Header Ads

যেভাবে টালিগঞ্জের নামকরণ হয়েছিল


টালিগঞ্জ নামটা শুনলেই সবার প্রথমে উঠে আসে টলিউডের কথা৷ দক্ষিণ কলকাতার এক জমজমাট স্থান হলো টালিগঞ্জ। স্টুডিও পাড়া নামেও সকলে চেনেন টালিগঞ্জকে। টলিউডের উৎপত্তির নেপথ্যে এ জায়গাটির বিশেষত্ব রয়েছে৷ কেবল টালিগঞ্জ থেকে টলিউড নামকরণ হয় এ কথা আমরা সকলেই জানি। এর বাইরেও টালিগঞ্জের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। আপনারা কী জানেন টালিগঞ্জের নামকরণ কীভাবে হয়? আজকের প্রতিবেদনে সেকথাই তুলে ধরতে চলেছি৷ 



বিভিন্ন প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  ও দ্রষ্টব্য স্থানের বিচরণ ক্ষেত্র হলো টালিগঞ্জ। ক্যালকাটা ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, গণ যোগাযোগ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, কলকাতা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, ফটোগ্রাফি জাতীয় অ্যাকাডেমি, মনসুর হাবিবুল্লাহ মেমোরিয়াল স্কুল, মিলনগড় গার্লস হাইস্কুল, বি ডি মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউট, নর্মদা হাইস্কুল ও শ্রুতিনন্দনের মতো প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রবীন্দ্র সরোবর, টালিগঞ্জ ক্লাব, রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব, আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি, ইন্দ্রপুরী ফিল্ম স্টুডিও, টেকনিশিয়ানস স্টুডিও, শ্বেতাম্বর জৈন মন্দির, মালঞ্চ সিনেমা হল, চার্নক সিটি ২, করুণাময়ী কালী মন্দির, মেনকা সিনেমা হল, মধুবন সিনেমা হল, নাট্যকার ও অভিনেতা উৎপল দত্তের বাসভবন, অভিনেতা উত্তম কুমারের মর্মর মূর্তি, সাউথ সিটি শপিং মল, সাধু তারাচরণের আশ্রম, স্পেনসার্স রিটেল স্টোর- ডেইলি অ্যান্ড এক্সপ্রেসের মতো দ্রষ্টব্য স্থান এখানে অবস্থিত। এমনই একটি আকর্ষণীয় জায়গা তার তো একটা সুন্দর ইতিহাস থাকতেই হবে। চলুন এবার সেই ইতিহাসের দিকে চোখ রাখা যাক৷ 

টালিগঞ্জের আদিনাম ছিল রসাপাগলা৷ এ নামকরণের পিছনে মতভেদ লক্ষ্য করা যায়৷ কেউ বলেন আগে এখানে পাগলাবাবার আশ্রম ছিল তাই এ জায়গার নাম রসাপাগলা৷ আবার কেউ বলেন এখানকার এক পাগলাগারদের নামানুসারে এ জায়গার নামকরণ হয় রসাপাগলা। যাইহোক রসাপাগলার কথা তো গেল এবার জেনে নেওয়া যাক রসাপাগলা থেকে টালিগঞ্জের নামকরণের ইতিহাস।  

আদি কলকাতার দক্ষিণ সীমান্ত ছিল গোবিন্দপুর গ্রাম৷ এই গ্রামের মাঝখানে দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হতো৷ কিন্তু পরবর্তী কালে এখানকার গঙ্গা ছোটো হয়ে যায়৷ ফলে গঙ্গা ছোট হওয়ার জন্য এর নাম রাখা হয় গোবিন্দপুর খাড়ি৷ এই খাড়ির পাশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার সুরমান সাহেব বসবাস শুরু করেন। তিনি এই খাড়ির নাম রাখলেন সুরমান খাড়ি৷ 

১৭৭৫ থেকে ১৭৭৬ সালে আসাম ও পূর্ববঙ্গের যোগসূত্র স্থাপনের জন্য সুরমান খাড়িকে কেটে আরো গভীর করার সিদ্ধান্ত নেন মেজর উইলিয়াম টলি। তাঁর কথামতো শুরু হয় খননের কাজ৷ যে নালাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হলো টলির নালা৷ এই নালা দিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নৌকাগুলি থেকে টোল আদায় ও নালার ধারে একটি গঞ্জ বা বাজার স্থাপন করে। ১৭৭৬ সালে এই বাজার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ঔরঙ্গজেবের নাতি ফারুকশাহর কাছে এক ফরমান জারি করা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে৷ যে ফরমানে বলা হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো রকম শুল্ক দেবে না৷  সতেরো মাইল দীর্ঘ এই খালটি টলির নালা এবং তার পাশ্ববর্তী বাজার টালিগঞ্জ নামে পরিচিত হয়৷ বর্তমানে টলির নালার দুপাশের অঞ্চলই টালিগঞ্জ। উইলিয়াম টলির নামানুসারে আজকের টালিগঞ্জের নামাঙ্কন করা হয়। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments