Header Ads

আপনি কি জানেন ডাইনোসরের বারোটি প্রজাতির আবিষ্কার ও নামকরণ করেন বাঙালি জীবাশ্ম বিজ্ঞানী শঙ্কর চ্যাটার্জী?


বাঙালি জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হলেন শঙ্কর চ্যাটার্জী। তিনি গবেষণা করেন মেসোজোয়িক যুগের মেরুদণ্ডী প্রাণি যেমন ডাইনোসর, আর্কোসর, টেরোসর (Pterosaurs) এবং পাখিদের উড্ডয়নের উৎপত্তি, ম্যাক্রোবিবর্তন, প্লিওবায়োজিওগ্রাফি এসব নিয়ে গবেষণা করেন। এসব নিয়ে তিনি আশিটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন ডাইনোসরের জীবাশ্ম খোঁজ করতে করতে। তিনি ভারত, চীন, অ্যান্টার্কটিকা থেকে দক্ষিণ পশ্চিম অ্যামেরিকা পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন।

শঙ্কর চ্যাটার্জীর নাম জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা সকলেই জানেন। তাঁর ১২ টি ডাইনোসরের প্রজাতি আবিষ্কার, ভারতে থাকা পৃথিবীর অভিঘাত খাদ 'শিব' আবিষ্কার ও নামকরণ তাঁকে সারা বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়।


১৯৭০ সালে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর তিনি অ্যামেরিকার স্মিথসোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট করেন। তিনি টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির জিওসায়েন্সে পল হর্ন প্রফেসর এবং টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি মিউজিয়ামের কিউরেটর হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও তিনি জিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ অ্যামেরিকা এবং অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন।তিনি অ্যান্টার্কটিক সার্ভিস মেডেল, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার এল রামা রাও বার্থ সেরেমনি অ্যাওয়ার্ড, টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে বেস্ট রিসার্চ সায়েন্টিস্ট, ফুলব্রাইট নেহেরু অ্যাওয়ার্ড এবং স্টার আনন্দ থেকে সেরা বাঙালি বিজ্ঞানী হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি গোল্ডেন কি ন্যাশানাল অনার সোসাইটি থেকে অনোরারি মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বোর্ড অফ পাল আর্কের সম্পাদকীয় কাজও করেছেন বহুদিন। তাঁর লেখা বিখ্যাত বইগুলি হল 'নিউ কনসেপ্টস ইন গ্লোবাল টেকটনিক' যেটি তিনি নিকোলাস হট্টনের সাথে লিখেছিলেন। 'লোকোমেশন এন্ড প্যালিওইকোলজি অফ টেরোসর্স','রাইজ অফ বার্ড' যেটি তিনি একাই লিখেছিলেন এবং 'পশ্চার', যেটি তিনি আর. জে. টেমপ্লিনের সাথে লিখেছিলেন।

ড. চ্যাটার্জী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পরিকল্পনায় একটি ন্যাচারেল হিস্ট্রি মিউজিয়াম বানান। তিনি বাঙালি সমুদ্র বিজ্ঞানী রনধীর মুখোপাধ্যায়ের (যিনি ছিলেন ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ওসেনোগ্রাফির চিফ সায়েন্টিস্ট) সাহায্য নিয়ে শিব ক্রেটার বা শিব অভিঘাত খাদ নিয়ে গবেষণা করেন। ভারতে এখনও পর্যন্ত তিনটি ক্রেটার বা খাদ আবিষ্কার হয় তার মধ্যে শিব ইমপ্যাক্ট ক্রেটার অন্যতম এটি ড. শঙ্কর চ্যাটার্জী আবিষ্কার ও নামকরণ করেন। শিব ইমপ্যাক্ট ক্রেটার যেটি অবস্থান করছে মুম্বাই থেকে কিছু দূরে আরব সাগরের মাঝে। এখানে পাঠকদের সুবিধার্থে অভিঘাত খাদ বা ইমপ্যাক্ট ক্রেটার কি এটা বলে রাখা ভালো। অভিঘাত খাদ হল কোনো গ্রহে অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তুর দ্বারা আঘাতের ফলে সৃষ্ট গর্ত। পৃথিবী, মঙ্গল, চাঁদ বা অন্য গ্রহ-উপগ্রহতেও অভিঘাত খাদ দেখা যায়। শিবা ইমপেক্ট ক্রেটারের ইমপ্যাক্ট ইভেন্ট বা পৃথিবীর সাথে মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষের স্যাম্পেল এবং মহারাষ্ট্রের কয়না ড্রিলিং প্রজেক্টের সময়ও তিনি ডাইনোসর ধ্বংসের অনেক স্যাম্পেল সংগ্রহ করেন। এখান থেকে প্রাপ্ত স্যাম্পেলের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ভাবে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসর ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণ তিনি বের করেন।এই আবিষ্কারের ফলে সারা দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম এবং তাঁকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর আবিষ্কারের স্বীকৃতি মেলে ২০১৯ সালে যখন সম্ভাব্য অভিঘাত খাতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় শিব ক্রেটারের রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের আন্না মিখেভার থ্রি স্টেপ লেভেল ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী যা আই.এফ.এস.জি. বা ইমপ্যাক্ট ফিল্ড স্টাডিজ গ্রুপও অুমোদন করে।

তিনি লেট ট্রায়াসিক যুগের সরীসৃপ যেমন ফাইটোসর, রাইনোসরাস, প্রোল্যাকট্রিফর্মস নিয়ে গবেষণা করেন।

তাঁর আবিষ্কার ও নামকরণ করা ডাইনোসরের প্রজাতিগুলি হল-

১.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Walkeria maleriensis (ওয়ালকেরিয়া ম্যালেরিয়েনসিস) ডাইনোসরের নামকরণ করেন শংকর চ্যাটার্জী ১৯৮৭ সালে বিখ্যাত জীবাশ্ম বিজ্ঞানী এলিক ওয়াকারের নাম অনুসারে। পরে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ড. চ্যাটার্জী এবং বিজ্ঞানী বেন ক্রেইস্লের Alwalkeria (আলওয়ালকেরিয়া) নামকরণ করেন। আলওয়ালকেরিয়া ছিল মাংসাশী বেসাল সরিস্কিয়ান শ্রেণির ডাইনোসর।  


২.আরলি জুরাসিক মহাযুগের Barapasaurus ডাইনোসর এরা ভারতে বসবাস করতো। এই গবেষণায় তাঁর সহ-লেখক ছিলেন জেন, কুট্টি এবং রায়চৌধুরী।

৩.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Jaklapallisaurus ডাইনোসর। এই গবেষণায় সহলেখক ছিলেন ফার্নান্ডো ই.নোভাস, মার্টিন ডি. ইজকুরা এবং কুট্টি।

৪.আরলি মহাজুরাসিক যুগের Lamplughsaura ডাইনোসর। এই গবেষণায় সহলেখক ছিলেন কুট্টি, পিটার গ্যালটন এবং আপচার্চ।


৫.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Nambalia ডাইনোসর।এই গবেষণায় সহ-লেখক ছিলেন ফার্নান্ডো ই.নোভাস, মার্টিন ডি. ইজকুরা এবং কুট্টি।

৬.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Postosuchus ডাইনোসর। এই গবেষণাটি তিনি একাই করেছিলেন।

৭.আরলি জুরাসিক মহাযুগের Pradhania ডাইনোসর।এই গবেষণায় সহলেখক ছিলেন কুট্টি, পিটার গ্যালটন এবং আপচার্চ লেট।

৮.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Protoavis ডাইনোসর।এই গবেষণাটি তিনি একাই করেছিলেন।

৯.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Shuvosaurus ডাইনোসর। এই গবেষণাটি তিনি একাই করেছিলেন।

১০.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Technosaurus ডাইনোসর।এই গবেষণাটি তিনি একাই করেছিলেন।

১১.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Walkeria ডাইনোসর।এই গবেষণাটি তিনি একাই করেছিলেন।

১২.লেট ট্রায়াসিক মহাযুগের Tikisuchus ডাইনোসর। এই গবেষণায় সহলেখক ছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী প্রণব কে. মজুমদার।



No comments