বাঙালির ব্যবসামুখী হওয়া কেন প্রয়োজন?
"বাঙালি ব্যবসা বিমুখ" এই কথাটি অনেককে বলতে শুনেছি। কথাটির সত্যতা আংশিক হলেও সম্পূর্ণ নয়। হ্যাঁ বাঙালির চাকরির দিকে ঝোঁকটাই বেশি তা বলে বাঙালি ব্যবসা বিমুখ এই কথা ঠিক নয়। বাঙালি ব্যবসা ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুনাম তথা সাফল্য অর্জন করেছে তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হল "বেঙ্গল কেমিক্যালস"। বাঙালি কে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করবার জন্য বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তৈরী করেছিলেন বেঙ্গল কেমিক্যালস। পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এই বেঙ্গল কেমিক্যালসের শাখা। বাঙালির হাতে তৈরী এই সংস্থাটি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও বটে। এছাড়া চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল, বন্ধন ব্যাঙ্ক, পিয়ারলেস সহ বহু বাঙালির দ্বারা তৈরী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে যারা বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসা করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে।
ঠাকুর পরিবারও (প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর) ব্যবসা করে যথেষ্ট পয়সা, নাম, যশ অর্জন করেছিল, কিন্তু উদ্যোগের অভাবে সেই ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু ঠাকুর পরিবার নয় বিভিন্ন বাঙালি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে বাংলার ব্যবসায় বাঙালির অধিকারে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এখন সেই শূন্যতা দখল করেছে অবাঙালি বেনিয়া গোষ্ঠী। তাই বাঙালিকে এখন ১০-৫ চাকরির পাশাপাশি ব্যবসাতেও অগ্রসর হতে হবে নচেৎ বাঙালির সন্মুখে সমূহ বিপদ। কী রকম বিপদ?
উত্তরে বলি, আমরা দেখছি বাংলার মাটিতে এখন প্রচুর শপিং মল গড়ে উঠেছে, সেখানে একইসাথে মুদি-দ্রব্য, পোশাক সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পাওয়া যায়, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে পরিষেবা টাও ভালো- স্বভাবতই আমরা ওখান থেকে দ্রব্য ক্রয় করতে বেশী পছন্দ করবো। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে ওই শপিংমল গুলির মালিকানা অবাঙালিদের হাতে। এছাড়া বাংলার খুচরো ব্যবসার দ্রব্য সামগ্রীও মূলত হাওড়ার যে বড় বাজার থেকে আসে তার ৯৫ শতাংশ মালিকানা অবাঙালিদের হস্তগত। চিন্তা করুন আমাদের কেনা দ্রব্যের লভ্যাংশের টাকা চলে যাচ্ছে অবাঙালি ব্যবসায়ীর হাতে, তারা সেই টাকা বিনিয়োগ করছে তাদের নিজ রাজ্যে, এই ভাবেই ঘটে চলেছে বাংলার অর্থের বহিঃস্রোত।
আমাদের টাকায় অবাঙালি ব্যবসায়ীদের রাজ্য ফুলে ফেঁপে উঠছে, আর আমরা দেখছি আমাদের বাংলাকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে, বাংলাতে চরম হাহাকার, বেকারত্ব, শ্রমিকদের বাইরে চলে যেতে হচ্ছে কাজের সন্ধানে। তাই এই অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ করতে বাঙালিকে ব্যবসাতে নামতে হবে সঙ্গে এ প্রজন্মের বাঙালিকে নতুন নতুন শিল্প তথা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। আর আমাদেরকেও বাঙালির দোকান থেকে দ্রব্য ক্রয় করতে হবে। এতে করে আমাদের লভ্যাংশের টাকা বাঙালির হাতেই থাকবে। সেই টাকা খরচ করে বাংলাতে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প, ব্যবসা সহ বহু প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রচুর বাঙালি কাজ করবে ফলে কর্মসংস্থান তৈরী হবে বেকারত্ব কমবে, বাংলার শ্রমিকদের বাইরে যেতে হবে না; এইরকম বিভিন্নভাবে বাংলার প্রভূত উন্নতি সাধন হবে তথা বাংলার অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে। তাই বাংলা-বাঙালির স্বার্থে বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাঙালির হাতে আনতে বাঙালিকে ব্যবসামুখী তথা ব্যবসার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে, তাতেই বাংলার জয় হবে, বাঙালির জয় হবে।
শেষে এইটুকুই বলি, আমি নিশ্চিত যে জাতি বিভিন্ন বৃহৎ ও মহৎ কাজে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে সেই বাঙালি ভালোবেসে একটু উদ্যোগ গ্রহন করলেই ব্যবসা-বাণিজ্যেও যথেষ্ট সাফল্য এবং খ্যাতি অর্জন করবে।
প্রতিবেদন- তপোময় বিশ্বাস
Post a Comment