Header Ads

সারা বিশ্বে লজিস্টিকস কোম্পানিদের টেক্কা দিচ্ছে বাঙালির কোম্পানি ডিটিডিসি ক্যুরিয়ার


বাঙালিরা ব্যবসা বিমুখ, অলস এ কথা দিন দিন রটানো হচ্ছে; বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে বাঙালির তৈরি বহু কোম্পানি এখন ব্যবসায় টেক্কা দিচ্ছে বিশ্বে। বাংলাদেশকে ধরলে তো বাঙালিদের বিলিওয়েনয়ার পর্যন্ত আছে। বাঙালিরা ব্যবসা পারেনা এটা একটি আন্তর্জাতিক মিথ্যা কথা। বলা ভালো বাঙালি পারেনা এমন কিছু নেই। 


ব্যবসা পারেনা বলতে তো ভারতের বাঙালিদের লোক বোঝাতে চায় এটাও সত্য নয়। মাশুল সমীকরণ নীতি, কোলকাতা বন্দরের সাথে যে কোনো ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ, বাঙালি কোম্পানি গুলোকে জোর করে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ, খনিজ সম্পদ বাদ দিলেও পাট, চা, লবণ, রেশম এগুলো রাজ্যের এক্তিয়ারে না থাকা, লাইসেন্স রাজ এত রকমের বঞ্চনা মনে হয়না কোনো জাতির ওপর ছিল। 

এককালে রেশম, চা, পাট, লবণ বাংলার বাণিজ্যকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছিল কিন্তু তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক্তিয়ারে না থাকায় বাংলাকে বিভিন্ন সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। বার্নপুরের ইস্কো এগুলো সবই ছিল বাঙালিদের প্রতিষ্ঠান কিন্তু মাশুল সমীকরণের মাধ্যমে পশ্চিম ভারতকে সুবিধা করে দিলে পূর্ব ভারতের কারখানা গুলো মার খেতে শুরু করে। পাট হয় কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু বাংলার নিজস্ব এক্তিয়ার না থাকায় তা পরিচালিত হয় ২০০০ কিমি দূরের দিল্লি থেকে সেখানে বাঙালিকে বার বার বঞ্চনা করা হয়। চা গাছ লাগাতে হলে কতগুলো লাগানো হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হতো দিল্লি কটা গাছ লাগানোর অনুমতি দেয় তার ওপর। তাছাড়া নেপাল বর্ডার খোলা থাকায় বাঙালি শ্রমিকরা কম টাকায় কাজ করতে বাধ্য হয় কারণ এখানে বাইরের থেকে আসা শ্রমিকরা শ্রমমূল্য কমিয়ে দেয়। 

বাংলা এবং তামিলনাড়ু বাদে আর কোনো রাজ্যের কোম্পানিগুলোকে জোর করে রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা হয়নি যার ফলে বাঙালির পুঁজি কমে যায়। তাছাড়া ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পরও হুগলি নদীর নাব্যতা কমে যায়, ড্রেজিং করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা দেখা যায় যার ফলে কলকাতা বন্দর দুর্বল হয়। কলকাতার বন্দরকে আরো দুর্বল করে মাশুল সমীকরণ নীতি।

এত রকম বঞ্চনার পরও বাংলার মাটি থেকেই তৈরি হয়েছে আইএফবি গ্রুপ, বন্ধন ব্যাঙ্ক, উজ্জীবন ব্যাঙ্ক, ডিটিডিসি ক্যুরিয়ার, সেনকো গোল্ড, মিয়ো আমোরে, পিসি চন্দ্র জুয়েলার্স, পিয়ারলেস গ্রুপ, সাহারা, কুকমি, খাদিমস, শ্রীলেদার্স, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ, কেপিসি, কেসি দাস, বিস্ক ফার্ম, পৈলান গ্রুপ, রুবি হসপিটাল, দিশা আই হসপিটাল, রাইস, জর্জ টেলিগ্রাফ, চ্যাটার্জী গ্রুপ, জিসিসি বায়োটেক, রেফারেল ল্যাব, এন.ডি.টি.ভি., জি.ডি. ফার্মাসিউটিক্যাল, ভার্চুয়াল ইনফোক্যাম, লুনা টায়ার্স প্রাইভেট লিমিটেড, রেড কাও ডায়েরি ইত্যাদি। অন্য দেশের বাঙালি ধরলে রেডিও এশিয়া, সানফ্রান্সিসকোর বাঙালির আইওটি কোম্পানি সামসারা সফটওয়ার, বোস কর্পোরেশন, প্রাণ, ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স, অগ্রণী ব্যাঙ্ক লিমিটেড, প্রথম আলো, রবি, গ্রামীণফোন, এশিয়ান টিভি, বেস্ট এয়ার, যমুনা ব্যাঙ্ক, জনতা ব্যাঙ্ক, ওয়ান ব্যাঙ্ক, বিশমিল্লা এয়ারলাইনস, রিজেন্ট এয়ারলাইনস, ডাচ বাংলা ব্যাঙ্ক ইত্যাদি ইত্যাদি।

যেসব বাঙালি কোম্পানিগুলি অত্যন্ত বিচক্ষণের সাথে ব্যবসা করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। ভারত বাদেও বিশ্বের ২৪০ টি আন্তর্জাতিক স্থানে পৌঁছে গেছে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। ২০১২ তেই প্রতি মাসে ১২ মিলিয়ন পার্সেল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার।

১৯৯০ সালে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার প্রতিষ্ঠা করেন শুভাসিষ চক্রবর্তী। বর্তমানে ভারত, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউ.কে., ইউ.এ.ই., চীন, হংকং, বাংলাদেশ সহ এশিয়ার সব দেশেই রয়েছে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ারের ব্যবসা। মোট ৩৫০০০ জন মানুষ কাজ করেন এই সংস্থায়। ২০১২ সালে প্রথম ভারতীয় ক্যুরিয়ার কোম্পানি হিসেবে ইউ.এ.ই.র কোম্পানি ইউরোস্টার এক্সপ্রেসকে কিনে নেয় ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। ২০১৩ সালে ব্যাঙ্গালোরের নিক্কস লজিস্টিক্সকেও কিনে নেয় ডি.টি.ডি.সি। মোট ১০৫০০ টি ফ্র্যানচাইজি রয়েছে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ারের। ২০১৩ সালে ইউরোপের জিওপোস্ট কোম্পানির সাথে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে ইউরোপেও পা রাখে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। ২০১৩ সালের প্রথম প্যান-ইন্ডিয়া ই-রিটেল কোম্পানি ডটজোটের প্রতিষ্ঠা করে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। ২০১৫ তে হায়দ্রাবাদ এবং দিল্লিতে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার অটোমেটেড লজিস্টিক হাব তৈরি করে। 

এছাড়াও ২০১৯ সালে ইউরোপীয় কোম্পানি অ্যাসেন্ডিয়ার সাথে টাই আপ করে ডি.টি.ডি.সি. ক্যুরিয়ার। এই কোম্পানির বর্তমান মালিক অভিষেক চক্রবর্তী তার কয়েকটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে পৃথিবীর ২০০ টা দেশের যে কোনো পিন কোড এখন ডি.টি.ডি.সি. এর আওতায়। এভাবে একের পর এক কর্মকান্ড করে চলেছে ডি.টি.ডি.সি ক্যুরিয়ার। দুর্ভাগ্যের বিষয় বাঙালি তবুও এই সব কাজ চোখে দেখতে পায়না।



 

1 comment:

  1. লেখাটা পড়ার পর , মনটা আনন্দে ভোরে গ্যালো , দিল্লির ,বাংলার প্রতি বঞ্চনা দানবীয় আগ্রাসনের নাম মাসুল সমীকরণ নীতি , এর পর লাইসেসে রাজ বাঙালি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রেখেছে , এক বিশেষ সম্প্রদায় কে ব্যাঙ্ক লোণে দরাজ হয়ে , বাঙালি কে ব্যাঙ্ক পুঁজি জোগানে নিরুৎসাহ করেছে , আর সু কৌশলে প্রচার হয়েছে বাঙালি অলস ,ব্যবসা পারবে না ,বরং ওরা কর্মচারী থাক, বাঙালিকে আটকে রাখা যাবে না

    ReplyDelete