Header Ads

নন্দলাল বসুর হাতের ছোঁয়াতে কেতাদুরস্ত হয় ভারতীয় সংবিধান পুস্তক


আপনি কী জানেন? ভারতবর্ষের সংবিধানের নকশা কে করেছিলেন? অনেকেই হয়তো জানেন না যে ভারতের সংবিধানের নকশা করেছিলেন একজন বঙ্গসন্তান। তিনি হলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পাশাপাশি চিত্রশিল্প, সংগীত, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সবদিক থেকেই ভারতে এগিয়ে বাঙালি সমাজ। ভারতের জাতীয় সংগীত যেমন লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারতে নির্বাচনের জন্য প্রথম ইলেকশন কমিশন সিস্টেম নিয়ে আসেন সুকুমার সেন। ইন্ডিয়ান আর্মির প্রতিষ্ঠাতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতের প্রথম শক্তিশালী বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আবিষ্কার করেন ডঃ শান্তনু ভৌমিক। আরো হাজারো বাঙালি বঙ্গসন্তান রয়েছেন যারা ভারতের গর্ব।


২৬ শে জানুয়ারি, ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি সংবিধান রচনার মাধ্যমে ভারতের মেরুদণ্ড গঠন করা হয়। ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর লেখেন ভারতের সংবিধান। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করে। দেশতো স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা, নিয়ম-কানুন ঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট সংবিধান প্রয়োজন। তাই এই সংবিধান বানানোর জন্য দেশের মন্ত্রীসভার মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। সংবিধান শুধু লিখে রাখলেই হবেনা, তাকে পুস্তক আকারে সংসদ ভবনে সংরক্ষণ করতে হবে। ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর পুস্তক আকারে লিখলেন।  


প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ভাবনা-চিন্তা করছেন সংবিধানে নতুন আর আর কী কী রাখা যেতে পারে। তখন তাঁর মাথায় ভেসে আসে সংবিধান পুস্তকের ক্যালিওগ্রাফি বা অলঙ্করণের কথা। তিনি ভাবলেন এ কাজটা কাকে দিয়ে করানো যেতে পারে? সবশেষে চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর কথা তাঁর মনে আসে। তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছেন। সেই সূত্রে নন্দলাল বসুর সাথে জওহরলাল নেহেরুর পরিচয় হয়েছিল। তাছাড়াও চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁকে সকলে এক নাম এক ডাকে জানতেন। 

নন্দলাল বসুকে জওহরলাল নেহেরু ডেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সংবিধানে নকশা করার প্রস্তাবে তিনি রাজি হয়ে যান। এরপর নন্দলাল বসু নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলনে ক্যালিওগ্রাফির কাজ সম্পন্ন করেন৷ মোট ২২ টি চিত্র অঙ্কন করেছিলেন তিনি। ছবির বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান দেওয়া হয় ভারতীয় সংস্কৃতিকে। রামায়ণ, মহাভারতের ঘটনাবলী, সিন্ধু সভ্যতা, মোগল, গৌতম বুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলন, টিপু সুলতান, সম্রাট অশোক, আকবর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধীর ছবি জায়গা করে নেয় সংবিধানের পৃষ্ঠাতে পৃষ্ঠাতে ৷ ছবি এঁকে ও ইংরেজিতে ক্যালিওগ্রাফি করে ভারতীয় সংবিধান পুস্তককে অনবদ্য করে তুলেন। 


আজকে দেশজুড়ে গণতন্ত্র দিবস উদযাপন হচ্ছে। ভারত সরকার বিভিন্ন জায়গায় কুচকাওয়াজের ব্যবস্থা করেছে। অথচ নন্দলাল বসুকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। ভারত সরকার নন্দলাল বসুর নাম একবারও উচ্চারণ করেনি। দেশজুড়ে মেকি দেশপ্রেমের বন্যাতে হারাতে বসেছে অজস্র বঙ্গসন্তানের নাম। অনেকেই হয়তো গণতন্ত্র দিবস নিয়ে একদিনের জন্য লোকভোলানো দেশপ্রেমিক হয়ে যাবেন। তারা সংবিধান নিয়ে বড়ো বড়ো বক্তব্য রাখবে অথচ দেখা যাবে অর্ধেকের বেশি মানুষ ভালো করে দেশের সংবিধানটাই পড়েনি। তার থেকেও বড়ো কথা অনেকেই তারা সংবিধান পরিবর্তনের কথাও বলে বসবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সংবিধান গড়ে উঠলেও ভারতের কোনো সরকারই কখনো সঠিকভাবে ভারতের সংবিধান মানেনা। উল্টে ভারতের সংবিধান বিরোধী নানান কার্যকলাপ করে থাকে। তাই দেশের মানুষদের প্রতি অনুরোধ আপনার ভারতের সংবিধানকে ভালোভাবে পড়ুন ও জানুন। অন্যদেরকেও পড়ানোর অনুরোধ জানান। সাথে সাথে নন্দলাল বসুর মতো মানুষদের অবদানকেও জনসমক্ষে তুলে ধরুন।

No comments