মেঘালয় রাজ্যের নামকরণ করেন এক বাঙালি
স্বাধীনতার পূর্বে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন থেকে শুরু করে সমাজ সংস্কার বা বিজ্ঞানচর্চা সব ক্ষেত্রেই বাঙালি রেখেছে এক অনন্য ভূমিকা। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা, বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক কাজকর্ম, যুদ্ধে নেতৃত্ব ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই বাঙালির ভূমিকা ফেলে দেবার নয় বরং দেশ গঠনের জন্য এগুলো ছিল অনস্বীকার্য। উত্তর পূর্ব ভারতের চা বাগান বা ত্রিপুরার উন্নয়ন বা আসামের উন্নয়ন বা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারখানা তৈরির জন্য মেধা বা কেরালার ঘর তৈরির শ্রমিক, গুজরাটে সোনা, রূপার গহণা তৈরির কারিগর। দেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বা ইসরোর বিজ্ঞানী এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে বাঙালির ভূমিকা নেই। এমনকি মুম্বাই ও চেন্নাই তৈরি হয়েছিল বাংলার করের টাকায় এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন বিখ্যাত গবেষক রনজিৎ রায়।
বাংলার লবণ শিল্প, রেশম শিল্প ধ্বংস করেছে ব্রিটিশ এবং স্বাধীন ভারতের সরকারগুলির বাংলাদ্রোহী একের পর এক সিদ্ধান্ত।বাংলার পাট, চা শিল্পগুলিও ধ্বংস করা হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক।পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক এক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলার খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ মানভূম, সিংভূম, পাকুড়, বোকারো, হাজারিবাগের মতো জায়গাগুলি ৯৬ শতাংশ বাঙালি হওয়ার পরেও বিহারে যুক্ত করা হয়। বাংলার এক অংশ আসামের সাথে যুক্ত করা হয় তাছাড়া বাংলা ভাগের উদ্বাস্তু হবার যন্ত্রণা। আসামে ডি-ভোটারের সমস্যা, দন্ডকারণ্য থেকে আন্দামান সব জায়গায় অত্যাচারিত হয়েছে বাঙালি। ঝাড়খন্ডের বাংলা মাধ্যম গুলি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, আসামে অসমীয়া চাপানো হচ্ছে। বাংলার মাটিতেও বাংলা ভাষায় পরিষেবা পেতে কাঠ খড় পোড়াতে হচ্ছে বাঙালিকে।
মেঘালয়েও বাঙালিদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। বাঙালিদের ঘর বাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, দিনের আলোতেও বাঙালিকে খুন করা হচ্ছে। অথচ আসামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গঠনের পিছনে বা আসামের চা বাগান তৈরির পিছনে ছিল বাঙালির ভূমিকা। এখনও প্রমাণস্বরূপ ‘চল মিনি আসাম যাবো’ গানটির কথা বলা যেতে পারে যে গানটি প্রমাণ করে বাঙালি কিভাবে কষ্টের মধ্য দিয়ে আসামের মাটিকে উর্বর করে তুলেছিল।মেঘালয়ে বাঙালিদের উপর এত অত্যাচার চালানো হচ্ছে অথচ এই রাজ্যের নামকরণের পিছনে আছে এক বাঙালির অবদান। মেঘালয় রাজ্যের নামকরণ করেন শিব প্রসাদ চ্যাটার্জী।তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের প্রফেসর।তিনি ইন্টারন্যাশানাল জিওগ্রাফিক্যাল ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত। ১৯৫৯ সালে তিনি রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি থেকে মুর্চিসন পুরষ্কার পান।এই পুরষ্কার এখনও পর্যন্ত আর কেউ অর্জন করতে পারেননি।১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মবিভূষণ পুরষ্কারও অর্জন করেন।এক কথায় তিনি বাংলার গর্ব।
তথ্যসূত্র- হিস্ট্রি অফ ইন্টারন্যাশানাল জিওগ্রাফি আর্কাইভ, ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল কার্টোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন ওয়েবসাইট
Post a Comment