Header Ads

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন || স্মরণে বীর বিপ্লবী নির্মলজীবন ঘোষ


স্বাধীনতা আসতে তখনও কিছু বছর অপেক্ষমান। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্তে রাঙা হয়ে উঠছে বাংলা তথা পুরো দেশের মাটি। একে একে ফাঁসির দড়িতে বিপ্লবীরা গলিয়ে দিচ্ছে গলা। মৃত্যু যেন ভয় পেয়ে উঠছে সংগ্রামীদের সাহসকে। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে হবে এমনই প্রতিজ্ঞা ঘুরছে দেশের ঘরে ঘরে। ক্ষুদিরাম বসু, কানাইলাল, রামকৃষ্ণ রায়, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, মাস্টারদা, নির্মলজীবন ঘোষ সহ অসংখ্য বাংলার দামাল ছেলে দেশের জন্য প্রাণদান করতে দ্বিধা বোধ করল না। হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি পরে দেশের জন্য জীবন বিসর্জন দিল। তাদের রক্তেই লেখা হলো ভারতের স্বাধীনতা। 


শহিদদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ। একথা যে মিথ্যে হয়না তার প্রমাণ যুগে যুগে আমরা পেয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমানে ভারতে প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কী যথেষ্ট সম্মান পেয়েছে? যার সহজ সরল উত্তর হলো 'না'। আজকে ৫ ই জানুয়ারি, কী জন্য বিখ্যাত? এটা কেউ জানেনা। মাত্র আঠারো বছর বয়সে বাংলার দামাল ছেলেটার দেশের জন্য জীবনদীপ নিভে গেল। তাঁকে কী আমরা কেউ মনে রেখেছি? মনে রাখার প্রয়োজনটুকু বোধ করিনি কেউই। আজ শহীদ নির্মলজীবন ঘোষের ১০৪ তম জন্মদিবস। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন তিনি৷ 

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত হুগলীর ধামাসিনে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী নির্মলজীবন ঘোষ। তাঁর পুরো পরিবার জড়িত ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য। মেদিনীপুর কলেজের আই.এ ক্লাসের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি গোপনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে যোগ দেন। কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে গুলি করে হত্যা করার পরিকল্পনার কাজে জড়িত থাকার জন্য বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। এরপর মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। 
    
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২ রা সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে পরিকল্পনা মাফিক গুলি করে হত্যা করা হয়। বার্জ সাহেব মৃত্যুর আগে মাঠে বসে ফুটবল খেলা দেখছিলেন। মেদিনীপুর ক্লাবের সাথে সেদিন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবল খেলা চলছিল। এই মাঠ খেলা থেকে ঐদিন রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করেছিল। বার্জকে গুলি করার সাথে সাথেই তিনি প্রাণ হারান। অন্যদিকে উত্তেজিত ব্রিটিশ পুলিশের সাথে বিপ্লবীদের পাল্টা গুলির লড়াই চলতে থাকে। বিপ্লবীদের ক্ষমতার কাছে ব্রিটিশ শক্তি ২ রা সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরে কলেজ মাঠে পরাস্ত হয়েছিল। 

বার্জ হত্যার বিচার শুরু হয় কিছুদিনের মধ্যে। সকল বিপ্লবী গা ঢাকা দিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন৷ যদিও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়৷ ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মল জীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সনাতন রায় ও সুকুমার সেন সকলে গ্রেপ্তার হন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসা হয় ষড়যন্ত্রের মামলা। যে মামলার ভিত্তিতে ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মল জীবন ঘোষের মৃত্যুদণ্ড হয়। বাকীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে দীপান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। 

আজকে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে পা রাখলে তাদের কথাই বারবার মনে আসতে পারে। এখন আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক। ২ রা সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর কলেজ মাঠ এখন শান্তিতে আসীন থাকে। অথচ ইতিহাসের দিকে তাকালে ভেসে ওঠে যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।

No comments