নিঃশব্দে 'নন্টে-ফন্টে'র পঞ্চাশ বছর পূর্তি। অথচ বাঙালির মধ্যে সেই উন্মাদনা কোথায়?
দেখতে দেখতে পঞ্চাশটা বছর অতিক্রম করে ফেললো বাঙালির জনপ্রিয় কমিক্স 'নন্টে-ফন্টে'। বইয়ের পাতায় কার্টুন চিত্রে 'নন্টে-ফন্টে' কমিক্স আজও বাঙালি সমাজে চিরন্তন। শৈশবে আমরা 'নন্টে-ফন্টে' টিভিতে দেখতাম। কী মজাই না হতো এই কমিক্স চরিত্রদের দেখে। সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথের অমর সৃষ্টি হলো 'নন্টে-ফন্টে'। বাঙালি বাড়ির ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের আজও সমান মজাদান করে 'নন্টে-ফন্টে'। প্রাণখুলে হাসতে চাইলে 'নন্টে-ফন্টে'র জুড়ি মেলা ভার।
বাংলার শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রতিটি জায়গায় সমান জনপ্রিয় 'নন্টে-ফন্টে'৷ এখনও অনেক টিভি চ্যানেলে 'নন্টে-ফন্টে' প্রতি রবিবার দেখানো হয়। আর ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে 'নন্টে-ফন্টে'র প্রায় সকল গল্পই রয়েছে। এই কমিক্সের নন্টে-ফন্টে চরিত্র দুটো বেশ হাস্যকর তার থেকেও আরো বেশি হাস্যকর কেল্টুদা। সকাল থেকে রাত যার দস্যিপনা চলতে থাকে। দিনের শেষে মাস্টারমশাই এর কাছে কখনো বেতের বাড়ি খায় সে আবার কখনো মাস্টারমশাই তার ওপর ফুলদানি ছুঁড়ে মারে। নন্টে-ফন্টে পর্যন্ত তাকে জব্দ করতে ছাড়েনা। কখনো তাকে নকল বাঘ সেজে প্রবলভাবে ভয় দেখায়। কেল্টুটা হাজার চেষ্টা করেও নন্টে-ফন্টেকে শায়েস্তা করতে পারেনা। নন্টে-ফন্টের সাথে কেল্টুদার দুষ্টুমি চললেও তাদের মধ্যে গভীর বন্ধু অটুট থাকে।
কচিকাঁচা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই পছন্দ করেন 'নন্টে-ফন্টে'। চলতি বছরে পঞ্চাশ বছরে পা দিল 'নন্টে-ফন্টে'। ১৯৬৯ সালে 'কিশোর ভারতী' পত্রিকায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছিল 'নন্টে-ফন্টে'। প্রায় পঞ্চাশ ধরে যত্ন সহকারে নিজের হাতে ছবি এঁকে ও গল্প লিখে সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ জীবন্ত করে তুলেছেন 'নন্টে-ফন্টে' কমিক্সকে। নারায়ণ দেবনাথের গবেষক শান্তনু ঘোষ তাঁর প্রতিটি কমিক্স নিয়ে গবেষণা করছেন।
সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথের বর্তমান বয়স ৯৫ বছর। তাঁর অমর সৃষ্টি 'নন্টে-ফন্টে' পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলো। যেটা বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। কিন্তু 'নন্টে-ফন্টে'র পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হবার পরও তাঁর খোঁজ নিতে ও তাঁর সাথে দেখা করতে কেউ আসেননি। একমাত্র কমিক্স গবেষক শান্তনু ঘোষ এগিয়ে আসেন। তিনি তাঁর বাড়িতে গিয়ে 'নন্টে-ফন্টে'র পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কেক কেটে পঞ্চাশ বছর পূর্তি উদযাপন করেন।
'নন্টে-ফন্টে'র পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গে কমিক্স গবেষক শান্তনু ঘোষ লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান যে "প্রথম কথা আপনি যেটা লক্ষ্য করবেন সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় কমিক্সকে নিয়ে যে উন্মাদনা আছে, পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে সেটা কখনোই থাকেনি৷ সম্প্রতি যেমন একটা ঘটনা হয়েছে যে অ্যাসটেরিক্স কমিক্সের ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে যেটা নিয়ে কভার স্টোরি করা হয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে অ্যাসটেরিক্স কমিক্সের ৬০ বছর হয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে তার বাজার, তার বিক্রি। এমনকি তার সেলিব্রেশন হয়। ওদের ওখানে এটা নিয়ে সেমিনারও হয়। বেলজিয়ামে এটার এক্সিবিশন হয়, এটার মিউজিয়াম আছে, এটা নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে পুতুল বিক্রি করা হয়। এখানে অনেক রকম বাণিজ্যিক এবং ইনভলভমেন্টটা অনেক বেশি৷ এখানের মানুষ অনেক বেশি সতর্ক ও আগ্রহী৷ বেলজিয়াম থেকে অ্যাসটেরিক্স বের হয়, ফ্রান্স থেকে টিনটিন বের হয়। এদের একটা বিরাট বড়ো মার্কেট রয়েছে। ওখানে একটা কমিক্স বানানোর জন্য বড়ো একটা টিম কাজ করে। কেউ একজন লেখে, কেউ একজন আঁকে। আর তার বাজার হচ্ছে অনুবাদের মার্কেট যা সারা পৃথিবী জুড়ে বিক্রি হয়। ফ্রেঞ্চ থেকে টিনটিন ত্রিশ-চল্লিশটা ভাষায় অনুবাদ হয়ে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কোনো একটা কোম্পানির মাধ্যমে সারা পৃথিবী জুড়ে তার মার্কেট ছড়িয়ে পড়ে ৷
এখানে দুটো ব্যাপার এক নন্টে-ফন্টে একটি রিজিওনাল কমিক্স তার মার্কেট শুধু রিজিওনালনেসির ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে সারা পৃথিবীর সঙ্গে তো তুলনা করা যাবেনা ৷ এটাই হচ্ছে ঘটনা। তিনি যখন একটা প্রান্তিক এলাকা হাওড়াতে বসে একটা মানুষ যখন একা একা ছবি আঁকছেন, একা একা গল্পও লিখছেন, আবার একা একা রঙ করছেন, আবার একা একা বইয়ের যে কভারটা হয় সেটাও তিনি নিজে করছেন। তারপর পঞ্চাশ বছর ধরে একটা কমিক্স নিয়ে একাধিক প্রজন্মকে খুশি দিয়েছেন। এটা তো আরো বড় খবর৷ মানে প্রসঙ্গত কথা হচ্ছে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে কর্পোরেট অ্যাক্টিভিটি তো হবেই৷ কিন্তু কোনো একটা গ্রামে যদি এমন একটা অ্যাক্টিভিটি হয় যেটা কর্পোরেট অ্যাক্টিভিটির মতো সমান পোটেনশিয়াল, এটাই তো খবর ৷ খবর কাকে বলে? একটা কুকুর যখন একটা মানুষকে কামড়ায় সেটা খবর হয়না। যদি বাইচান্স একটা মানুষের বেসিক ঘটনা সেটাই তো হচ্ছে খবর৷ এটাই হচ্ছে আসল খবর। সেটা নিয়ে সত্যিই যদি কোনো মানুষের মাথাব্যথা আছে, মানুষ কী সচেতন হয়েছে। এই যে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে প্রচার করা হয় আপনারা যত্রতত্র জল ছড়াবেন না, বাড়ির চারপাশ পরিস্কার রাখুন৷ রাত্রে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোন৷ মানে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এবার পোলিও টিকা, পোলিও খোরাক অমিতাভ বচ্চনকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হচ্ছে, টিভিতে বিজ্ঞাপন হচ্ছে, পাড়ায় পাড়ায় ক্যাম্প হচ্ছে। সরকার বিরাট পরিমাণ টাকা খরচা করেছে। আর কমিক্স নিয়ে তো সেই আন্তরিকতাটা আমাদের মধ্যে নেই৷ এটা কে করবে? এই প্রশ্নটা আমি পাঠকের কাছে রাখতে চাই। এটাই হচ্ছে বড়ো প্রশ্ন।
এজমেন্ট ফাউন্ডেশন টিনটিনের বই প্রকাশ করে। আর এখানে আমরা কারা করবো? এখানে প্রকাশকের গণ্ডি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে শুধু সীমাবদ্ধ। তারা বাংলা ভাষার প্রকাশক৷ খুব বেশি হলে ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে খুঁচখাঁচ দিল্লি বা ব্যাঙ্গালোরের বাঙালিরা বাংলা বই পায়৷ কিন্তু সচেতনতা এই লোকটাকে সারাজীবন আনন্দ দিয়েছে। তিনি এতো আনন্দ দিয়েছেন যে আমাদের ছোটোবেলাগুলো বদলে গিয়েছে। তিনি বেঁচে আছেন। তাঁর বয়স আজকে ৯৫ বছর৷ আমরা কী তাঁকে কোনো আনন্দ দিতে পারিনা? 'নন্টে-ফন্টে'র সেলিব্রেশনে আমি একা ৷ আমি একটা বড়ো কেক আর ফুলের তোড়া নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম একা। উনি খুব খুশি হয়েছিলেন৷ ওনার পাঠকদের মধ্যে থেকে প্রিয় পাঠক যাকে চেলা হিসেবে ভালোবাসেন সে একটা বিরাট বড় কেক নিয়ে তাঁর বাড়ি গেছে।
আমি সারাদিন প্রচুর ব্যস্ত থাকি। একমাত্র উইকেন্ডে পরিবারকে সময় দিতে পারি। সেই উইকেন্ডেই পরিবারের সাথে সময় কাটানো বাদ দিয়ে একজন ৯৫ বছরের বৃদ্ধের জন্য কেক নিয়ে গেলাম৷ সেখানে পঞ্চাশ বছর সেলিব্রেশনের কেকটা কাটা হলো। কেকটা তো সামান্য উপলক্ষ্য মাত্র৷ এই মানুষটাতে ছুঁতে চলা বা এই মানুষটাকে বলা যে আপনি আমাদের ছোটোবেলাটাকে ভরিয়ে দিয়েছেন, আপনি এখনও আমাদের হৃদয়ে বাস করেন৷ এই কাজটা আমি ছাড়া তো আর কেউ করলো না ৷ এটা কোথাও অহংকার নয়, এটা হচ্ছে অভিমান৷ আর কেউ কী যাবেনা? তাকে নিয়ে কী কেউ বলবে না আপনাকে প্রণাম করি, আপনি আমাদের ছোটোবেলাটা এতো সুন্দর করে দিলেন। একটা ৯৫ বছরের মানুষের জীবনে আর কী চাই? একটু স্বীকৃতি, একটু ভালোবাসা। সে তো যা সম্মান পাবার পেয়ে গেছে। কেউ কিন্তু আর বলেনি এই যে নন্টে-ফন্টের পঞ্চাশ বছর পূর্তির একটা কেক কাটবো, তাঁকে একটু মিষ্টি খাওয়াই। উনি কিন্তু মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসেন৷
কেউ কোনো খবরও নেয়না৷ আমি কেক কাটার পর দ্বিতীয় কেউ তো আর এলোনা কেক কাটতে। আমি কেক কেটেছি বলে যে এটা আমার প্রচার তা কিন্তু নয়। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কেন এলোনা? এটাই তো অভিমান। এ কথাটা কিন্তু উনিই বলেছেন যে শান্তনু তুমি ছাড়া তো আর কেউ এলোনা। এই যে একটা দুঃখ নিয়ে তিনি চলে যাবেন। তারপর উনি চলে যাবার পর আমরা বলবো শতবর্ষে নারায়ণ দেবনাথ। এই ন্যাকামোগুলো না করলেও চলে৷ এগুলো ন্যাকামি নাকি অন্য কিছু বলা যেতে পারে। আমি আমার যা বক্তব্য তাই ইমোশনালি বললাম আপনাদের।"
প্রতিবেদন- সুমিত দে
sumit babu, ami dekha karte chai. ki bhabe jabo? onar address ta deben?
ReplyDeleteআপনার ফোন নাম্বারটা আমাদের ইমেল literacyparadise@gmail.com এ পাঠান আমরা যাবো সন্মাননা দিতে আপনিও যেতে পারেন আমাদের সাথে।
DeleteAmio jete chai onar sathe dekha hole bhalo lagbe
ReplyDeleteসত্যি সরলতা দিয়ে বাঙালীদের মনে ছোটবেলার স্মৃতি কে মুছে ফেলতে দেন নি,আজও মাঝে মাঝে হাসালে নণ্টে,ফন্টে,কেল্টুরাম এরাই হাসায়।ধন্যবাদ।
ReplyDelete❤️🥰☺️
ReplyDeleteNarayan gangopadhya is the creator of Nantes Fonte ,happy birthday sir
ReplyDeleteNarayan debnath .... not narayan gangopadhya
Deleteআমি একজন সাংবাদিক ওনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চায় দয়া করে একটু যোগাযোগ করবেন।
ReplyDelete9775784979 এই নম্বর এ একটু মেসেজ করলে খুবই উপকৃত হতাম।
আমি এই বছর উচ্চমাধ্যমিকের পরেই যেতে চাই..কারণ আমি পরীক্ষার্থী..কিভাবে যাবো..কোথায় ঠিকানা..কেউ বললে খুবই উপকৃত হব..আগাম ধন্যবাদ
ReplyDeleteThik bolechen...adress ta pls
ReplyDeleteBole deben. Apner eii kajer janno amra jante parlam, asha kori jeteo parbo. Tahole uni aro khushi hoben. Pls address me.
SOTTI SAI SOB DIN GULI R IRBE NA ,EKHON KAR GENERATION ESOB R KI BUJBE ,SOTTI ONAR TULONA HOY NA.........BHASKAR SAHA
ReplyDeleteআমাদের ছোট থেকে বড় হওয়া...বাটুল দি গ্ৰেট, হাঁদা-ভোদা,নন্টে-ফন্টেকে সাথে নিয়ে। বার্ধক্যে পৌঁছে আজও তার সৃষ্টি মনকে আনন্দে ভরিয়ে রাখে। ছোটবেলা থেকে বই সংগ্ৰহের তালিকায় এই তিনটি কমিক্সের স্থান ছিল সর্বপ্রথম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকাল শিশুদের জীবনে এই আনন্দের ছোঁয়া স্পর্শ করে না। দুর্ভাগ্য শিশুদের এক অনাবিল আনন্দের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত।
ReplyDelete"নন্টে-ফন্টের" ৫০তম জন্মদিনে নারায়ণ দেবনাথ মহাশয়কে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই����
সুমিতবাবু যদি দয়া করে আমাকে একটু জানান কবে আপনারা যাবেন। আমি রাঁচিতে থাকি, জানতে পারলে সেই ভাবে সময় বার করতে পারি।
ReplyDelete