁর হাতে গড়া শেষ অলিম্পিয়ান। ২০১৭ সালে সঞ্জয় চক্রবর্তী শুটার কোচ হিসেবে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য 'দ্রোণাচার্য' পুরস্কারে সম্মানিত হন।
সঞ্জয় চক্রবর্তী বাঙালি হলেও তাঁর শৈশব থেকে বড়ো হয়ে ওঠা সবটাই উত্তরপ্রদেশে। সেখানেই তিনি পড়াশোনা করেছেন৷ তিনি পড়াশোনা শেষ করার পর মুম্বাইতে যোগ দেন নৌবাহিনীতে। বন্দুক চালনায় হাতেখড়ি সেখানেই। তখন তাঁর বয়স সবে তিরিশ বছর। যৌবনের সায়াহ্নে এসে প্রথমবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন তিনি৷ সেরা খেলোয়াড় হিসেবে অর্জন করেছেন ছত্রপতি শিবাজী পুরস্কার।
তিনি খেলোয়াড় হলেও প্রথম থেকেই কোচিং করানোর প্রতি প্রবল উৎসাহ ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ও কোচিং তার সত্যিকারের আহ্বান হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল। কোচিং এর প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি বিখ্যাত সব শুটিং খেলোয়াড়দের নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন৷ তিনি চেষ্টা করতেন নতুন নতুন তরুণ মুখদের তুলে আনতে। শারীরিক ভারসাম্য আর একাগ্রতাই যে শুটিংয়ে সাফল্যের চাবিকাঠি- সেই মন্ত্রবলেই তিনি দীক্ষিত করতেন শিক্ষার্থীদের।
তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে শুটিং শেখাতেন। ভারতে আধুনিক শুটিংয়ের স্বপ্ন তিনিই দেখিয়েছিলেন শুটারদের ইন্টারনেট যুগের আগে থেকেই৷ তাঁকে বেশিরভাগ ক্রীড়া জগতের মানুষই দ্রোণাচার্য হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় দ্রোণাচার্য স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি ভুগছিলেন দুরারোগ্য ক্যান্সারে। যদিও ক্রমশ তিনি সুস্থতার পথে এগোচ্ছিলেন। তবে কিছুদিন আগে তাঁর শরীরে দানা বাঁধে করোনা ভাইরাস৷ একদিকে ক্যান্সার ও অন্যদিকে করোনা এই দুইয়ের মিলিত জোরালো ধাক্কা তাঁর শরীর সামলাতে পারেনি। অবশেষে শনিবার রাত সোয়া দশটায় মুম্বাইতে প্রয়াত হলেন সঞ্জয় চক্রবর্তী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment