মাঘের চতুর্থ দিনে কেঞ্জাকুড়া গ্রামে আয়োজিত হয় মুড়ি মেলা
মাঘের শীতে মুড়ি খাওয়া নিয়ে হয় আস্ত একটি মেলা। বাঁকুড়া সদর থানার অন্তর্গত কেঞ্জাকুড়া গ্রামে প্রতিবছর মাঘের ৪ তারিখ আয়োজিত হয় মুড়ি মেলার। ৩০ থেকে ৪০ টি গ্রামের মানুষ সপরিবারে মুড়ি নিয়ে পিকনিক করতে আসেন এখানে। দ্বারকেশ্বর নদের গর্ভে চুঁয়া কেটে জল বার করে তা দিয়ে মুড়ি খান। সঙ্গে সাধ্য অনুযায়ী যুক্ত হয় চপ, শিঙাড়া, লঙ্কা, শশা, মুলো, পেঁয়াজ, টমেটো, চানাচুর, নারকেল, জিলিপি, বেগুণি ও গুড় পিঠে।
এই মেলা চলে আসছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। এই মেলাটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এলাকার ভান্ডারবেড গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্ন্যাসী রায়কিশোর চট্টোপাধ্যায়। জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও তিনি তরুণ বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে তীর্থক্ষেত্রে চলে যান। যদিও জমিজমা নিয়ে অন্য ভাইদের সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছিল বলে তিনি ফিরে এসেছিলেন। তিনি বাড়িতে ফিরে এলে তাঁর ভাইদের সহায়তায় দ্বারকেশ্বর নদের তীরে বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়িই এখন সঞ্জীবনী মন্দির। প্রতি বছর মাঘ মাসের পয়লা তারিখ থেকে এখানে শুরু হয় সঞ্জীবনী উৎসব৷ যার শেষ দিন অর্থাৎ ৪ তারিখে আয়োজিত হয় মুড়ি মেলার।
মুড়ি মেলাতে আগে জনসমাগম মোটামুটি হলেও বর্তমান সময়ে এই মেলা জনসমুদ্রের রূপ নিচ্ছে। বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লক ও পুরুলিয়া জেলা থেকেও বহু মানুষ মেলাতে আসছেন। মুড়ি নিয়ে এরকম মেলা কেঞ্জাকুড়া ছাড়া বোধহয় বাংলার আর কোথাও হয়না।
দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে অবস্থিত সঞ্জীবনী আশ্রমে বহু প্রাচীনকাল থেকেই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে হরিনাম সংকীর্তন হয়ে আসছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে এই সংকীর্তন। এই এলাকাটি একদা জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল৷ দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ হরিনাম শুনতে আসতেন এখানে। হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণের ভয়ে রাতে তারা নিজেদের ঘরে ফিরতে পারতেন না। তাই সারারাত ধরে হরিনাম সংকীর্তণ শুনে পরের দিন সকালে দ্বারকেশ্বরের চুঁয়ার জলে মুড়ি ভিজিয়ে তা খেয়ে ঘরে ফিরতেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার কিছু পরিবর্তন এলেও হরিনাম সংকীর্তণ ও মুড়ি মেলা আজও অটুট। এদিন সকালে সকলে মিলে মুড়ি খাওয়ার পর দ্বারকেশ্বরের পাড়ে কেউ মেলা দেখেন, কেউ বিশ্রাম করেন এবং কেউ প্রিয়জনদের সাথে একান্তে সময় কাটান। অবশেষে দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত মানুষদের জন্য থাকে খিঁচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা। যাতে সকলে প্রসাদ গ্রহন করতে পারেন, তার জন্য প্রচুর লোক প্রসাদ তৈরির জন্য কাজ করেন সারারাত ধরে। এদিন বিকেল অবধি খিঁচুড়ি পরিবেশন চলতে থাকে৷
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment