১৭ টি মাকড়সার নামকরণ করা হয়েছে এক বাঙালি মাকড়সা বিজ্ঞানীর নাম অনুসারে
অনেকে বলেন বাঙালি নাকি বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে গেছে যদিও একথা একদম মিথ্যা তা জোর গলায় দাবী করা যায়। হাজার খানা বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম আমি বলতে পারি যাদেরকে বাঙালি চেনারও প্রয়োজন বোধ করেনি। যদিও তাদের কাজকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কোনো বিজ্ঞানীর নেই। বাঙালি পাখি বিজ্ঞানী বিশ্বময় বিশ্বাস বা ডাইনোসর বিজ্ঞানী শঙ্কর চ্যাটার্জী এরকম বহু মানুষকেই বাঙালি জানতে চায়নি বা জানানো হয়নি। এদেরকে চেনার এবং চেনানোর দুই দায়িত্বই নিতে হবে। এনাদের কাজগুলো দেখলে যে কেউ অবাক হবেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। বহু জীবের বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে বাঙালিদের নামে কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই বিষয়গুলো অনেকেই জানতে পারেননি। এক বাঙালি পরিবারের তিন সদস্যের নামে তিনটি ডাইনোসরের প্রজাতি আছে বাঙালি কি তাদের চেনে? সুতরাং এনাদের না চিনে সত্যি কি বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত?
যাই হোক এবার আসি আজকের প্রতিবেদনের মূল বিষয়ের উপর। আপনার হয়তো মনে হচ্ছে কে সেই মহান বিজ্ঞানী যার নামে এত সংখ্যক মাকড়সার নামকরণ হয়েছে। এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নাম হল বিনয় কৃষ্ণ টিকাদার। দ্য ওয়ার্ল্ড স্পাইডার ক্যাটালগ অ্যাসোসিয়েসন (ESCA) এর দেওয়া শেষ তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত মোট ১২৮ টি পরিবারের ৪৮৬৪৩ প্রজাতির মাকড়সা আবিষ্কৃত হয়েছে।
বিনয় কৃষ্ণ টিকাদার হলেন বিশ্ববিখ্যাত অ্যারাক্নোলজিস্ট বা মাকড়সা বিজ্ঞানী যিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালে অবিভক্ত বাংলার খুলনার জয়দিহিতে। তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. এবং ডি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে ‘হ্যান্ডবুক অফ ইন্ডিয়ান স্পাইডার’ প্রকাশ করেন যাতে ৪০ টি পরিবারের ১০৬৬ টি মাকড়সার তিনি বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে বহু মাকড়সার বর্ণনাই তিনিই করেছেন বিশ্বে প্রথম বার। ওনার এই বইটি শুধু মাকড়সাই নয় সমগ্র অ্যারাকনিডস এমনকি স্কর্পিয়ান সম্পর্কে জানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে বি. কে. টিকাদারের করা কাজগুলি সর্বজন বিদিত। বিজ্ঞানচর্চায় ওনার অবদান আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বা প্রফুল্ল চন্দ্র রায়দের সমতুল্য আমরা বাঙালিরা তা জানার চেষ্টা করছিনা এটা অবশ্যই আমাদের অপদার্থতা, এই জন্য সমগ্র বাঙালিকে এগিয়ে আসতে হবে।
শুধু ইংরেজিই নয় উনি বাংলাতেও এই বিজ্ঞানের বিষয়গুলি খুব সহজ সরল ভাষায় তুলে ধরেছেন। ওনার লেখা বিখ্যাত বই হল –‘বাংলার মাকড়সা’। তিনি আন্দামান নিকোবর ও পূর্ব ভারতের মাকড়সা নিয়ে সারা জীবন গবেষণা চালিয়েছেন। বহু মাকড়সার প্রজাতি তিনি আবিষ্কার ও নামকরণ করেছেন। তিনি এই নামকরণের সময় বিভিন্ন স্থানের নামও ব্যবহার করেছেন। ওনার আবিষ্কার করা মাকড়সার প্রজাতিতে উনি বাংলার নাম অনুযায়ী বেঙ্গলেনসিস, ঢাকুরিয়ার নামে ঢাকুরিয়েনসিস, আন্দামানের নাম অনুসারে আন্দামানেনসিস ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। ভারতে মাকড়সা সম্পর্কে ক্যাটালগ তিনিই প্রথম প্রস্তুত করেন।
বি. কে. টিকাদারের সহকর্মীরা একটি মাছ ও ১৭ টি মাকড়সার প্রজাতির নামকরণ করেন ওনার নাম অনুসারে। এই প্রজাতি গুলি উল্লেখ করা হল-
মাছের প্রজাতি-
অ্যাবোরিকথিস টিকাদারি (Aborichthys tikaderi)
মাকড়সার প্রজাতি-
১. স্টোরেনা টিকাদারি (Storena tikaderi) ২. ইলিকা টিকাদারি (Eilica tikaderi)
৩. জিস্টিকাস টিকাদারি (Xysticus tikaderi)
৪. নোডোকিয়ন টিকাদারি ( Nodocion tikaderi)
৫. স্কোপোইডেস টিকাদারি (Scopoides tikaderi)
৬. ওক্সিওপেস টিকাদারি (Oxyopes tikaderi)
৭. মারপিসা টিকাদারি (Marpissa tikaderi)
৮. পিস্টিয়াস টিকাদারি (Pistius tikaderi)
৫. স্কোপোইডেস টিকাদারি (Scopoides tikaderi)
৬. ওক্সিওপেস টিকাদারি (Oxyopes tikaderi)
৭. মারপিসা টিকাদারি (Marpissa tikaderi)
৮. পিস্টিয়াস টিকাদারি (Pistius tikaderi)
৯. ড্রাসোডেস টিকাদারি ( Drassodes tikaderi)
১০. থেরিডিয়ন টিকাদারি (Theridion tikaderi)
১১. পোয়েকিলোকোরা টিকাদারি (Poecilochroa tikaderi)
১২. পারডোসা টিকাদারি (Pardosa tikaderi)
১১. পোয়েকিলোকোরা টিকাদারি (Poecilochroa tikaderi)
১২. পারডোসা টিকাদারি (Pardosa tikaderi)
১৩. পেট্রোটিকা টিকাদারি (Petrotricha tikaderi)
১৪. মিমেটাস টিকাদারি (Mimetus tikaderi)
১৫. ওলিওস টিকাদারি (Olios tikaderi)
১৫. ওলিওস টিকাদারি (Olios tikaderi)
১৬. কোরিজোপেস টিকাদারি (Chorizopes tikaderi)
১৭. ক্লাবিওনা টিকাদারি (Clubiona tikaderi)
ওনার লেখা বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'বার্ডস অফ আন্দামান এন্ড নিকোবর আইল্যান্ডস', 'থ্রেটেন্ড অ্যানিম্যালস অফ ইন্ডিয়া', 'হ্যান্ডবুক অফ ইন্ডিয়ান স্পাইডার', 'ইন্ডিয়ান টেস্টুডাইন্স', 'গ্লিম্পস অফ অ্যানিম্যাল লাইফ বার্ডস অফ আন্দামান এন্ড নিকোবর আইল্যান্ডস', 'সি-শোর অ্যানিম্যালস অফ আন্দামান এন্ড নিকোবর আইল্যান্ডস', 'হ্যান্ডবুক ইন্ডিয়ান লিজার্ডস', 'হ্যান্ডবুক অফ ইন্ডিয়ান স্পাইডার'। এক কথায় বলতে গেলে তিনি বাংলার গর্ব।
তথ্যসূত্র- সংসদ বাঙালি চরিতাবিধান দ্বিতীয় খন্ড, ওয়ার্ল্ড স্পাইডার ক্যাটালগ, জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া. নিক. ইন
Post a Comment