Header Ads

হকিতে ভারতের প্রথম অলিম্পিক সোনা জয় হয়েছিল বাঙালি হকি কোচের নেতৃত্বে


কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাঁদের প্রথম কোচ ছিলেন বঙ্গসন্তান পঙ্কজ গুপ্ত। মনে করা হয় ধ্যানচাঁদকে 'চাঁদ' উপাধি পঙ্কজ গুপ্তই দিয়েছিলেন। ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে পঙ্কজ গুপ্ত এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটান যার বর্ণনা ধ্যানচাঁদ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে করেছেন। তিনি বলেন, "ট্রায়াল ম্যাচে জার্মানির কাছে হারের পর আবার যখন আমরা ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হলাম তখন আমরা সকলেই সেই দিনের ফলাফলের ব্যাপারে চিন্তান্বিত ছিলাম। এর পূর্বে কখনোই আমরা নিজেদের যোগ্যতার ওপর অবিশ্বাস করিনি। এমন সময়ে হঠাৎই পঙ্কজ গুপ্ত কংগ্রেসের তেরঙা পতাকা বার করে আনলেন। আমরা সেই পতাকাকে ভক্তিভরে স্যালুট জানিয়ে, প্রার্থনা করলাম ও মার্চ করে মাঠে নেমে পড়লাম।" ধ্যানচাঁদ এই ম্যাচে মোট সাতটি গোল করেছিলেন৷  


তালতলা নিবাসী পঙ্কজ গুপ্তই হলেন বাংলা তথা ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রীড়া প্রশাসক। রুপোর পানে ডিবা হাতে নিয়ে তিনি দেশের সব খেলা সামলেছেন দীর্ঘদিন। সব সংস্থার গোড়াপত্তনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। 

ক্রিকেটের গডফাদার ডন ব্র্যাডম্যান তাঁকে ডাকতেন 'পিটার গুপ্ত' নামে। আর তিনি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানকে সম্বোধন করতেন শুধু 'ডন' বলে। ধ্যান সিংকে ধ্যানচাঁদ করে দেওয়ার কৃতিত্বও তাঁর। ধ্যানচাঁদ তাঁকে বলতেন, 'মিস্টার হকি'। অসামান্য সখ্যতা ছিল টেবিল টেনিসের পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ভিক্টর বার্নার সঙ্গে। 

১৯৩৬ সাল থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পঙ্কজ গুপ্ত বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে অফিসিয়াল পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ছিলেন। প্রতিষ্ঠার বছরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত ট্রেজারার ছিলেন এবং পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্টও ছিলেন। জাতীয় ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং ইডেন গার্ডেনে স্টেডিয়াম নির্মাণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৪৪ সালের নববর্ষ সম্মান তালিকায় ব্রিটিশ সরকার ক্রীড়া প্রশাসনে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্ডার অফ এমবিআর (এমবিই) সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করে।

তিনি সংস্কৃত কলেজে ইন্টারমিডিয়েট আর্টসে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবাসী কলেজ থেকে স্নাতক হন। স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিনিধি হয়ে তিনি ভারতীয় ফুটবল সংস্থার প্রশাসনে প্রবেশ করেছিলেন। ১৯২৪ সালে তিনি আইএফএ দলের ম্যানেজার ছিলেন। 

১৯৩৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসের সাথে যুক্ত হন পঙ্কজ গুপ্ত। তিনি ভারতীয় দলের ম্যানেজার বা কোচ ছিলেন এবং ইউরোপ এবং আমেরিকার অনেক স্পোর্টস ইভেন্টের দলে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। তিনি বিশ্ব ফুটবল কংগ্রেসে দু'বার ভারতীয় প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। তিনি রাশিয়ায় ভারতীয় ফুটবল দলের পরিচালক ছিলেন এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ১৯৪৬ এবং ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড এবং ১৯৪৭ ও ৪৮ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়া যান।  তিনি ভারতীয় হকি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইউরোপ এবং আমেরিকার অনেক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন।

অলিম্পিকে তাঁর প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই হকিতে দেশের প্রথম স্বর্ণপদক আসে। বলা চলে তাঁর হাত ধরেই ভারতের হকিতে স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। ভারতের স্বর্ণযুগ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়েই ভারতের হকি ফেডারেশনের ইতিহাস শুরু হয়৷ সেই সফরটি ছিল চূড়ান্ত সাফল্যের। সফরে ২১ টি ম্যাচের মধ্যে ভারত ১৮ টিতে জিতেছিল এবং ভারতের মোট ১৯২ টি গোলের মধ্যে ১০০ টি গোল করে কিংবদন্তি হকি তারকা ধ্যানচাঁদ সবার নজর কেড়েছিলেন। ১৯২৮ সালে আমস্টারডামে খেলা শুরু হয় এবং ভারতের জয়ের ধারা ১৯৩২ সালে লস অ্যাঞ্জেলস পেরিয়ে বার্লিন অবধি পৌঁছয়, যা অলিম্পিকে সোনা জয়ের হ্যাটট্রিকের মতো অসাধারণ কীর্তি স্থাপন করে। এই সবেরই মূলে যার অবদান উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন পঙ্কজ গুপ্ত। অথচ বাঙালির কাছে আজকে তিনি আত্মবিস্মৃত একটি নাম। তাঁকে নিয়ে সেভাবে দেশব্যাপী চর্চা হয়নি৷ যেটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। 

তথ্যসূত্র- সিলিপয়েন্ট, এই সময়।


No comments