Header Ads

বিস্তৃতির অতলগর্ভে তলিয়ে যাওয়া বাঙালি রেজিমেন্টের ইতিহাস


ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে বাঙালিদের। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রণনীতি প্রয়োগের জন্য দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেন। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়। বিনয়-বাদল-দীনেশের নেতৃত্বে রাইটার্সে অলিন্দ যুদ্ধ হয়। বাঘাযতীনের নেতৃত্বে বুড়িবালামের যুদ্ধ হয়। রানী ভবশঙ্করী বাংলার নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে শক্তিশালী করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাঙালি বিমান চালক ইন্দ্রলাল রায় টানা ১৭০ ঘন্টা বিমান চালিয়ে জার্মানির ৯ টি বিমান ধ্বংস করেছিলেন। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হন লেফটেন্যান্ট কণাদ ভট্টাচার্য। বর্তমানে স্কটল্যান্ডের সন্ত্রাসবাদী দমন শাখার প্রধান নীল বসু। বর্তমানে পূর্বাঞ্চলের বায়ুসেনা প্রধান অমিত দেব। বর্তমানে নৌবাহিনীর নার্সিং সার্ভিসের প্রধান সোনালি ঘোষাল। তারপরও যেটা অবাক করা বিষয় তা হলো বাঙালির নিজস্ব কোনো রেজিমেন্ট নেই। 


এককালে কিন্তু বাংলার নিজস্ব রেজিমেন্ট 'বাঙালি রেজিমেন্ট' ছিল। আজ সেই 'বাঙালি রেজিমেন্ট' এর ইতিহাস বিস্মৃতপ্রায়। কী ছিল সেই ইতিহাস? কেমন করে বাঙালি রেজিমেন্ট ধ্বংস হয়ে যায়? সেইসব বিষয়ে এবার একটু আলোচনা করা যাক। 

রেজিমেন্ট শব্দের বাংলা অর্থ হলো পল্টন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের  সময় বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে একটি রেজিমেন্ট তৈরি করা হয়, যার নাম 'বাঙালি পল্টন' বা 'বেঙ্গলি রেজিমেন্ট'। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনার পরে ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ এই সময়কালে বাঙালিদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয়েছিল। ১৯১৭ সালের ২৬ শে জুন প্রথম বাঙালি ব্যাটেলিয়ন 'বাঙালি ডাবল সংস্থা'র সূচনা হয়। যার নামকরণ করা হয় ৪৯ তম বেঙ্গল রেজিমেন্ট। যেখানে বাংলা থেকে দক্ষ সৈনিকদের মোটা বেতনে নিয়োগ করা হতো। এখানে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যুবকেরা যোগদান করতেন৷  

বাঙালি রেজিমেন্ট বা বাঙালি পল্টনই হলো বাঙালিদের প্রথম সামরিক সংগঠন। বাঙালি রেজিমেন্টে সৈন্যসংখ্যা ছিল ছয় হাজারেরও বেশি৷ এই রেজিমেন্টের সৈন্যদের মেসোপটোমিয়াতে যুদ্ধের জন্য করাচি সেনানিবাস থেকে প্রেরণ করা হতো। এই রেজিমেন্টে প্রায় ৪০ জন ভারতীয় কমিশন্ড অফিসার ছিলেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি রেজিমেন্টের সৈন্য হিসেবে করাচিতে প্রায় তিন বছর অবস্থান করেছিলেন৷ 

১৯১৭ সালের জুলাই মাসে মেসোপটেমিয়ান যুদ্ধে বাঙালি রেজিমেন্ট অংশ নেয়। মেসোপোটেমিয়া বা ইরাকের রাজধানী বাগদাদে প্রচুর বাঙালি সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকজন মারাও যান সেখানে। যে কারণে ৪৯ জন বাঙালি সৈন্যকে বাগদাদ থেকে আজিজিয়া ও আলকুট শহরে স্থানান্তরিত করা হয় চিকিৎসার জন্য। তাদের স্থানান্তরিত করার পরও স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয়নি। এরপর তাদের অক্টোবরের শেষের দিকে তনুমায় পাঠানো হয়। মেসোপোটেমিয়ান যুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের এপ্রিলে কুর্দিস্তানে একটি বিদ্রোহ হয়। মোট ২৩৫ জন বাঙালি এই বিদ্রোহ দমন করতে অংশ নেয়। তারা এই যুদ্ধের পর কলকাতায় ফিরে আসেন৷ এরপর ১৯২০ সালের ৩০ শে আগস্ট বাঙালি রেজিমেন্টকে ভেঙ্গে ফেলা হয়। 
 
আজ বাঙালি রেজিমেন্ট ধ্বংস হওয়ার পর একশো বছর কেটে গেছে। এই একশোটা বছরে বাঙালি হাজারো বীরত্ব প্রদর্শন করেছে। আজকে স্বাধীন ভারতে সব জাতির রেজিমেন্ট আছে অথচ বাঙালিকে কোনো রেজিমেন্ট দেওয়া হয়নি। বাঙালিকে অসামরিক করেই এদেশে রেখে দেওয়া হলো। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments