Header Ads

ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য থামানো হলো ঐতিহ্যবাহী মাহেশের রথের চাকা


বাংলার ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা হলো মাহেশের রথযাত্রা। প্রতি বছর জমকালো ভাবে আয়োজন করা হয় এই রথযাত্রার৷ ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে হুগলীর শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে সূচনা হয় এই রথযাত্রার। প্রতি বছর রথযাত্রা চলাকালীন মাহেশের স্নানপিড়ি ময়দানে এক মাস যাবৎ মেলা চলে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার পঞ্চাশ ফুট সম্পন্ন রথ নির্মাণ করা হয়। রথটির ওজন থাকে প্রায় ১২৫ টনের মতো। রথের নীচের থাকে ১২ টির মতো লোহার চাকা। রথটি বাংলার নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়। বিশাল এই বারো চাকাবিশিষ্ট রথটি শ্রীরামপুরের মাহেশ জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির অবধি রথটি টানা হয়। তারপর উল্টোরথের দিন নিয়ম মতো রথটি ফিরিয়ে আনা হয় জগন্নাথ মন্দিরে। 


২০২০ তে এই রথযাত্রার বয়স দাঁড়াল ৬২৪ বছর৷ দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন এই রথযাত্রা দর্শন করতে৷ এই রথযাত্রার সাথে জড়িয়ে আছে বাংলার বহু ইতিহাস। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী' উপন্যাসে সুন্দর ভাবে উল্লেখ আছে মাহেশের রথযাত্রার। স্বয়ং চৈতন্যদেব মাহেশকে 'নব নীলাচল' আখ্যা দিয়েছিলেন৷ বাংলার সবচেয়ে   বৃহৎ ও প্রাচীন রথযাত্রা হলো মাহেশের রথযাত্রা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো রথযাত্রা হলো পুরীর রথযাত্রা। যে রথযাত্রার পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হলো মাহেশের রথযাত্রা। 

কথিত আছে, আনুমানিক চতুর্দশ শতকে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামের এক বাঙালি সন্ন্যাসী একবার পুরী তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। তিনি পুরী যাওয়ার আগেই ঠিক করেছিলেন নিজের হাতে ভোগ রান্না করে জগন্নাথকে খাওয়াবেন৷ পুরী পৌঁছানোর পর পণ্ডাদের তার বাসনার কথা জানালেন। কিন্তু পণ্ডারা তার কথা রাখেনি৷ তিনি প্রচন্ড  ব্যথা অনুভব করলেন। তার মনের মধ্যে চেপে ধরলো জোরালো জেদ। তিনি অনশনে বসতেও পিছুপা হলেন না৷ তিনি যখনই অনশনে বসে পড়লেন তখনই স্বপ্নাদেশ পেলেন জগন্নাথ দেবের। স্বপ্নে জগন্নাথ দেব বলেন ভাগীরথি নদীর তীরে এক বর্ষার দিনে একটি প্রকাণ্ড নিমকাঠ ভেসে আসবে সেই কাঠ কেটে তাঁর, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি বানিয়ে পুজো করতে হবে। তিনি ধ্রুবানন্দের হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব। এই স্বপ্নাদেশের পর ধ্রুবানন্দ পুরী ত্যাগ করে ফিরে আসেন মাহেশে৷ তারপর এক বর্ষাকালে একটি নিমকাঠ ভেসে এলো। তিনি কাঠটি কেটে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি বানিয়ে পুজো করলেন। সেই থেকেই নাকি মাহেশের রথযাত্রার সূচনা হয়। 

মাহেশের রথমেলার আয়তন দিন দিন ছোট হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে নগরায়ণের ভূমিকা। নগরায়ণের চাপে জায়গা কমছে মাহশের রথমেলার। চলতি বছরে হঠাৎ করেই বদলে গেল ইতিহাস। করোনার গ্রাসে উন্মত্ত পৃথিবীতে ভিন্ন চিত্র। সকলে রোগমুক্ত হওয়ার লড়াইতে ব্যস্ত। ভিনদেশী কোনো রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাই ঘরবন্দী। যে কারণে স্থগিত রাখা হলো রথযাত্রা। ৬২৩ বছরের প্রাচীন এই রথযাত্রার ইতিহাসে এমনটা প্রথমবার ঘটলো। প্রতি বছর ভিড়ে ঠাসা থাকে গোটা মাহেশ৷ আর এই বছর মাহেশের রথযাত্রার প্রান্তর যেন খা খা করছে৷ বন্ধ মেলা। ভিড়ের চিহ্নমাত্রও নেই। কেবল নিয়ম মেনে কোনোক্রমে পুজো দিয়ে সেরে ফেলা হয়েছে রথযাত্রার কাজ। যার ফলে শ্রীরামপুরবাসীর মনে জমা হয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ দুঃখের মেঘ৷ 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments