Header Ads

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কবি নাসের হোসেন


না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন স্বনামধন্য কবি নাসের হোসেন। গত একবছর ধরে ব্লাড ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে জীবনযুদ্ধে হার মানতে হলো তাঁকে। ৯ ই ডিসেম্বর বুধবার দুপুর ১২ টায় কলকাতার কোঠারী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। প্রখ্যাত এ কবির প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা সাহিত্যমহল। কবিতায় ছিল তাঁর অন্ত প্রাণ। কবিতার সাথেই চলতো তাঁর ওঠাবসা।  


প্রভাত চৌধুরী সম্পাদিত 'কবিতা পাক্ষিক' পত্রিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। অত্যন্ত ভদ্র, নির্বিবাদী নাসের হোসেন বয়োজ্যেষ্ঠ কবিদের যেমন স্নেহ পেয়েছেন তেমনি তরুণ ও তরুণতর কবিদের সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মিক যোগাযোগ। প্রতি সপ্তাহে কলকাতা থেকে বল্লমপুর যাতায়াত করতেন তিনি। সেখানকার কবি-লেখকদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন৷ শান্তস্বভাব, মিষ্ট ব্যবহার ছিল তাঁর চালিকা শক্তি। অথচ তাঁকে পৃথিবী ছেড়ে অসময়ে বিদায় নিতে হলো। 

১৯৫৮ সালের ২ রা জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন কবি নাসের হোসেন। সেখানেই অতিবাহিত হয় তাঁর পুরো শিক্ষাজীবন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় তিনি 'দ্য লাস্ট পেজ' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এর সঙ্গে সঙ্গেই চলতে থাকে তাঁর কবিত চর্চাও। শৈশব থেকেই তিনি পারিবারিকভাবে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড়ো হয়েছেন। বাবা ও মা ছিলেন শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি যার পরনাই শ্রদ্ধাশীল। বাবা ও মায়ের দেখানো নিভৃত সেই পথকেই আমৃত্যু অনুসরণ করে গেছেন নাসির হোসেন। বহরমপুরে তাঁর  শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হলেও কর্মসূত্রে তিনি কলকাতাবাসী হয়ে যান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানগরের বুকেই কাটিয়ে গেলেন তিনি। 

সত্তরের দশকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অপারেশন থিয়েটার'। এরপর মোট ২৫ টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন তিনি৷ আশির দশকের একজন সুপরিচিত কবি ছিলেন নাসির হোসেন। কবিতার পাশাপাশি বহু গদ্যও লিখে গেছেন তিনি। এই মানুষটির মুখে সারাক্ষণ হাসির ছাপ লেগে থাকতো। বইয়ের পাতাতেই তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় ডুবে থাকতেন। জেলায় জেলায় বিভিন্ন বইমেলাতে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। বইয়ের জগৎ নিয়ে যেন একটা আস্ত সংসার পেতে বসেছিলেন তিনি৷ 'কবিতা পাক্ষিক' পত্রিকার সাথে শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর দেখা মিলেছে। এ পত্রিকার প্রকৃত ভাবনা ও দর্শনকে নাসির হোসেন ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলার ঘরে ঘরে। 

সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। বিদেশি কবিতার সাথে ছিল তাঁর নাড়ির যোগ। তিনি কবিতা, চিত্রকলা, অনুবাদ সাহিত্য ও প্রবন্ধের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাতেন। একাধিক ছোটো-বড় পত্রিকা ও সংগঠন তাঁকে নানান সম্মানে ভূষিত করেছে। ৫ বছর তিনি দিল্লি সাহিত্য অ্যাকাডেমির কোর কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন। তিনি অবিবাহিত হয়েও সংসারী ছিলেন। পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-আত্মীয়-স্বজনের নানাবিধ সমস্যা তিনি একা হাতে সামলাতেন। বহরমপুরের অজস্র মানুষ তাঁর প্রয়াণে গভীরভাবে  শোকাগত। তাঁর জীবনাবসানের ফলে শেষ হলো বাংলা কবিতার একটি অধ্যায়ের।

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments