Header Ads

বাগনানের এক টোটো চালক যিনি নেতাজীকে দেবতারূপে পুজো করেন


বাগনানের নেতাজীকে কী চেনেন? কী অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ অবাক হওয়ারই কথা। তবে ইনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু নন। যিনি সযত্নে আগলে রাখেন নেতাজীর ছবি। তিনি পেশায় একজন টোটো চালক। টোটো চালিয়ে যতুটুকু ইনকাম হয় তা দিয়েই সংসার চালান তিনি। সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমে ২০০ টাকা রোজগার হয় তার। এই ২০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা নিয়ে ফুল-মালা কেনেন তিনি। তারপর বাড়ি ফেরার পথে বাগনান স্টেশনের নিকটবর্তী দশ ফুট উঁচু নেতাজীর মূর্তির গলায় তিনি ফুল-মালা পরান৷ এভাবেই দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে তিনি পুজো করেন। নেতাজীর মূর্তিতে মালা দেওয়ার জন্য সংসারে টান পড়লেও তিনি সবকিছু সামলে নেন। নেতাজীর জন্য তার অন্তর কেঁপে ওঠে। এই অমূল্য রতন মানুষটি হলেন বাগনানের কাছারিপাড়ার রহমান মল্লিক ওরফে কালো মল্লিক। যাকে বাগনানের বাসিন্দারা 'নেতাজী' বলে ডাকেন। 


বছরভর নেতাজীর মূর্তি সংরক্ষণ ও ২৩ শে জানুয়ারি সাড়ম্বরে নেতাজীর জন্মদিন পালন করে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে তার৷ নেতাজীর জন্মদিনে তিনি হাসপাতাল ও স্কুলে ফল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। তার কাছে ২৩ শে জানুয়ারি পুরোদস্তুর ছুটির দিন। মাটির দু'কামরার শান্তির নীড়ে তিনি একা একা বাস করেন৷ এই ব্যক্তির বিলাসিতা সহ্য হয়নি তার স্ত্রী ও ছেলের। নেতাজীর টানে তিনি যে-কোনো ত্যাগকে অনায়াসে স্বীকার করে নেন৷ বহুবছর হলো তাকে ছেড়ে চলে গেছেন তার স্ত্রী ও ছেলে৷ 

রহমান মল্লিক তার টোটোকে অতি যত্নে সাজিয়ে রাখেন। নেতাজীর ছবি ও বাণীতে ঢেকে দিয়েছেন নিজের টোটোকে। গোটা বাংলাতেও আর এমন সুসজ্জিত টোটোর দেখা নাও মিলতে পারে। তিনি নিজের বাড়িতে দেবতার আসনে বসিয়েছেন নেতাজীকে। বাগনান ষ্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নেতাজীর মূর্তিটিকে তিনি সোনালী রঙে রাঙিয়েছেন। রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে তার মর্মও তিনি সঠিকভাবে বোঝেন। 

রহমান মল্লিকের জীবনটা যেন এক সত্যি রূপকথার গল্প৷ তার মতো নেতাজীপ্রেমী মানুষ আর কজনই বা আছেন এ দেশে। তার স্বপ্ন নেতাজীর জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা। কিন্তু অর্থের কাছে বিকিয়ে দিতে বাধ্য হন নিজের স্বপ্নকে। কিন্তু তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২৩ শে জানুয়ারি ও ১৫ ই আগস্ট অর্থ সংগ্রহ করে নেতাজীর জন্মদিন পালন করে থাকেন তিনি। যদি সম্ভব হয় তাহলে পরের বছর তিনি নেতাজীর জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। 

অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ আজকে বিপ্লবীদের কথা ভুলে যাচ্ছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এ দেশে আজও প্রাপ্য সম্মান পাননি। এ দেশে স্বাধীনতাও তার সঠিক মূল্য পায়নি। অথচ রাস্তায় খেটে খাওয়া একজন জলজ্যান্ত রক্ত-মাংসের মানুষই বোঝেন প্রকৃত স্বাধীনতার মূল্য। অতএব রহমান মল্লিকের মতো খেটে খাওয়া মানুষেরাই যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে নেতাজীর মতো বিপ্লবীদের। এই মানুষটির জন্য আমরা গর্বিত। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments