Header Ads

বিস্তৃতির অতলগর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক বঙ্গসন্তান


সারাদেশের স্কুল ছাত্রদের নিয়ে ফুটবলের বিখ্যাত প্রতিযোগীতাটি সুব্রত মুখার্জি গোল্ড কাপ নামে খ্যাত। জানা আছে কি কে এই বঙ্গসন্তান? 

জন্ম ১৯১১ সালে কলকাতার এক অতি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতা সতীশ চন্দ্র মুখার্জী ছিলেন খ্যাতনামা আই সি এস ও মাতা চারুলতা মুখার্জী  প্রথম মহিলা 'ঈশান স্কলার' ও নিরলস সমাজকর্মী। তাঁর মাতামহ ড. প্রসন্নকুমার রায় ছিলেন ভারতীয় শিক্ষা মন্ত্রকের কর্মকর্তা এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ। মাতামহী সরলা রায় গোখেল স্মৃতি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সুব্রত, বড় দিদি রেনুকা রায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এহেন পরিবারে জন্ম নিয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়া সাঙ্গ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি দিলেন ইংল্যান্ডে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু বিধাতাপুরুষের ইচ্ছা ছিল অন্য। রয়াল এয়ারফোর্সে ভারতীয় অফিসার নেয়া হবে এই বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করে বসলেন আর সিলেক্টও হয়ে গেলেন। সম্ভবত মামা ইন্দ্রলাল রায়ের অনুপ্রেরণা কাজ করেছিল যিনি ছিলেন RAF এর প্রথম ভারতীয় পাইলট  অফিসার, WW1 এ নিহত হন। 


ট্রেনিংয়ের পর তাকে পাইলট হিসাবে ভারতে পাঠানো হয় এবং করাচীতে RAF এর ১নং স্কোয়াড্রনে যোগ দেন। প্রথম অ্যাকশনে অংশ নেন ১৯৩৭ এ আফগান সীমান্তে উপজাতি বিদ্রোহ দমনে, সাফল্যের নিদর্শন হিসেবে তাকে Indian General Service Medal এ সম্মানিত করা হয়। দুবছর পরেই শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এই সময়ে প্রথম ভারতীয় রূপে তিনি কাহুতা বিমান ঘাঁটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করার জন্য তাকে Order of the British Empire সম্মানে ভূষিত করা হয়।

দেশ স্বাধীন হবার পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার হবার জন্য তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আর কতদিন তিনি ব্রিটিশ বায়ুসেনা প্রধান চান ? অবলীলায় জবাব দিয়েছিলেন আরও পাঁচ থেকে সাত বছর!নিজের প্রমোশন বাতিল করেও এই জবাব দিয়ে বাহিনীর প্রতি তাঁর dedication এর প্রমাণ দিয়েছেন। ফলে স্বাধীন ভারতে ক্রমান্বয়ে তিনজন ইংরেজ প্রধানের পর ১৯৫৪ সালে সুব্রত মুখার্জি প্রথম ভারতীয় রূপে Chief of Air staff এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বয়স তখন তার মাত্র তেতাল্লিশ বছর।

এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লী টোকিও বিমান সেবা চালু করলে মুখার্জি প্রথম বিমানে ছুটি কাটাতে ৭ই নভেম্বর ১৯৬০ এ জাপান যাত্রা করেন। পরদিন ভারতীয় নৌসেনার এক অফিসারের সাথে সেখানকার রেস্তোরায় খাবার সময় শ্বাসনালীতে খাদ্য আটকে দমবন্ধ হয়ে মারা যান। টোকিওর রেঙ্কোজী মন্দিরে রাখা আরো এক বীর বাঙালির চিতাভস্ম রাখার মতন এই মৃত্যু, আজও এক রহস্য! 

মৃতদেহ দিল্লিতে ফিরিয়ে এনে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় নিগমবোধ ঘাটে অন্তিম সংস্কার করা হয়। তাঁর বয়সের সাথে মিলিয়ে ঊনপঞ্চাশটি যুদ্ধ বিমান একসাথে আকাশে উড়ে তাঁকে শেষ সম্মান দেখায় । দিনটি ছিল ১০ ই নভেম্বর, ১৯৬০। পরবর্তী বায়ুসেনা প্রধান হিসাবে পয়লা ডিসেম্বর  শপথ নেন Aspy Engineer এবং ঐদিনে এক বিশেষ ঘোষণায় সুব্রত মুখার্জিকে "Father of the Indian Air Force" বলে শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করেন।

আজীবন ফুটবল প্রিয় মানুষটি ছিলেন গোঁড়া মোহনবাগান সমর্থক এবং তাঁরই সম্মানে ১৯৬১ থেকে স্কুল ছাত্রদের ফুটবলে চালু হয় সুব্রত কাপ। অথচ নীরবেই থেকে গেল বীর বঙ্গসন্তানের মহাপ্রয়াণ দিবস।

No comments