Header Ads

নজরুল ইসলামের পরিচয় তিনি বাঙালির কবি, বাঙালি জীবনে তাঁর প্রভাব অবিস্মরণীয়


দৃশ্য ১: সূর্যপুর স্টেশন সংলগ্ন   মালিপোতা একতা সংঘের কালীপুজোর মন্ডপে বাজছে  "কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন" খ্রিস্টান পাড়ার ডেভিড কাকা মন্ডপের সামনে ঝালমুড়ির দোকান দিয়েছে, তার দুচোখ বেয়ে গাল ভিজিয়ে নামছে জলের ধারা..... এটাই বাঙালির জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ প্রভাব।


দৃশ্য ২: আলিপুরদুয়ার জেলার ভোলার ডাবরী গ্রামে শাসক দলের দেওয়াল লিখছে নগেন বর্মন, "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান" তখনই সাইকেলে করে বাজারে যাচ্ছিলো মসজিদের মুয়াজ্জিন মোক্তার আলি, সুরেলা কন্ঠে গুনগুনিয়ে উঠলো "মুসলিম তার নয়নমনি, হিন্দু তাহার প্রাণ"........ এটাই বাঙালির জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ প্রভাব।

আসলে কাজী নজরুল ইসলামের ব্যাপ্তি এত বিরাট অথচ এমন মাটিগন্ধী যে বাঙালির প্রাণের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছেন এই বহুপ্রতিভ মহাকবি। 

যাঁকে আমরা "বিদ্রোহী কবি" বলে মানি, তাঁরই রচিত গান "মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দিব খোঁপায় তারার ফুল" এই দ্বিমেরুতা ভাবা যায়?
যাঁর লেখা শ্যামাসঙ্গীত ছাড়া বাঙালির কালীপুজো অসম্পূর্ণ, তিনিই লিখছেন "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই"...... কে ফেলবে তাঁকে? কে ফেলতে পারে? বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনচর্য্যায় তাই আকাশচারী ঘুড়ির সুতোর মতন জড়িয়ে গেছেন পরমাদরের 'দুখু মিঞা'।

যদি বলো, "নজরুল তো সুন্নি ইসলামের অনুসারী ছিলেন" তাহলে "কারার ঐ লৌহ কপাট" গানে "মার হাঁক হায়দারী হাঁক" কিসের দ্যোতক? হায়দার, ওরফে হজরত আলি (রহঃ) তো শিয়া ও সুফিদের উপাস্য!!! কিসে বাঁধবে তাঁকে? কোন বেড়াজালে? তিনি যে স্বঘোষিত "ধূমকেতু" !!

স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে নজরুল প্রথম কবি যাঁকে স্রেফ কবিতা লেখার দায়ে কারারুদ্ধ করে সন্ত্রস্ত ব্রিটিশ প্রশাসন। কী ছিলো সেই কবিতায় যে ভীত ব্রিটিশ তাঁর বিরুদ্ধে সেডিশন বা রাজদ্রোহের চার্জ আনে? কত বিস্ফোরক ভরা ছিলো সেই পদ্যে? 

বাঙালি শিশুরা জীবন্ত কাঠবেড়ালি দেখতে পায় তাঁর কবিতায়, ছোট্ট ছোট্ট মোমের পুতুলেরা পুজোর মঞ্চ মাতায় তাঁর গানের সঙ্গে অনুপম নাচ করে। এই সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা  বাংলায় খেজুর পাতার নুপুর পায়ে নেচে যায় আমাদের ঘরের একরত্তি পরীরা।

বাঙালির জীবনের কোন অংশে পদচিহ্ন নেই নজরুলের? এমন আপন কে আর আছে আমার, আপনার, শাক্তের, বৈষ্ণবের, হানাফীর, সুফির, শিয়ার, এমনকি আমাদের পরিবারের শিশুগুলির? এহেন নজরুলকে যাঁরা আজ সম্প্রদায়ের গন্ডিতে বেঁধে দিতে চাইছে সেইসব নরকপশুদের সংহার করো হে মা কালী.....আমাদের দুখু মিঞা কে অমরত্ব দাও।

এ তো গেলো তাঁর সৃজনশীল সত্ত্বা, বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর মজ্জাগত জীবনদর্শন দেখে চমকে উঠতে হয়। বিয়ে করলেন বর্ণহিন্দুর মেয়েকে, অথচ তাঁর ধর্মপরিবর্তনের প্রসঙ্গ মাথাতেই এলো না কবির!!! সন্তানদের নাম দেন যথাক্রমে কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। আজ এই ভিরাট হিন্দু আর সহি মুসলিম হবার প্রতিযোগিতার মুখে আগ্নেয় নিষ্ঠীবনের নাম কাজী নজরুল ইসলাম।

যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে ততদিনই বাঙালির প্রাণের কেন্দ্রে জেগে থাকবে চুরুলিয়া গ্রামের গরিব ঘরের সন্তান দুখু আর আজ যে সব বঙ্গবিভীষন বলছে "বাঙালি ছেলেরা মুম্বাইতে ঘর ঝাড় দেয় আর বাঙালি মেয়েরা বারে নাচে" তাদের পশুমুখে বিশাল জুতাঘাত হয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি কারণ তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পদাতিক সৈন্য হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে সশরীরে ছিলেন বাঙালি জাতির প্রতিনিধি হয়ে।

প্রতিবেদন- প্রবাল চক্রবর্তী

No comments