লালমাটিতে সবুজ আপেল চাষ করে তাক লাগালো বাঁকুড়ার সংস্থা 'পরশমনি'
লালপাহাড়ির দেশ হলো বাঁকুড়া। শালপাতার জঙ্গল, লালমাটির রাস্তা ও সবুজের মিছিলে বাঁকুড়া যেন রূপসী। কিন্তু রুক্ষ, শুষ্ক, লালমাটির জন্য জল সংকট প্রচণ্ড আকারে দেখা দেয় বাঁকুড়া জেলাতে। এখানকার পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে কৃষিকাজ হয়। প্রধানত ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, পাট, মেস্তা, আলু, লঙ্কা ও আদার চাষ হয় বাঁকুড়াতে। এছাড়াও রেশম কীটের খাদ্য তুঁতে পোকা চাষ করা হয়৷ তবে প্রতিকূল জলবায়ু ও অপর্যাপ্ত জল সরবরাহের জন্য এখানকার কৃষিকাজ বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে কৃষিপ্রযুক্তির সাহায্যে জেলার মোট কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
এই বাঁকুড়ার মাটিতেই এবার উৎপাদিত হচ্ছে সবুজ আপেল। এমনই অসাধ্য সাধন করেছে 'পরশমনি' নামের একটি বাঙালি সংস্থা। তাদেরই তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা শুনে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। বহুদিন প্রচারের আড়ালে কাটিয়েছিল তারা। নিজেদের ফার্মে নিরলস পরিশ্রম ও গবেষণা করে সাফল্যের মুখ দেখেছে তারা৷ বাঁকুড়ার জল আবহাওয়াতে সবুজ আপেল চাষ, যেন বাংলার কৃষিকাজে এক আমূল পরিবর্তন।
ভূস্বর্গের অন্যতম ফল হলো আপেল। যে ফলটি মোটা টাকা ব্যয় করে সেখান থেকে বাংলাতে আমদানি করতে হয়৷ যদি এই ফল বাংলার নিজস্ব পরিবেশে ফলানো যায় তাহলে কেমন হয়? ঠিক এমনই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিস্তর গবেষণা চালায় তারা। বাংলার বুকে আপেলের ফলন একবার ঘটাতে পারলে ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যে আপেল চাষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা বাস্তবায়িত করতে পারলে আগামী দিনে ভিন রাজ্যের ওপর বাংলাকে নির্ভর করতে হবে না আপেল আমদানির জন্য।
গত কয়েক বছর আগে সুরাটের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফার্মার রিসার্চের সঙ্গে যোগাযোগ করে পঁচিশটি 'আন্না' ও 'ডিজার্ট গোল্ডেন' প্রজাতির আপেল চারা আনা হয়৷ এরপর পরীক্ষামূলক ভাবে তাদের কৃষি খামারে গাছগুলো লাগানো হয়৷ তারপর সঠিক পরিচর্যা করা হয় গাছগুলোকে নিয়ে। অবশেষে গাছগুলি বড় হয়ে ফল দিতে শুরু করে৷ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ফলগুলোর স্বাদ চেখে দেখেছেন। কাশ্মীরের আপেল আর বাংলার এই আপেলের স্বাদের মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্যও পাওয়া যায়নি।
বাঁকুড়ার আপেল চাষ এখনও গবেষণার পর্যায়ে আছে। বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে রপ্তানি করতে লাগতে পারে বছর দুই। বাজারগত চাহিদার মাপকাঠি পরিদর্শন, জলবায়ুর তারতম্য যাচাই করার জন্য বিশেষ পরীক্ষা অবশিষ্ট আছে এখনও৷ 'পরশমণি' ইতিমধ্যেই নানান ধরণের বীজ বৈচিত্র্য, গোখাদ্য ও আম উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী দারুণ পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের উৎপাদিত আপেল বাজারে একবার চাহিদা তৈরি করতে পারলেই বাংলার কৃষিকাজে এক নবদিগন্তের সূচনা হবে।
প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক
Post a Comment