পুকুরে মুক্তো চাষ করে পশ্চিমবঙ্গকে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছেন অনিলজার গুহ
গৃহসজ্জার এক আকর্ষণীয় উপাদান হলো মুক্তো। কেবল গৃহসজ্জায় নয়, গহনা-অলঙ্কারকেও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে ব্যবহৃত হয় মুক্তো। জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের বেলাকোবার শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনারবাড়ির বাসিন্দা অনিলজার গুহ নিজের বাড়ির পুকুরে মুক্তো চাষ করে তাক লাগাচ্ছেন। অনিলজার গুহ পেশায় একজন বিটেক ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তাঁর ব্যবসায়ীক ভাবনা থেকে রংবেরঙের মুক্তো চাষ করছেন পুকুরে৷ কীভাবে পুকুরে মুক্তো চাষ করা যায় সেই নিয়ে তিনি চার বছর ধরে গবেষণা করেছেন। বাড়ির পুকুরে তিনি ২০,০০০ মুক্তো চাষ করেছেন। পুকুরে মুক্তো চাষের পদ্ধতির পোষাকি নাম ফ্রেস ওয়াটার পার্ল ফার্মিং।
এক একটি ঝিনুক থেকে মুক্তো তৈরি করতে ২ বছর সময় লাগে। পুকুরে মুক্তো চাষ করার পদ্ধতি বেশ পুরানো। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ঝিনুকের ভেতর নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করতে হয়। তারপর শুরু হয় মুক্তো তৈরির প্রক্রিয়া। পরিচর্যার ক্ষেত্রে যেটা মাথায় রাখতে হয় তা হলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাবার দেওয়া, জলের পরিমাণ ঠিক রাখা, জলের মধ্যে অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ও পিএইচের মাত্রা লক্ষ্য করা৷ প্রতিবছর ভিনদেশ থেকে এ দেশে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মুক্তো আমদানি করতে হয়। ভিনদেশের এই বিপুল বাজার ধরতে পারলে পশ্চিমবঙ্গের বুকে এক বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো যাবে। কো-অপারেটিভ বা সমবায়ের ভিত্তিতে মুক্তো চাষ করা যেতে পারে। শুধু মুক্তোই নয়, একইসঙ্গে কাতলা ও রুই মাছ চাষও সম্ভব।
অনিলজার গুহ মোট এক বিঘা জমির ওপর একটি ১২০ বাই ৯০ ফুটের পুকুরে কাজটির সূত্রপাত করেন। প্রথমে নানান জায়গা থেকে তিনি ঝিনুক সংগ্রহ করেন। এরপর ঝিনুকগুলোতে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করেন। তারপর প্রত্যহ এক হাজার থেকে দেড় হাজার সার্জারি করেন। সবশেষে সেগুলো অ্যান্টিবায়োটিকে আবদ্ধ রেখে প্লাস্টিক নেটের সাহায্যে দড়ি বেঁধে পুকুরে নামিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সব মিলিয়ে এ কাজে খরচ হয়েছে ১১ লক্ষ টাকা। তাঁর হিসেব অনুযায়ী ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ মুক্তো তৈরি হবে। একটি ঝিনুক থেকে দুটো মুক্তো পাওয়া যায়৷ এই হিসেব অনুযায়ী ৫০ শতাংশ ঝিনুক উৎপাদন হলে তিনি আয় করবেন ২০ লক্ষ টাকা। চলতি মাসের ২৭ তারিখ তিনি পুকুর থেকে মুক্তো তোলার কাজ আরম্ভ করতে চলেছেন।
তিনি নিজের গবেষণার পাশাপাশি হাতে-কলমে মুক্তো চাষ দেখার জন্য ছুটে গেছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বেশ কিছু গ্রামে। স্বচক্ষে সবকিছু দেখা ও অনুসন্ধানের পর তিনি বেলাকোবার গ্রামেই মুক্তো চাষ করছেন। মুক্তোগুলি বিক্রির জন্য তাঁর সাথে এক সংস্থার চুক্তি হয়েছে। চা শিল্পের পর তিনি বাংলার উত্তরের জেলাগুলোকে মুক্তো চাষে দিশা দেখাচ্ছেন। তিনি চাষে উৎসুক মানুষদের প্রতি সবরকম সহযোগিতারও আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের এক সম্ভাবনাময় শিল্প হতে পারে মুক্তো শিল্প কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment