এই দোলে কেমিক্যালজাত রং বর্জন করে মেতে ওঠা যাক প্রাকৃতিক রঙ নিয়ে
রং-কোনোকিছু বোঝাবার জন্য এক অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।কেবলমাত্র বিজ্ঞানে নয়, মানুষের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।আমরা অনেক প্রার্থনার সময় সকলে মিলে একসাথে বলি, "রাঙিয়ে দাও এ জীবন বা নানা রঙে ভরে উঠুক এ জীবন"।তাই, রংহীন জীবন বা বস্তু কেউ কি চায়? এই বিভিন্ন ধরনের রং নিয়েই আমরা 'দোল' উৎসবে মেতে উঠি।ভোটের ফলাফলের পর কিংবা কোনো প্রিয় দল খেলায় জিতলেই হোক-দলের প্রতীকী রং নিয়ে আমরা এক অনাবিল আনন্দে মেতে উঠি।দোল বা বসন্ত উৎসব ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।মোটামুটি দক্ষিণ ভারত বাদে গোটা দেশ এই রঙের উৎসবে মেতে ওঠে।প্রতিটা উৎসবের প্রাণ হল তার আনন্দ।বসন্ত উৎসবে রং নিয়ে খেলার সময় বাজারি নানা রং যে ক্ষতিসাধন করে তা অনেক সময় আনন্দের চেয়ে নিরানন্দ ডেকে আনে।তাই,দোলের আনন্দকে অক্ষুন্ন রাখতে আমরা ব্যবহার করতেই পারি 'প্রাকৃতিক রং(Natural colours)'।মজার ব্যাপার হল এই যে, এই ধরণের রং ঘরে বসে অনায়াসেই বানানো যায়।এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাবে সহজ উপায়ে কয়েকটি প্রাকৃতিক রং বানাবার কৌশল।
প্রাকৃতিক রঙ কাকে বলে?
প্রাকৃতিক রং কাকে বলে? বা প্রাকৃতিক রঙের সংজ্ঞা কি? তা সহজভাবেই বলা যায় যে-প্রকৃতি থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা যে রং লাভ করি বা বানাতে পারি তাকেই বলে প্রাকৃতিক রং। অন্যভাবে বলতে গেলে,যেসব রংগুলিকে আমরা প্রাকৃতিক সরঞ্জাম বা উপাদান দ্বারা তৈরি করতে পারি (কোনো রাসায়নিক বস্তু না মিশিয়ে) তাদেরকে বলা হয় প্রাকৃতিক রং।সাধারণত বাজারের কেমিক্যাল দিয়ে বানানো রংগুলি ত্বক ও চুলের ক্ষতি করে থাকে।এসবের ভয়ে অনেকেই রং খেলতে চান না।কিন্তু প্রাকৃতিক রঙের ক্ষেত্রে সেসবের ভয় বা চিন্তা নেই।এতে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই তাই ক্ষতিও নেই।আবার অনেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য রং খেলতেও চান না।তাঁদের জন্যে বানিয়ে নেওয়া যেতেই পারে শুষ্ক প্রাকৃতিক রং(Dry natural colours)।তাই এবার দোলে অ্যালার্জিকে দূরে সরিয়ে মেতেই ওঠা যাক প্রাকৃতিক রঙ নিয়ে।
কেমিক্যাল রং এর ভয়াবহতা ও প্রাকৃতিক রঙের
প্রয়োজনীয়তা
প্রাকৃতিক রং কেন প্রয়োজন? এই প্রশ্নটি লুকিয়ে আছে বাজারে বাজারি রাসায়নিক
রঙের অপ্রয়োজনীয়তার মধ্যে।আগেই বাজারে রঙের দু-একটা ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বলা
হয়েছে।বাজারের চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল রং কেবলমাত্র মানুষ নয়, যেকোনো পশু-পাখির
ক্ষেত্রেই ক্ষতিকারক।এইসব রংগুলি পরিবেশ দূষণও ঘটায়।পাড়া-পড়শি বা
কুকুর-বিড়াল,পাখি সবার গায়ে
এইসব রং লাগলে বিপদ আসবে।বাজারি আবির নিয়ে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে জল
রঙের তুলনায় আবিরের রং অনেক বেশি নিরাপদ।জানা যায় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আমল হোক বা চৈতন্য মহাপ্রভুর
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হতো আবিরের রং।অনেকেই ভাবেন যে চৈতন্যদেবের
ত্বকের উজ্জ্বলতার কারণ হল এই প্রাকৃতিক বা ভেষজ আবির।আসলে,প্রাচীণকালে বা আগে
যখন কেমিক্যালের প্রাচুর্য এত ছিল না তখন ভারতে ভেষজ আবিরই ব্যবহার করা হত।কিন্তু
বর্তমান ভেজালের যুগে আবির ত্বকের পক্ষে কতটা নিরাপদ(স্কিন ফ্রেন্ডলি)তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।দেখা গেছে যে, আবিরের রং ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে।বিশেষত যাদের
এমনিতেই শুষ্ক ত্বক(ড্রাই স্কিন), তাদের তো কোনো কথাই নেই।যাদের অ্যাটোপিক
ডার্মাটাইটিস(ত্বকের প্রদাহ)কিংবা একজিমার প্রবণতা আছে তাদের জন্য তো আবির আরও
ভয়ঙ্কর কেননা আবির এইসব রোগগুলিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
আবিরকে আরও চক্চকে ও
আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে আবিরের সাথে অভ্র ও মিহি কাচের গুঁড়ো মেশানো হয়ে
থাকে।আমরা জানি যে কাচ সূর্যের আলোয় বা যেকোনো আলোয় চক্চক্ করে, তাই একেই আবিরের
সাথে মেশানো হয়ে থাকে।এই কাচ মেশানোয় সমস্যা আরও বাড়ে।মুখে বা গলায় আবির মাখাতে গিয়ে ত্বক ছড়ে
যেতে পারে।ব্রণ, ফুসকুড়ি বা র্যাশ
থাকলে তো কোনো কথাই নেই।আবির অ্যাকনের সমস্যাও ডেকে আনতে পারে।এবার আসি যাদের
অ্যালার্জি, অ্যাজমা বা হাঁপানি
আছে বা এসব রোগের প্রবণতা আছে তাদের ব্যাপারে।একটা বেশ বড়ো সংখ্যার মানুষই তা যে
বয়সেরই হোন না কেন এসব রোগে ভোগেন।দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ সময় শিল্পক্ষেত্রে যেসব রং ব্যবহার করা হয়
সেসব রংগুলোই দোলের রং হিসেবে বা তার মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।এইসব
রাসায়নিক থেকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাইটিস এমনকি শ্বেতী রোগও হতে পারে।দোল খেলার সময়
আবির বাতাসে ওড়ে।বাতাসে এই ভাসমান আবির বা রঙের গুঁড়ো খুব সহজেই শ্বাসনালীতে
ঢুকে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে যেমন ইরিটেশন, হাঁচি, সর্দি-কাশি ইত্যাদি।এইসব ভাসমান আবির বা রঙের গুঁড়ো থেকে
অ্যাজমার সমস্যার বৃদ্ধি হতে পারে।
দেখা গেছে যে বেশিরভাগ দোলের রং বিভিন্ন অক্সিডাইজড
ধাতু বা ইঞ্জিন তেল মিশিয়ে তৈরি করা হয়। নানা রাসায়নিক উপাদান দ্বারা বিভিন্ন রং
তৈরি হয়। এই যেমন কপার সালফেট থেকে সবুজ রং, ক্রোমিয়াম আয়োডাইড থেকে বেগুনি রং, অ্যালুমিনিয়াম
ব্রোমাইড থেকে রূপালী রং, লেড অক্সাইড থেকে কালো রং।এইরকম ভাবেই নানা রাসায়নিক থেকে
বিভিন্ন রং তৈরি করা হয়।আর রং যাতে চিক্চিক্ করে তার জন্যে কাচের গুঁড়ো
মেশাবার কথা ও তার থেকে ক্ষতি হওয়ার কথা তো আগেই বললাম।এইসব রাসায়নিক উপাদানগুলি
থেকে চামড়ার অ্যালার্জি, চোখ জ্বালা এমনকি
অন্ধতয়া সহ বহু রোগ হতে
পারে।বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থেকে কি কি ধরনের রোগ হতে পারে তা জেনে নিই।কালো
রং তৈরি করতে ব্যবহৃত হয় লেড অক্সাইড যা থেকে রেনাল ব্যর্থতা এবং কিছু শিখবার
অক্ষমতাও দেখা দেয়। চোখের অ্যালার্জি, অস্থায়ী অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে সবুজ রং তৈরির জন্য ব্যবহৃত
কপার সালফেট থেকে। রক্তের মতো লাল রং তৈরি করতে লাগে ক্রোমিয়াম আয়োডাইড।এই
রাসায়নিক ব্যবহার করলে অ্যালার্জি ও ব্রোচিয়াল হাঁপানি হতে পারে।ত্বকের
ক্যান্সার হতে পারে লাল রং তৈরির জন্য ব্যবহৃত মারকারি সালফাইড থেকে।কার্সিনোজেনিক রোগ দেখা দিতে পারে রূপালি রং প্রস্তুতকারক অ্যালুমিনিয়াম ব্রোমাইড
থেকে।
এছাড়াও আবিরের রঙে ব্যবহার করা হয়ে থাকে রেড অক্সাইড, মেটানিল ইয়েলো এবং
ম্যালাকাইট গ্রিন।এইসব রাসায়নিকযুক্ত রং দিয়ে দোল খেললে বেশিরভাগ মানুষের বিশেষত
বাচ্চাদের নানা ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।ত্বকের জ্বালা এবং চুলকানিও হতে পারে।রং এবং তার মধ্যে থাকা গ্লিটারও বেশ ভয়ঙ্কর।এক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার
করা হয়ে থাকে সেসবের থেকে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।এই অ্যালার্জিক
কনজাংটিভাইটিস থেকে ক্ষতি হতে পারে কর্নিয়া।আবার, কেমিক্যাল রং মাটিতে বা জলে পড়লে সেখানকার বসবাসকারী
জীবদের ক্ষতি করতে পারে।এইসব রংগুলি জলে পড়লে সেই জলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।তাই
পুকুরে বা নদীর জলে এইসব ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত রং মিশলে যে কি হবে তা বোঝাই যাচ্ছে।
আবিরের এইসব ভয়ঙ্কর দিকগুলি থেকে বাঁচতে অনেক সংস্থাই
আজ প্রস্তুত করছে 'ভেষজ রং'।কিন্তু বাজারে সব সংস্থার রংই যে একেবারে ভেষজ-তা কি
হলপ্ করে বলা যায়? আর তাছাড়া খাঁটি
রঙের দামও একটু বেশি।এর কারণ, দেশে প্রচুর মানুষ হোলি খেললেও, ভেষজ রং বা আবির প্রস্তুত করার তেমন পরিকাঠামো কোথায়?
এবার পাঠকদের ভাবতে
হবে যে তাঁরা নারকেল তেল মেখে, মাথায় তেল দিয়ে বা টুপি পড়ে, সানগ্লাস পড়ে রং খেলতে নামবেন না কি বাড়িতে বসে
বানিয়ে নেবেন প্রাকৃতিক রং। প্রাকৃতিক রঙের প্রয়োজনীয় দিকগুলি তুলে ধরতে
গেলে প্রথমেই বলতে হয় যে আমাদের ত্বক ও পরিবেশ কোনোটাই ক্ষতি হয়না প্রাকৃতিক
রঙের দ্বারা।দেখা গেছে যে, এই রং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক তো নয়ই বরং ভালো।
প্রাকৃতিক রং তৈরি করার উপায়
এবার আসি এক মজার ও আকর্ষণীয় বিষয়। আগেই বলা হয়েছে যে
প্রাকৃতিক রং ঘরে বসেই বানানো যাবে।এইসব রং আমরা সাধারণত যা যা জিনিস ব্যবহার করে
থাকি তা সে শাক-সব্জি, গুঁড়ো, ফুল যাইহোক না কেন
তা দিয়েই বানাতে পারি।তাহলে আর দেরি না করে প্রাকৃতিক উপায় বানিয়ে ফেলা যায়
পছন্দের রং।বিভিন্ন উপায়ে বানানো যায় প্রাকৃতিক রং, এখানে আমরা সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করব।
হলুদঃ অনেকেরই পছন্দের রং হলুদ।হলুদ রং বানানোর জন্যে ২ চামচ
হলুদ গুঁড়ো নিতে হবে।এবার এর সাথে ৪
চামচ বেসন বা ৪-৫ চামচ ময়দাও মেশানো যায়।রং ভালো পাওয়ার জন্যে ময়দা মেশালে ভালো
হয়।তবে,আগের উল্লিখিত পরিমাণের থেকে বেশি পরিমাণে গুঁড়ো হলুদ ও ময়দা মেশানো যেতে পারে তবে সেক্ষেত্রে
দেখতে হবে যে হলুদ রং ফ্যাকাশে না হয়ে যায়।যাইহোক,এরপর এই মিশ্রণটিকে রোদে রাখতে হবে যাতে এটি ভালোভাবে
শুকিয়ে যায়।এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই শুষ্ক(dry) হলুদ রং পাওয়া যাবে।আর যদি গোলা বা ভেজা হলুদ রং চাওয়া হয় তাহলে পরিমাণ মতো গাঁদাফুল জলে দিয়ে রেখে সেই জলটা সারারাত ফোটাতে হবে
বা সেদ্ধ করতে হবে।সকালে পাওয়া যাবে কাঙ্খিত হলুদ রং। অর্থাৎ এক্ষেত্রে হলুদ
গাঁদা ফুলের পাপড়িকে পেস্ট করে হলুদ রং বানানো হল।গুঁড়ো হলুদ রং ও ময়দার
মিশ্রণকে জলে মিশিয়েও গোলা হলুদ রং পেতে পারেন।
লালঃ রক্তের রং লাল।আকর্ষণীয় রং লাল লাভ করার জন্য জবাফুলের
পাপড়ি নিয়ে রোদে শুকোতে দিতে হবে।শুকিয়ে যখন কড়কড়ে হয়ে যাবে তখন সেই পাপড়ি
গুঁড়ো করে নিতে হবে।এবার তাতে পরিমাণ মতো ময়দা মেশালে পাওয়া যাবে লাল রং।জবাফুল ছাড়াও সূর্যমুখী ফুলের পাপড়ি দিয়েও লাল রং তৈরি করতে পারা যাবে।এবার
গোলা লাল রং তৈরি করতে হলে,পরিমাণ মতো জবাফুল জলে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিতে হবে।তাহলেই পাওয়া যাবে লাল রং।এক্ষেত্রে,জবা ফুলের জায়গায় সূর্যমুখী ফুলও নেওয়া যেতে পারে।অন্য
উপায়ে যেমন দু’-চামচ লাল চন্দন
গুঁড়ো নিয়ে জলে মিশিয়ে সেই জলটাকে ফোটালেও লাল রং পাওয়া যাবে।অর্থাৎ, গোলা লাল রং পেতে
টক্টকে লাল রঙের জবাফুল বা চন্দন গুঁড়োর পেস্ট বানাতে হবে।
সবুজঃপরিবেশের আদর্শ রং সবুজ।সারা পৃথিবীতে আজ সবুজের আহবান শোনা
যাচ্ছে।হেনা পাউডারের সাথে পরিমাণ মতো বেসন বা ময়দা মিশিয়ে সবুজ রং তৈরি করা
যায়।এছাড়াও, মেহেন্দি পাতা, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, গুলমোহর পাতা, নিম পাতা বেছে
নেওয়া যায়।এবার সেগুলোকে মিক্সিতে পেস্ট করে বানানো যায় সবুজ রং।এবার এই পেস্টকে
রোদে শুকিয়ে, তারপর বেসন মিশিয়ে শুষ্ক সবুজ রং তৈরি করা যায় আবার ওই পেস্টকে জল মিশিয়ে
গোলা সবুজ রং তৈরি করা যাবে। গোলা সবুজ রঙের
জন্যে ৩-৪ চামচ মেহেন্দি পাউডার জলে ভেজাতে হবে।জলটা ভালো করে নাড়াতে হবে।যখন
মেহেন্দি পাউডার জলে মিশে যাবে তখন মিশ্রণটিকে আলাদা করে সরিয়ে রাখতে হবে।এভাবে, গাঢ় সবুজ রং
পাওয়া যাবে।আবার পরিমাণ মতো পালং শাকের পাতা নিয়ে সেটিকে পিষে নিতে হবে।এবার, এই পেস্টটি জলে
মেশালে পাওয়া যাবে ভেজা সবুজ রং।
গোলাপিঃ বেশিরভাগ মানুষের বিশেষত মহিলাদের প্রিয় রং গোলাপি।দোলেও
এই রং বেশি ব্যবহৃত হয়।এই রং তৈরি করতে পরিমাণ মতো বিট নিয়ে মিক্সিতে পেস্ট করে
নিতে হবে। তারপর সেই পেস্ট রোদে রেখে শুকাতে হবে।শুকিয়ে যাওয়ার পর তাতে পরিমাণ
মতো বেসন বা ময়দা মেশালে গুঁড়ো গোলাপী রং পাওয়া যাবে।গোলা গোলাপি রং চাইলে বিট
কেটে সেদ্ধ করতে হবে।তারপর এককাপ জল মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে গোলাপি রং।আবার, বিটের রসের সাথে
দুধ যোগ করা যায়।আর এরপর জল মেশালে পাওয়া যাবে গোলাপি রং।
খয়েরি বা মেরুনঃ হেনা পাউডার, গুসেবেরি পাউডার এবং টারমেরিক পাউডার মেশালে খয়েরি রং
পাওয়া যাবে।আবার, চা পাতা বেটে পেস্ট
বানালেও খয়েরি রং পাওয়া যায়।এছাড়াও, কফি গুঁড়ো বা খয়েরের সাথে জল মিশিয়েও পাওয়া যাবে খয়েরি রং।আর
গাঢ় মেরুন রং চাইলে পরিমাণ মতো বিটরুট ব্লেন্ডারে পিষে নিতে হবে।তারপর জলে ভিজিয়ে
রাখতে হবে বা সেদ্ধ করে নিতে হবে।
নীলঃ আকাশের বা সমুদ্রের রং নীল।শুষ্ক অবস্থায় এই রং পেতে গেলে ১
অংশ ইন্ডিগো পাউডারের সাথে ৩ অংশ ময়দা মেশাতে হবে।অর্থাৎ,এদের অনুপাত হবে ১:৩।আবার, নীল গোলাপ(blue hibiscus)পাপড়ির শুকনো গুঁড়োর সাথে সমপরিমাণ ময়দা মেশালেও পাওয়া যাবে শুষ্ক নীল
রং।আর গোলা নীল রং তৈরির জন্যে শুকনো নীল গুলমোহর ফুলকে মিক্সিতে করে পেস্ট করে নিতে হবে।তারপর
এই পেস্টে জল মেশালে পাওয়া যাবে গাঢ় নীল রং।আবার, পরিমাণ মতো জাম ফল মিক্সিতে পিষে নিতে হবে।তারপর সেই
পেস্টটিতে জল মেশালে পাওয়া যাবে নীল রং।এছাড়া, অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি থেকেও নীল রং বানানো যায়।
কমলা বা গেরুয়াঃ গেরুয়া ত্যাগের প্রতীক।তাই সন্ন্যাসীরা গেরুয়া বসন ধারণ
করে থাকেন। কমলা রঙের গাঁদা ফুলের পাপড়ি আগের মতো পেস্ট বানালে কমলা বা গেরুয়া রং
পাওয়া যাবে।এই পেস্টকে শুকিয়ে বেসন বা ময়দা মেশালে শুষ্ক কমলা বা গেরুয়া রং তৈরি
হবে। আবার, ওই পেস্টের সাথে জল
মেশালে গোলা কমলা বা গেরুয়া রং
পাওয়া যাবে।
কালোঃ লাল, নীল, সবু্জ, খয়েরি-এইসবকটির শুষ্ক রং বা পাউডারগুলিকে মিশ্রণ করলে
পাওয়া যাবে খয়েরিটে কালো রঙের পাউডার।আর গোলা কালো রং চাইলে আমলকি ফুটিয়ে একটা
ঘন পেস্ট বানাতে হবে।তারপর লোহার পাতে তা রাখতে হবে সারারাত।পরদিন সকালে পেস্টটির
সাথে জল মেশালে পাওয়া
যাবে কুচকুচে কালো রং।আরও অন্যান্য উপায়েও বানানো যায় কালো রং।পরিমাণ মতো আমলকি প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে।পরে সেগুলিকে
সেদ্ধ করতে হবে।সেদ্ধ করার পর সারারাত সেই সেদ্ধটি রেখে দিতে হবে।পরদিন সেই
সেদ্ধতে জল মেশালে কালো রং তৈরি হয়ে যাবে।আবার কালো আঙুরের জুস সংগ্রহ করে তা জলের সাথে মেশাতে হবে।এই
মিশ্রণটি কিছুক্ষণ রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে কালো রং।
জাফরানঃ জাফরান বা স্যাফরন যা আমাদের জাতীয় পতাকার উপরে থাকে,সেই রং প্রস্তুত
করতে চাইলে পরিমাণ মতো জাফরান নিয়ে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।এরপর জলে ভেজানো
এই জাফরানকে পিষে পেস্ট বানাতে হবে।এই পেস্ট জলে রাখলেই জাফরান রং তৈরি হয়ে যাবে।আবার
শুষ্ক রং চাইলে, ওই পেস্ট জলের সাথে
না মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে ময়দা বা বেসনের সাথে মেশাতে হবে।
শুষ্ক রং বানাবার ক্ষেত্রে,গুঁড়ো বা পাউডার ময়দা বা বেসনের সাথে মিশিয়ে রোদে
রাখলে রং আরও খুলবে।তাহলে, আর কোনো চিন্তাই নেই।অ্যালার্জিরও ভয় নেই, ত্বকের, চোখের বা চুলের
কোনো সমস্যা হওয়ারও কোনো ভয় নেই।কেননা, বাজারের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো রং কেনার কোনো দরকারই
নেই।আর তাছাড়া এ বছর কোরোনা সংক্রমণের ভয় চীনা আবিরও কেনা যাবে না।অতএব? অতএব আর কি, দেখা তো গেলই যে
খুব সহজেই বানিয়ে ফেলা যেতে পারে প্রাকৃতিক রং।এই রঙ খেললে মাথাও ঘুরবে না বা
শ্বাসকষ্টও হবে না কেননা এখানে কেবলই প্রাকৃতিক বা জৈব উপাদান রয়েছে কোনো বিষাক্ত
বা ক্ষতিকর উপাদান নেই।তাহলে, এক অনাবিল আনন্দে রঙিন হয়ে উঠুক এই রং খেলার দিনটি।সবাইকে
জানাই- "শুভ দোল উৎসব"।
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteএখানে বলে নিই যে, গোলাপী রং ময়দা ও লাল চন্দন গুঁড়ো দিয়েও বানানো যায় আর তাই বানিয়েছি। আবার খয়েরি বা ব্রাউন রং কফির গুঁড়ো ও ময়দা দিয়ে তৈরি করেছি।
ReplyDelete