Header Ads

বিশ্ব জলাভূমি দিবসে হাওড়ায় পরিবেশকর্মীদের পথাসভাতে উঠে এলো একগুচ্ছ আশঙ্কার কথা


২ রা ফেব্রুয়ারী ছিল বিশ্ব জলাভূমি দিবস। জলাভূমি সংক্রান্ত সম্মেলনে সাক্ষর গ্রহণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছর 'বিশ্ব জলাভূমি দিবস' পালিত হচ্ছে।  ১৯৭১ সালের ২ রা ফেব্রুয়ারী কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী ইরানের রামসার শহরে প্রথম জলাভূমি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী এ দিবস উদযাপিত হয়েছিল। শুরু থেকেই এই দিবসটিকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব জলাভূমি দিবস। 


গত মঙ্গলবার ২ রা ফেব্রুয়ারী এই বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে হাওড়ার রাজাপুর খাল সংলগ্ন জগৎবল্লভপুর থানার একাব্বরপুর ঘোষেদের কালীমন্দির ঘাটের ধারে রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক পথসভার। যেখানে উপস্থিত ছিল হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চসহ একাধিক পরিবেশ সংগঠন। 

হাওড়া ও কলকাতার বহু জলাশয় নগরায়নের চাপে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেআইনি ভাবে জলাভূমির ওপর বোল্ডার ফেলে অবাধে জমি চুরি হচ্ছে। বহু জলাশয় ভিটিয়ে কারখানা ও ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। কারণ জলাভূমির ওপর নির্ভর করেই দাঁড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে যে বাস্তুতন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য সেই কথা আমরা ভুলতে বসেছি। এও ভুলে যাচ্ছি যে পক্ষী, সরীসৃপ ও মৎস্য জাতীয় প্রাণীদের আবাসস্থল এই জলাভূমিই। অতিরিক্ত পরিমাণে জলাভূমি ধ্বংস হওয়ার দরুন ভেঙে পড়ছে তাদের জৈবিক চক্রও। 

বাঘরোল কিংবা ভোঁদড়ের মতো প্রাণীগুলো অবলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। এদের নিয়মিত বিচরণ জানান দিত মৎস্য, পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদের পরিমাণকে। এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে সেই সিস্টেমটা আস্তে আস্তে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যহ এক মানুষের সাথে অপর মানুষের সংঘাত বাড়ছে। আমরা বর্তমানে ষষ্ঠ গণ-অবলুপ্তির মধ্যে অবস্থান করছি। ফলে একটা বড় জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে পারে জলাভূমি ধ্বংসের কারণে। 

হাওড়ার নানা প্রান্তে এখন প্রায়ই বাঘরোল হত্যার খবর আসে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপ্রাণী হিসেবে ধরা হয় বাঘরোলকে। একে মেছো বাঘও বলা হয় যেহেতু বাঘরোলের প্রিয় খাদ্য মাছ। আজকে মানুষের বর্বরতার প্রচণ্ড শিকার বাঘরোলেরা। মানুষের বর্বরতা যেমন আছেই তেমনই আছে প্রবল অসচেতনতা। মানুষ নিজের স্বার্থ কায়েম করার জন্যও ধ্বংস করছে প্রকৃতির ফুসফুসগুলিকে। জলাভূমি ধ্বংসের জন্য প্রচুর মাছ, পোকামাকড়, অণুজীবের মৃত্যু ঘটছে। এর ফলে বাঘরোলের মতো প্রাণীগুলোর মধ্যে খাদ্য সংকট চরম আকারে দেখা দিচ্ছে। হাওড়ার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বাঘরোল হত্যা করে অনেক মানুষ তার মাংস খাচ্ছে। মানুষের মাত্রাতিরিক্ত এই লোভও বাঘরোলদের অস্তিত্বকে সংকটের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এ বছর জলাভূমি দিবসের কথা স্মরণ করে গোটা ফেব্রুয়ারী মাসটি পালিত হচ্ছে 'আন্তর্জাতিক বাঘরোল মাস' হিসেবে। রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটির ডাকা পথসভাতে এই সমস্ত বিষয়ই আলোচিত হলো। 

শুধু তাই নয়, এই পথসভাতে উঠে এলো রাজাপুর খাল, কানা দামোদর সহ বিভিন্ন জলাশয়, খাল-বিল, নদী-নালার দূষণের ভয়াবহতার কথা। উঠে এলো খাল সংলগ্ন কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য যেভাবে জলকে দূষিত করে দিচ্ছে তা নিয়ে আমাদের দিনের পর দিন চুপ থাকার পরিণামের কথা। উঠে এলো জলাভূমিকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবী, কৃষিজীবী মানুষদের চরম ক্ষতি ও স্বাস্থ্যহানির কথা।

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments