আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে। উৎসবের মরসুমে আজ মৃত্যুর হাহাকার

"এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো"। বাংলায় বৈশাখ বা অসমীয়াতে বহাগ এই দিয়েই বাংলা মাসের সূচনা। পয়লা বৈশাখ মানে হালখাতা, মিষ্টি, মাংস, হইহই। নতুন জামাকাপড় পরে বিকেলবেলা বেড়োনো। কখনো কালীমন্দিরে যাওয়া, গুরুজনদের প্রণাম, সোস্যাল সাইটে শুভেচ্ছা বিনিময় এইসব চলতে থাকে। এইবার অন্যরকম। আমরা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এটাই জানি এখন পারস্পরিক দূরত্বই আমাদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায়। আমরা এক বৈশ্বিক মহামারীর কবলে পড়েছি। শুধু আমরা না, গোটা বিশ্ব। বাংলায় বৈশাখ আবার আসবে, বিহু আসবে, আনন্দ আসবে, উৎসব আসবে, কিন্তু জীবন বাঁচানো আগে প্রয়োজন। আমরা সবাই যদি বেঁচে থাকি আমরা আবার এক হব, আনন্দ করব। 

ছবিতে গনেশের চিত্রটি এঁকেছেন লেখিকা নিজেই

আমরা পয়লা বৈশাখের আনন্দের কথা ভাবছি, অনেক মানুষ খেতে পাচ্ছে না, দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্যে আমাদের সরকার, অনেক মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছেন।সেই অভুক্ত মানুষগুলোর মুখের হাসি আমাদের এই বছর সবথেকে বেশি প্রাপ্য। নিজেরা না হয় একটু কম খেলাম, কম পড়লাম, সবাই খেতে পাক, পোশাক পাক, এতেই আনন্দ। প্রত্যেক বছর একরকম কাটাই, একঘেয়ে, এইবার একটু অন্যরকম যা আমরা আমাদের সারাজীবন মনে রাখব।

আমরা ঘরবন্দি, এতে দুঃখের কিছু নেই।এটাই আমাদের আনন্দ যে আমরা বেঁচে আছি। ঘরে বসেই পালন করি পয়লা বৈশাখ। আজকে আমরা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে এই অবস্থান থেকে মুক্ত একদিন হবই। আজ না হয় ঘরের মধ্যে গান গাই, আবৃত্তি করি, আঁকিবুকি কাটি, সেই ছোটোবেলাতে ফিরে যাই। অনেকদিন পর ফিরে পেয়েছি অবসর। তাকেই কাজে লাগাই। আমার কাছের, দূরের সব বন্ধুদের বলি খুব ভালো থেকো। মন খারাপ করোনা। অন্ধকারের পর আলো একদিন আসবেই। আমাদের মৃত্যুকে জয় করতেই হবে। এটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।

আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে......শুভ নববর্ষ হয়তো না, তাও খারাপের মধ্যে ভালো খুঁজে বেড়ানোর তাগিদ আমাদের সবারই। সবাই নিজের নিজের মতো করে ঘরে ভালো থেকো। সেই ছোটোবেলাতে ফিরে যাই। কাটাকুটির দেশে কিংবা বেতাল, হিরন্যশিপুর দেশে। অবকাশ!!! লম্বা অবকাশ। ভালো না লাগার  অবকাশ। অবকাশ খুঁজি আমরা। কিন্তু এখন আমরা অবকাশে বীতশ্রদ্ধ। আমরা ঘুরতে চাই, কাজ করতে চাই, বেড়োতে চাই। এইভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে চাই  না। কিন্তু এক ভাইরাসের জন্যে শৃঙ্খলাবদ্ধ। আমাদের আশা আমরা পারব মৃত্যুকে জয়  করতে। নীল মৃত্যুকে স্পর্শ করতে দেব না।