Header Ads

জমকালো বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে মহানগরে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগালো 'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০'


সাফল্যের সাথে সমাপ্তি ঘটলো 'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০'। গত ২২ শে ফেব্রুয়ারী ও ২৩ শে ফেব্রুয়ারী দুই দিন ব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। কলকাতার 'ভারত সভা' তে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণাঢ্য এই চলচ্চিত্র উৎসব। 'হট্টমেলা'র প্রতিষ্ঠাতা তথা কর্ণধার কৌশিক রায় (পাউ) এ অনুষ্ঠানটির সার্বিক আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থেকে আয়োজনে সার্বিক সহায়তা করেন বাংলাদেশের 'বাবাই ফিল্মস্' এর কর্ণধার এস.আই.গগণ ও রাফসান তাসনিম। এই চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টার নির্মাণ সহায়ক খুলনার 'রঙ ক্রিয়েটিভ সলিউশনস্'। 


                    
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, বাংলাদেশ, কেরালা, মুম্বাই, চেন্নাই, আসাম, উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গা থেকে নির্মিত প্রায় আশিটির মতো তিরিশ মিনিটের অন্তর্বর্তী নানান বিষয়বস্তু নির্ভর শর্টফিল্ম, তথ্যচিত্র, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন চিত্র, দৃশ্যায়িত কবিতা, ট্রেলার প্রভৃতি বিভিন্ন বিভাগের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এ উৎসবের সূচনা হয় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলা চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট শিল্প নির্দেশক তথা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চিত্রকর শ্রী সমীর কুন্ডু মহাশয়। যিনি এ বছরের সম্মানীয় বিচারকের দায়িত্বভারও পালন করেন। তাঁর মূল্যবান বক্তব্যের পর শুরু হয় দুই দিন ব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী পর্ব। এ বছরের উৎসব প্রতিযোগিতামূলক ছিল। এককথায় বলতে গেলে এই বছরের চলচ্চিত্র উৎসব একটি সামগ্রিক ভিডিও ফেস্টিভ্যালের রূপ নিয়েছিল। সমীর কুন্ডু মহাশয় ছাড়াও অপর দুই বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র প্রশিক্ষক ও অভিনেতা ইহতিশাম আহমদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক সোম চক্রবর্তী। 


                                               
পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ তথা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ আন্তরিকতার সাথে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিন রবিবার বিকেল পর্যন্ত চলে বিভিন্ন রকম চলচ্চিত্র প্রদর্শন পর্ব। তারপর বিকেলে আয়োজিত হয় নবাগত নির্মাতাদের নানান ক্ষেত্রের পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক আলোচনা সভা। যেখানে বক্তব্য রাখেন লেখক, চিত্রনাট্য, পরিচালক, চিত্রকর ও অভিনেতা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য (বুবু), বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী প্রযোজক সঞ্জীব কুমার হোড়, বিশিষ্ট স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক সোম চক্রবর্তী, সিনে রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডঃ অরিজিৎ কুমার নিয়োগী এবং বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক মেঘ ব্যানার্জী যাকে 'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব' এর আবহ সংগীত রচনার জন্য বিশেষ ভাবে সম্মানিত করা হয়। ওনাদের মধ্যে বাকী তিনজনকে 'হট্টমেলা অনন্য সম্মান' এ সম্মানিত করা হয়। 


                       
এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী পর্ব। সাধারণত একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের  চলচ্চিত্র উৎসবে যেসব বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়, অধিকাংশ স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবের ক্ষেত্রেই সেই প্রতিটি বিভাগ বিদ্যমান থাকা সত্বেও অধিকাংশ বিভাগকেই উপেক্ষা করা হয় কিন্তু 'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০' তে শর্টফিল্ম, তথ্যচিত্র, মিউজিক ভিডিও, চিত্রায়িত কবিতা, বিজ্ঞাপন চিত্র, ট্রেলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রায় সকল উপেক্ষিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকেই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। তার সাথে কিছু প্রশংসনীয় বিভাগের পুরস্কারও সংযুক্ত করা হয়। এই প্রথমবার বাংলার কোনো স্বল্পদৈর্ঘ্যের উৎসবে সম্ভবত এতো সংখ্যক পুরস্কার বিতরণ করা হলো।   
  
                               
সার্বিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন 'হট্টমেলা'র কর্ণধার কৌশিক রায় (পাউ)। তিনি বলেন " দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছি মানুষকে না ঠকিয়ে সৎ ভাবে একটা প্রকৃত চলচ্চিত্র উৎসব যেমন হওয়া উচিৎ, ঠিক তেমনই সুষ্ঠ ও সুন্দর একটা চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করার। সেই উদ্দেশ্যেই দীর্ঘদিন নানান নতুন পরিকল্পনা ও নিরলস কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে , একশোরো অধিক অংশগ্রহণকারী মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত ক্রমাগত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি ,সাথে তথ্য প্রদানের। স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রতিটি উপেক্ষিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকেও পুরস্কৃত করার চেষ্টা করেছি একদম নিরপেক্ষ ও নিখুঁত বিচার পদ্ধতির মাধ্যমে। বিশেষত উল্লেখ্য কোনো বিভাগের ক্ষেত্রেই 'শ্রেষ্ঠ' এই শব্দটির তকমা আরোপিত করিনি, কারণ আমি মনে করি শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট সৃষ্টিকে কখনোও 'শ্রেষ্ঠ' তকমাটা দেওয়া যায় না। তাই আমরা সংগৃহীত ছবি গুলিকে বিচার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিভাগীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত করি 'শ্রেষ্ঠ' উল্লেখ না করে।



দুই বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের এতো সংখ্যক অপরিচিত মানুষ নিজেরা এসে যোগাযোগ করে আমাকে তাদের ছবি জমা দিয়েছেন, অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন, এতোদিনের ক্রমাগত কথপোকথনে তারা প্রত্যেকেই এখন পরিচিত হয়েছেন এবং সকলের ভালোবাসাময় শুভেচ্ছায় এই আয়োজন সুসম্পন্ন হয়েছে। আশা রাখি পরবর্তীতে এই বৃত্তের পরিধি আরো প্রসারিত হবে এবং আরো  অভিনব নতুন নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এই চলচ্চিত্র উৎসবকে সকলের সহমর্মিতায় আরো সমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করে তুলতে পারবো ।"



অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশেষ সহায়তা করেন কাশীনাথ ঘোষ ও তোর্সা ঘোষ এবং ২৩শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইংরেজি ভাষ্য সঞ্চালনায় ছিলেন অর্পিতা রায়। চিত্রগ্রহণে শুভ ব্যানার্জী ও রাফসান তাসনিম।

'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০'তে যে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয় তা হলো শর্টফিল্ম যেমন কেরালার ছবি পেনসিল বক্স, পশ্চিমবঙ্গের ছবি রুম 462, চেন্নাইয়ের ছবি ভাগুপ্পারাই ফোর বি, কেরালার ছবি উপ্পালাম, পশ্চিমবঙ্গের ছবি স্বপ্ন হলেও সত্যি, কেরালার ছবি কে, পশ্চিমবঙ্গের ছবি ব্যবধান, আসামের ছবি পোয়েট্রি অফ হুইস্পারস্, পশ্চিমবঙ্গের ছবি নোটিফিকেশন, উত্তরপ্রদেশের ছবি পুছ লো, পশ্চিমবঙ্গের ছবি লীলা, আসামের ছবি এ রেনবো ইন দ্য নাইট স্কাই, পশ্চিমবঙ্গের ছবি লেফট ওভারস্, পশ্চিমবঙ্গের ছবি রিজেকশন ডে, পশ্চিমবঙ্গের ছবি মা, পশ্চিমবঙ্গের ছবি গগণ মুন্সির ইচ্ছে-পূরণ, মুম্বাইয়ের ছবি ফাফুন্দি, পশ্চিমবঙ্গের ছবি বর্জন, পশ্চিমবঙ্গের ছবি ইনসেপশন, পশ্চিমবঙ্গের ছবি ফিরে দেখা, পশ্চিমবঙ্গের ছবি রানার হেজ অনলি চেঞ্জড নেম, মুম্বাইয়ের ছবি এসফেরা, পশ্চিমবঙ্গের ছবি একদিনের স্বাধীনতা, পশ্চিমবঙ্গের ছবি বুনাই সে নাম, পশ্চিমবঙ্গের ছবি আবিদ, আসামের ছবি লিফট উইথআউট গ্র্যাভিটি, পশ্চিমবঙ্গের ছবি নির্লিপ্ত, পশ্চিমবঙ্গের ছবি ভ্রাগ, পশ্চিমবঙ্গের ছবি ইচ্ছে, জোকার, অচিন পাখি, হ্যালো ফর্ম দ্য আদার সাইড, দ্য সেভেন পেজ লেটার, চা, খাঁচা, মারিয়া, মাস্ক, মোবাইল, সাউন্ড অফ সোওল, অপরাধী কে, অদ্ভূতুড়ে, দ্য টার্ন, এ শর্টফিল্ম, ছেদ, কৃষ্ণপক্ষ, পরাজয়, তাৎপর্য প্রভৃতি। আন্তর্জাতিক শর্টফিল্ম এন্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশের ছবি যেমন রিভোল্ট, সাদা স্বপ্ন, দ্য ফ্ল্যাগ, লাইট অ্যান্ড শ্যাডো, কোয়শ্চেন মার্ক, চৈতন্য, অনুশোচনা, মাদার ল্যান্ড প্রভৃতি।   



ডকুমেন্টারি ফিল্ম যেমন মধ্যপ্রদেশের ডকুমেন্টারি ফিল্ম নাসোর, পশ্চিমবঙ্গের ডকুমেন্টারি বাহা শরহুল ক্রুশাদের অ্যাগেইনস্ট ডিফোরেস্টেশন, লাইট ফর সাইট, রাঙামাটি ইন দ্য ব্লাড সেভেন্টি ওয়ান, দ্য গুলস অ্যান্ড দ্য সি। মিউজিক ভিডিও যেমন পশ্চিমবঙ্গের মিউজিক ভিডিও আনসার্টেন, নীল পাখি, একটা শুধু কন্যা, যাযাবর পাখি, মিউজিক্যাল পোয়েট্রি বৈশাখের গল্প। এছাড়াও অ্যাড ফিল্ম সেকশন জেএনএইচ বাংলাদেশ (ফ্যামিনিস্ট)। ফেস্টিভ্যালস্ মিট দ্য আদার ওয়ে, সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড (উইন্টার ফ্যাশন ২০১৯), জেএনএইচ বাংলাদেশ (ট্রাভেলিং)। ট্রেলার সেকশন হিসেবে জোকার, গে গল্প প্রভৃতি। স্পেশাল স্ক্রিনিং হিসেবে প্রদর্শিত হয় সুর ও অসুরো কথার ট্রেলার, সুচেতনা নামের একটি মিউজিক্যাল পোয়েট্রি, হট ওয়াটার ব্যাগ নামের একটি শর্টফিল্ম ও আগত বাংলা ছবি ছায়ামূর্তির ট্রেলার। 
   
সবমিলিয়ে দূর্দান্ত এক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মুখীন হয়েছিল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ 'ভারতসভা'। হাজার হাজার মানুষের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় ব্যাপকভাবে সাড়া জাগায় এই চলচ্চিত্র উৎসব। আগামী বছরে আরো বৃহৎ স্কেলে আয়োজিত হবে 'হট্টমেলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব'। 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক



                                                                                              

No comments