Header Ads

নেতাজী গবেষক তথা মিশন নেতাজীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চন্দ্রচূড় ঘোষের সাক্ষাৎ কার


'কোনানড্রাম' বইয়ের লেখক ও মিশন নেতাজীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চন্দ্রচূড় ঘোষের সাক্ষাৎ কার।

লিটারেসি প্যারাডাইস- নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কীভাবে অন্তর্ধান হয়েছেন বলে আপনার মনে হয়? বিমান দুর্ঘটনা কী সত্যিই হয়েছিল?

চন্দ্রচূড় ঘোষ-  দেখুন বিমান দুর্ঘটনার কথা প্রচারিত হয় ১৯৪৫ সাল থেকেই।কিন্তু সেটা কেউই বিশ্বাস করেনি। তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি৷অনেক তদন্তই হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনার পরে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা তদন্ত করেছেন, আমেরিকান গোয়েন্দারা তদন্ত করেছেন। কিন্তু কন্ট্রোসিভ এভিডেন্স যেটাকে বলে সেরকম কোনো এভিডেন্স বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এবং সেই নিয়ে নানারকমের মতবিরোধ থাকে কিন্তু ১৯৫৫ সালে প্রথম তদন্ত কমিটি গঠন করে ভারত সরকার তিনজন সদস্যের। শাহানাওয়াজ খান কমিটি ছিল সেটা। শাহানাওয়াজ কমিটিতে রায় দেয় যে বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটিরই এক সদস্য নেতাজীর বড়ো দাদা সুরেশচন্দ্র বসু তিনি ডিসেন্টিয়ান রিপোর্ট দেন। তিনি লেখেন যে এরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীকালে সুরেশচন্দ্র বসু জওহরলাল নেহেরুকে চিঠি লেখেন৷ চিঠি লিখে জানতে চান আপনি যে বলেছেন নেতাজীর এরকম মৃত্যু হয়েছে, আপনি তাহলে আমাকে প্রমাণ দিন৷ যদি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েই থাকে, তাহলে সেই প্রমাণটা আমাকে দিন৷ তখন জওহরলাল নেহেরু ওনাকে চিঠি লিখে জানান বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন প্রমাণ আমার কাছে নেই। কিন্তু সারকামস্ট্যান্সেসিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে এটাই মনে হয়েছে যে উনি মারা গেছেন এবং তিনি যদি বেঁচেই থাকতেন তাহলে নিশ্চয় দেশেই ফিরে আসতেন৷ যেহেতু তিনি আসেননি, সেহেতু আমরা ধরে নিচ্ছি উনি মারা গেছেন।মানে গোটা ব্যাপারটাই একটা অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।কোনো তথ্য, কোনো প্রমাণ কিছু পাওয়া যায়নি। এবং যারা প্রতক্ষদর্শী বিমান দুর্ঘটনার তাদের কথাবার্তার মধ্যেও এতো অন্তর বিরোধ, এতো বিরোধ একে অপরের প্রতি যে সেটাকে বিশ্বাস করাই যায়না। মেনে নেওয়া যায়না৷ এরপর আরো একটি তদন্ত কমিশন হয় ১৯৭০ সালে জেডি খোসলা কমিশন৷ সে কমিশনেও একই কথা বলে শাহনাওয়াজ কমিশন যে কথা বলেছিল এবং সেটাতেও কিন্তু গোটা ব্যাপারটার সমাধান পাওয়া যায়না।এর ফলস্বরূপ হাইকোর্টে একটা মামলা করা হয়। কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৯৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয় যে সত্যিই এর কোনো প্রমাণ নেই৷ যা কিছু প্রমাণ বলে তুলে ধরা হয়েছে তাতে এতো পার্থক্য রয়েছে যেগুলো একদমই গ্রহণযোগ্য নয়৷ সেই মামলায় ভারত সরকারও কিন্তু বলে যে শাহনাওয়াজ কমিটির রিপোর্ট এবং খোসলা কমিশনের রিপোর্টে যা লেখা আছে, যা প্রমাণ বলে ধরা হয়েছে, তাতে অনেক ফাঁক রয়েছে।সেটাকে একদমই গ্রহণযোগ্য এভিডেন্স বলে মেনে নেওয়া যায়না৷ তখন হাইকোর্ট অর্ডার দেয় আরো একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার৷ তার ভিত্তিতে বা রায়ের ভিত্তিতে জাস্টিস মুখার্জি কমিশন গঠন করা হয়৷ জাস্টিস মুখার্জি কমিশন বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বিমান দুর্ঘটনার গোটা ব্যাপারটাই সাজানো এবং নেতাজীর তাতে মৃত্যু হয়নি৷ তাকে এটাও খুঁজে বের করতে বলা হয়েছিল যে নেতাজীর মৃত্যু যদি না হয়ে থাকে তাহলে তিনি কোথায় গেলেন? তার কোনো প্রমাণ বা কোনো সন্ধান জাস্টিস মুখার্জি দিতে পারেননি৷ তিনি বলেন যে উনি রাশিয়া যাবার জন্য প্ল্যান করছিলেন এবং সেটুকুই বলা যায় একদম সুনির্দিষ্ট ভাবে৷ কিন্তু তার পরে কী হয়েছিল? সেটা বলা যাচ্ছেনা কারণ কোনো কাগজপত্রও সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি৷ কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি৷ কোনো প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছেনা যে কী হয়েছে? ফলে সরকারি ভাবে সেই রিপোর্টটিকে রিজেক্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এটাই প্রমাণ হয়ে যায় যে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ব্যাপারটা সাজানো৷ সেখানে কোনো দুর্ঘটনাও হয়নি আর তার মৃত্যুও হয়নি। ফলে প্রশ্ন থেকেই গেছে যে তাহলে তাঁর কী হলো? এরপরে আমরা যে রিসার্চ করেছি গত পনেরো বছর ধরে।আমরা রিসার্চ করে যা প্রমাণ পেয়েছি তাতে আমরা দেখেছি নেতাজী হয়তো সেখান থেকে রাশিয়া চলে গিয়েছিলেন।রাশিয়া থেকে উনি চাইনাতে আসেন৷সেখান থেকে তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন৷ এবং ভারতবর্ষে ফিরে এসে তিনি ১৯৮৫ সাল অবধি ভারতবর্ষে শেষ জীবন কাটান ৷  
           
                                                                                                                                                    
লিটারেসি প্যারাডাইস- গুমনামী কী সত্যিই নেতাজী ছিলেন?

চন্দ্রচূড় ঘোষ- গুমনামী কি সত্যি নেতাজী ছিলেন সবরকম প্রমাণ একসঙ্গে দেখলে আমাদের সিদ্ধান্ত এটাই যে হ্যাঁ গুমনামী বাবা বলে যাকে বলা হয় তিনিই নেতাজী। এখন এই গুমনামী ব্যাপারটা গুমনামী নামটা এটা উত্তর প্রদেশেরএকটা লোকাল মিডিয়ার দেওয়া বা লোকাল পুলিশের দেওয়া। উনি যেখানে ছিলেন সেখানে কোনো নাম বলতেন না। তাঁকে নানা রকম নামে ডাকা হতো কেউ অনন্ত বলতেন কেউ পদ্মেবালা বাবা বলতেন এবং তাঁর শিষ্যরা বা অনুগামী যারা ছিলেন তারা ওনাকে ভগবানজী বলে সম্বোধন করতেন। তো গুমনামী নামটা আসে ১৯৮৫ তে তাঁর মৃত্যু হওয়ার পরে। যখন ওনার কোনো নাম পাওয়া যায়নি তখন অশোক ট্যান্ডন ওখানকার বিখ্যাত জার্নালিস্ট তিনি ঐ নামটা দিয়েছিলেন যে গুমনামী যেহেতু ওনার কোনো নাম নেই তাই গুমনামী। সেই নামটা টিকে গেছে। প্রথমে অনেকের মনে হয় নেতাজী এরকম বাবা হয়ে থাকতে যাবেন কেন তবে গুমনামী বাবা উনি নিজেকে কখনও বলতেন না যে আমি গুমনামী বাবা।এই নামটা পরে অন্য লোকের দেওয়া।উনি থাকতেন গোপনে এবং নানা রকম কার্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিন্তু উনি নেতাজী ছিলেন এখনও পর্যন্ত আমরা যা প্রমাণ পেয়েছি। এবার প্রমাণ কী বা কী ধরণের প্রমাণ? নানারকম প্রমাণ সেগুলোকে একসঙ্গে দেখতে হবে। প্রথম প্রমাণের কথা বলবো যে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর যারা সহযোগী, দীর্ঘজীবনের সহযোগী ছিলেন তারা এই গুমনামী বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন দীর্ঘ দুই তিন দশক ধরে এবং তাদের মধ্যে অগ্রগণ্যা যারা ছিলেন তাঁরা হলেন লীলা রায়, পবিত্র মোহন রায়। লীলা রায় সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে কাজ করতেন প্রায় ১৯২৩ সাল থেকে যখন উত্তরবঙ্গে প্রবল বন্যা হয়েছিল সে সময় থেকে একসাথে কাজ করছেন। এবং ধীরে ধীরে ওনার অতি ঘনিষ্ট সহযোগী হয়ে ওঠেন লীলা রায়। পরবর্তী কালে লীলা রায়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়, সেই অনিল রায়।এরা খুব-ই ঘনিষ্ট ছিলেন এবং খুব কাছে থেকে কাজ করেছেন। তার পর সুভাষ বসু যখন ফ্লরোয়ার্ড ব্লক গঠন করেছেন তখন লীলা রায় বা অনিল রায় তাদের একদম প্রথম সারির নেতা, সংগঠক। অনিল রায়ের মৃত্যু হয় ১৯৫০ সালে ফলে ওনার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়নি। তবে লীলা রায় যতদিন বেঁচে ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ অবধি তার সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।তারপর ছিলেন পবিত্র মোহন রায়। পবিত্র রায় আজাদ হিন্দ ফৌজের সিক্রেট সার্ভিস যেটা তার একজন গুপ্তচর। পবিত্র মোহন রায় সাউথ ইস্ট এশিয়াতে যাওয়ার আগে উনি নেতাজীর কার্যকলাপের সাথে পরিচিত ছিলেন এবং মিটিং মিছিল এসবের সাথে জড়িত থাকতেন।নেতাজী ভারতে থাকাকালীনই তিনি নেতাজীর পরিচিত ছিলেন।কিন্তু সাউথ ইস্ট এশিয়াতে নেতাজী পৌঁছানোর পর তারপরে পবিত্র মোহন রায় নিজে সাউথ ইস্ট এশিয়া চলে যান কারণ এখানে পুলিশ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল গ্রেপ্তার করার জন্য।তো ঐ সময় তিনি কিছু সময়ের জন্য সাউথ ইস্ট এশিয়াতে চলে যান।তিনি সাউথ ইস্ট এশিয়াতে যাওয়ার পর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ফলে তিনি আর ফিরে না এসে ওখানেই থেকে যান।নেতাজী যখন ওখানে পৌঁছান তখন নেতাজী ওনাকে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে রিক্রুট করেন। এবং নেতাজী নিজে হাতে তাকে সিলেক্ট করে ভারতে পাঠান একটা গোপন মিশনে, পাঁচজনের একটা টিমকে পাঠান পবিত্র মোহন রায় তার লিডার ছিলেন। ফলে পবিত্র মোহন রায় খুব, খুবই কাছের লোক ছিলেন অন্তত সাউথ ইস্ট এশিয়াতে নেতাজীর খুব শেষের দিকের কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। তারপর ছিলেন সুনীল দাস তিনি ছোটো থেকেই জড়িত তিনি বিপ্লবী দলের সাথে ছিলেন এবং নেতাজীকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। তারপর ছিলেন অনিল দাস যিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন সৈনিক তিনি জড়িত ছিলেন, তিনি গিয়ে দেখে এসেছেন তাঁর বাবাজীর সাথে যোগাযোগ ছিল। তারপর ছিলেন কমলাকান্ত ভট্টাচার্য তিনিও একজন বিপ্লবী। তারপর সন্তোষ মোহন ভট্টাচার্য আর একজন বিপ্লবী। তারপর আর একজন বিপ্লবী ছিলেন বিশ্বনাথ রায়। তো এই পুরানো বিপ্লবী দলের লোকজন যারা সারা জীবন কাজ করেছেন সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ট ভাবে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা কিন্তু সবাই এক কথায় মেনে নিয়েছিলেন। রেগুলার চিঠির আদান প্রদান হতো তাঁদের সঙ্গে, তাঁরা বছরে অন্তত দুবার করে গিয়ে দেখা করতেন তাঁর সাথে, তাঁর যা যা প্রয়োজন ছিল সেই জিনিসপত্র নিয়ে যেতেন। এটা হচ্ছে এক ধরণের প্রমাণ।আর এক ধরণের প্রমাণ হচ্ছে যেটাকে আমরা বলি ফরেন্সিক এভিডেন্স। মুখার্জী কমিশন যখন চলছিল তখন মুখার্জী কমিশন কিছু দাঁত খুঁজে পায় ভগবানজী বা গুমনামী বাবা যেখানে থাকতেন সেখানে তাঁর জিনিসপত্রের মধ্যে থেকে। তো সেই দাঁতের ডিএনএ টেস্ট করান ও তাঁর লেখা তাঁর নানান চিঠিপত্রে যে লেখা পাওয়া যায় তার হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিস করান। হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিস করেন একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট বি. লাল কাপুর বলে, তিনি আগেই ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করতেন তারপর রিটায়ার্ড করার পর নিজেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাজ করতেন।এছাড়াও কলকাতার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটারিতেও হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিস করানো হয়। সিমলাতে ভারত সরকারের যে ল্যাবরেটারি আছে সেখানেও। তো কোলকাতার যে ল্যাবরেটারিতে হ্যান্ড রাইটিং টেস্ট হয় তারা শুধু একটা ওপিনিয়ন দিয়ে দেয় যে হাতের লেখা ম্যাচ করছে না, যে নেতাজীর সাথে গুমনামী বাবার হাতের লেখা ম্যাচ করছে না।কিন্তু তারা কোনো কারণ দেখাননি তো একটা হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিসের যখন রিপোর্ট আসে তার সাথে তার কারণ দর্শানো খুব প্রয়োজন তবে তারা কোনো কারণ দেখাননি। কেন ম্যাচ করছেনা, কীভাবে ম্যাচ করছে না তা ডেমনস্ট্রেট করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সেটা ওনারা কিছু করেননি শুধু একটা ওপিনিয়ন দেন যে হাতের লেখা ম্যাচ করছে না।এবং তারপরে সিমলার একটা ছয় পাতার রিপোর্ট আসে তো ওরা বলে না ম্যাচ করছে না।কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট বি. লাল কাপুর তিনি প্রতিটি লেটার অ্যানালাইজ করে, বড় বড় ফটো ডেভেলাপ করে, প্রতিটা লেখার প্যাটার্ন ম্যাচ করে দেখেন এবং বলেন হ্যাঁ বাংলা এবং ইংরেজি দুটো হাতের লেখাই এক-ই লোকের। মানে উনি বলেন যে নেতাজী এবং গুমনামী বাবার যে হাতের লেখা সেটা একই লোকের হাতেলেখা এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরে ডিএনএ টেস্টের জন্য দাঁত গুলোর স্যাম্পেল পাঠানো হয় দুটো ল্যাবরেটারিতে একটা হায়দ্রাবাদে আর একটা কোলকাতায়। হাইদ্রাবাদের ল্যাবরেটারি বলে আমরা কোনো ওপিনিয়ন দিতে পারছিনা কারণ যথেষ্ট পরিমাণে ডিএনএ পাওয়া যায়নি যা স্যাম্পেল এসেছে তাতে। ফলে তার ইনকনক্লুসিভ রিপোর্ট দেয়।কোলকাতার ল্যাবরেটারি বলে ডিএনএ ম্যাচ করছেনা। ফলে জাস্টিস মুখার্জীর কাছে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ায় যে একটা ডিএনএ স্যাম্পেল ম্যাচ করছে না আর দুজন হাতের লেখা বিশারদ বলছেন হাতের লেখা ম্যাচ করছেনা। ফলে যে সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স, ডকুমেন্টারি এভিডেন্স ওনার সামনে থাকে সেটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও উনি নিজেই রিপোর্টে লিখেছেন যে বিপ্লবীরা যারা ওনার কাছে যেতেন তাদের কথা, তাদের লেখা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই সেটা যথেষ্ট প্রমাণ বা যথেষ্ট বড় প্রমাণ।কিন্তু যেহেতু হাতের লেখা ম্যাচ করছেনা বলে দুজন ওপিনিয়ন দিয়েছেন এবং ডিএনএ ম্যাচ করছেনা বলে যে একটি রিপোর্ট এসেছে সেই ভিত্তিতে আমি কোনো এটাতে মতামত দিচ্ছিনা কারণ পরিষ্কার কোনো এভিডেন্স পাওয়া যায়নি। ভগবানজীই যে নেতাজী তার ক্লিনসিং এভিডেন্স পাওয়া যায়নি উনি রিপোর্টে এটা লেখেন। এখন এর পরে আমরা রিসার্চ শুরু করতে গিয়ে দেখি ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে।যে হাতের লেখা যেমন আপনাকে বললাম যে কলকাতার ল্যাবে যে হাতের লেখার রিপোর্ট তাতে কোনো কারণই দেখানো হয়নি। কেমনভাবে ম্যাচ করেনি উনি যে একজন এক্সপার্ট যিনি বলছেন যে ম্যাচ করেনি কেমনভাবে ম্যাচ করেনি সেটা ডেমনস্ট্রেট করতে হবে সেটা কিন্তু সে করেনি। ফলে সে রিপোর্টটাই গ্রহণযোগ্য নয়।এবং সিমলার যে রিপোর্ট যেটাতে কিছু ছবি তুলে দেখিয়েছে, অল্প কিছু ছবি তুলে দেখিয়েছে যে ম্যাচ করছেনা সেটাও যথেষ্ট সন্দেহজনক।ফলে আমরা চেষ্টা করি তখন নতুন ফরেন্সিক টেস্ট করানোর।সেই ফরেন্সিক টেস্টটা আমরা করাই একজন অ্যামেরিকান এক্সপার্টকে দিয়ে। সেই এক্সপার্টকে আমরা হাতের লেখার স্যাম্পেল পাঠাই গুমনামীর হাতের লেখার স্যাম্পেল এবং সুভাষ চন্দ্র বসুর হাতের লেখার স্যাম্পেল এবং তাকে যখন পাঠাই তাকে ব্যাকগ্রাউন্ড সম্বন্ধে আমরা কিছু বলিনি সুভাষ চন্দ্র বসু বা এই ধরণের কোনো ইনফরমেশেন তাকে দেওয়া হয়নি। তাকে এটুকুই বলে পাঠানো হয়েছিল এই দুটো হাতের লেখা মিলিয়ে দেখতে হবে এবং ম্যাচ করে জানান এটা একই লোকের লেখা নাকি অন্য কারো। তার চেয়ে বেশি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়না একজন বিদেশী যার ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই এবং এই কেসটা সম্পর্কে তো বিশেষ কিছুই জানেন না উনি। এবং তিনি এটাও জানেন না যে একজামিনেশন টা হতে যাচ্ছে সেটা সুভাষ বোসের সাথে জড়িত।তিনি ওটাকে একজামিন করে ডিটেইলড রিপোর্ট দেন ছবি নিয়ে প্রতিটি লেটার ম্যাচ করিয়ে যে একই লোকের লেখা। সেটা উনি আর একজন এক্সপার্টকে দিয়ে ভেরিফাইও করিয়ে নেন ফলে উনি নিজে রিপোর্টটা দিয়েছেন কিন্তু সেটা আর একজন এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউও করিয়েছেন, পিয়ার রিভিউ যাকে বলা হয়। সেই রিপোর্ট আছে ম্যাচ করা। আমরা আরো সিওর হতে সেই হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিস করাই একজন ভারতীয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্টকে দিয়ে তিনিও একই রিপোর্ট দেন যে কোনো সন্দেহই নেই যে দুজনের হাতের লেখার স্যাম্পেল একজনের দ্বারাই লিখিত। ফলে হ্যান্ড রাইটিং অ্যানালিসিস পুরো পরিষ্কার হয়ে যায় যে একই লোকের হাতের লেখা। এবং এর সঙ্গে রয়েছে সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স, ডকুমেন্টারি এভিডেন্স যেগুলো বললাম পুরানো বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ, তাদের এনাকে সুভাষ বসু বলে মেনে নেওয়া। এবং দীর্ঘ দু-আড়াই বছর করে চিঠিপত্রে যোগাযোগ রেখে চলা এই প্রমাণটা আরো জোরদার করে। তখন আমরা ডিএনএর ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করি যে এটাই যদি হয় তাহলে ডিএনএটা কেন ম্যাচ করলোনা। ডিএনএ তো ম্যাচ করা উচিত যদি সত্যিই নেতাজী হয় সেখানেতো কোনো মিসম্যাচ হওয়ার প্রশ্ন নেই। খুঁটিয়ে তখন দেখি যে ডিএনএ কোলকাতার ল্যাবরেটারিতে টেস্টিং শুরু হওয়ার আগেই তৎকালীন এক বহুল প্রচলিত সংবাদপত্রে খবর ছেপে যায় যে ডিএনএ ম্যাচ করেনি। প্রশ্নটা তখন এটাই দাঁড়ায় যেখানে ডিএনএ পরীক্ষা শুরুই হলনা তার আগেই খবরের কাগজে কেমন করে খবর ছেপে যায় যে ডিএনএ ম্যাচ করেনি। তার মানে নিশ্চয় সেখানে কিছু গোলমাল আছে। তখন আমরা কোলকাতার ঐ ল্যাবরেটারির কাছে যাই। সি.এফ.এস.এল. বা সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটারি সেখানে আমরা বলি আমাদের অরিজিনাল মেশিন রিপোর্ট যেটার টেকনিক্যাল নেম হল ইলেকট্রোফেরোগ্রাম সেইটা আমাদের দেখান, একটা আর.টি.আই. এর মাধ্যমে আমরা তা করি। ইলেকট্রোফেরোগ্রামের গুরুত্বটা আপনাকে একটু ছোটো করে বুঝিয়ে দিই। যখন ডিএনএ টেস্টিং হয় তখন তা টেস্টিং হয় একটা মেশিনে এবং সেখানে মেশিন, উইথআউট হিউম্যান ইন্টারফেয়ারে একটা রিপোর্ট জেনারেট করে। আপনি যেরকম ব্লাড টেস্ট করেন বা এক্স-রে করেন বা আলট্রাসোনোগ্রাফি করেন সেটা যেরকম মেশিন জেনারেটেড একটা রিপোর্ট আসে। সেই রিপোর্টটা নিয়ে আপনি ডাক্তারের কাছে যান ডাক্তার সেই ইন্টারপ্রিটেশনটা দেয় আপনাকে এবং সেই ইন্টারপ্রিটেশন বা ডায়াগনোসিস আপনার পছন্দ না হয় ঐ রিপোর্টটা নিয়ে বা ব্লাড টেস্টের রিপোর্টটা নিয়ে আপনি অন্য ডাক্তারের কাছে যান। ইলেকট্রোফেরোগ্রাম  রিপোর্টটাও খানিকটা সেরকম-ই। এবার সি.এফ.এস.এল. একটা ওপিনিয়ন দেয় যে কমিশনের কাছে তারা নাকি এই ইলেকট্রোফেরোগ্রাম সাবমিট করেনি। কিন্তু হায়দ্রাবাদের ল্যাবরেটারি তা সাবমিট করেছিল। ট্রান্সপারেন্সির জন্য ইলেকট্রোফেরোগ্রামটা তাদের দেওয়া উচিত কিন্তু এত বছর পরেও যখন আমরা ইলেকট্রোফেরোগ্রাম চাইলাম তখন তারা তা দিতে অস্বীকার করলো। ওরা বললো এটা দেওয়া যাবেনা কারণ এটা অন্য একজন ব্যক্তির প্রাইভেট ম্যাটার এবং কমিশনের আন্ডারে ছিল, হেনতেন করে, নানা রকম অজুহাত দিয়ে ওরা দিতে অস্বীকার করে। তো আমাদের যুক্তি ছিল যে এটা কারো প্রাইভেট ম্যাটার হতে পারেনা তার কারণ কমিশন যেহেতু বলে দিয়েছেন এবং সরকার যেহেতু মেনে নিয়েছেন গুমনামী বাবা নেতাজী নন এবং যে ব্যক্তির পরিচিতিই জানা নেই তার প্রাইভেট ম্যাটার হতে পারেনা। এবং এটা ন্যাশানাল ইন্টারেস্টের জন্য কমিশন বসানো হয়েছিল সেই ন্যাশানাল ইন্টারেস্টটার গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিত কিন্তু তারা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে কোলকাতা ল্যাবরেটারি যে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট দিয়েছে যে রিপোর্ট ম্যাচ করেনি সেখানে একটা বিশাল কারচুপি হয়েছে। এটাকে আমরা একটা ফরেন্সিক ফ্রড বলতে পারি। ফলে ডিএনএর ব্যাপারটাও আর বাধা হয়ে দাঁড়ায়না। ভগবানজীকে নেতাজী হিসেবে মেনে নিতে তারপর আর এটা কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। এরপরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি রায় দেন যে মামলায় রায় দেন সে মামলাটি ফাইল করেছিলেন নেতাজীর ভাতুষ্পুত্রী ললিতা বসু। ললিতা বসু ছিলেন সুরেশচন্দ্র বসুর মেয়ে। সুরেশচন্দ্র বসু তখন শাহনাওয়াজ কমিটিতে উনি মেম্বার ছিলেন এবং তিনি বিরুদ্ধ মতের রিপোর্ট জমা দেন যে নেতাজীর মৃত্যু হয়নি বিমান দুর্ঘটনায়। ললিতা বসু যখন জানতে পারলেন ভগবানজীর কথা ১৯৮৫ তে তাঁর মৃত্যুর পর তখন তিনি ফরিদাবাদ যান। যেখানে ভগবানজী থাকতেন যে বাড়িতে সে বাড়িতে গিয়ে সব দেখেন, জিনিসপত্র সব। এবং সব দেখে ওনার বদ্ধমূল ধারণা হয় যে ভগবানজীই ওনার কাকা।উনি তখন ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেট, লোকাল পুলিশ, চিফ মিনিস্টার সবার সাথে দেখা করেন এবং বলেন যে একটা তদন্ত করুন এনার পরিচয়টা জানা দরকার কেননা আমার দেখে মনে হয়েছে যে উনি আমার কাকা। এবং তাই যদি হয় সেগুলো আমারই উত্তরাধিকার এবং তা আমি নিয়ে যেতে চাইবো। তো প্রশাসন থেকে কোনো সাহায্য করা হয়না। তখন উনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চে একটি মামলা দায়ের করেন। তারপর এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি অর্ডার দেন যে যা কিছু পাওয়া গেছে সেগুলোকে অবিলম্বে প্রিজার্ভ করা দরকার। একটা ডিটেইলড ডেসক্রিপশন বানিয়ে, একটা ইনভেনটরি বানিয়ে কি কি পাওয়া গেছে তা ভালোভাবে সরিয়ে কোনো এক জায়গায় প্রিজার্ভ করার প্রয়োজন আছে। তো সেইমতো কাজ হয়,প্রিজার্ভ করা হয়। একটি ইনভেনটরিও তৈরি হয়। তো ওটা ছিল ইনটেরিম অর্ডার, সেই মামলার ফাইনাল অর্ডার আসে ২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে মানে মামলা দায়ের করার প্রায় ২৭ বছর পর।ততদিনে ললিতা বসুও মারা গেছেন। মামলার রায়তে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এটাই বলেন যে প্রমাণের দিক দিয়ে দেখলে। প্রমাণ যা কিছু পাওয়া গেছে সবদিক দেখলে এটা একটা খুবই একটা বড় জিনিস এত পুরানো বিপ্লবী ওনাকে মেনে নিয়েছে নেতাজী বলে এবং এত চিঠিপত্র পাওয়া গেছে, তাছাড়া সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স , ডকুমেন্টারি এভিডেন্স, ওরাল এভিডেন্স এত রয়েছে তার ভিত্তিতে এত প্রমাণের ভিত্তিতে শুধু একটা ডিএনএ টেস্ট সেটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ যে দাঁত ওখানে পাওয়া গেছে সেটা যে ভগবানজীরই দাঁত এর কিন্তু কোনো প্রমাণও নেই ঐ দাঁত অন্য কারোও হতে পারে। এটাও বলেন এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে অন্যান্য যে ডকুমেন্টস পাওয়া গেছে সেগুলোও সায়েন্টিফিক্যালি স্টাডি করা দরকার। তো এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটা নতুন তদন্ত কমিশনের আদেশ দেন এবং বলেন এটা তদন্ত করে দেখা হোক। ইতিমধ্যে যেসব জিনিস পাওয়া গেছে সেগুলো একটা মিউজিয়ামে ডিসপ্লে করা হোক। তো সেইমতো উত্তর প্রদেশ সরকার একটা মিউজিয়াম বানিয়ে দিয়েছে। যদিও দুবছর তৈরি হলেও তার এখন উদঘাটন হয়নি। তদন্ত কমিশন বসানো হয় ২০১৬ সালে এবং ২০১৭ এর মাঝামাঝি তারা রিপোর্ট সাবমিট করে। গত ডিসেম্বরেই তার রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তো যাইহোক সেই রিপোর্টের কথায় পরে আসছি। কিন্তু এরপরে আমরা হ্যান্ডরাইটিং টেস্টগুলোও করাই। সুতরাং ডিএনএ টেস্টের ব্যাপারটাও সরে যাচ্ছে কারণ এটা পরিষ্কার যে ঐ টেস্টে একটা কারচুপি হয়েছিল। হ্যান্ডরাইটিং টেস্টে সিমলা থেকে যে রিপোর্ট এসেছে সেটাকে যদি একটা ভায়েবেল রিপোর্ট বলে যদি মেনে নেওয়াও হয় সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি সরকারি ল্যাব তার বিরুদ্ধে তিনজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট তিন জায়গা থেকে এক ধরণের রিপোর্ট দিচ্ছেন ফলে এটা আমরা সবাই জানি যে ভারত সরকারের ডেফিনেট স্ট্যান্ড হচ্ছে যে নেতাজী মারা গেছেন ১৯৪৫ এ এবং ভারত সরকার নেতাজী নিয়ে কথা বলতে খুব একটা উৎসাহী নয়। ফলে এটা বোঝাই যায় যে সরকারি ল্যাব থেকে কোনো রিপোর্ট এলে সেটা সরকারের পক্ষে হবে সেটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ নেই। এবং এটাও প্রশ্ন করতে হবে যে যখনই ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্টকে দিয়ে টেস্ট করানো হয় তখনই আমরা এক ধরণের রিপোর্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু সেটাই যখন সরকারি ল্যাব থেকে আসছে আমরা অন্য ধরণের রিপোর্ট পাচ্ছি এটা কেন হচ্ছে। সরকারি রিপোর্ট সরকারি ইন্টারেস্টের পক্ষেই আসছে। কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক্সপার্টদের তো কোনো এতে লাভ নেই, ইন্টারেস্ট নেই, স্টেক নেই তারা কিন্তু একই ধরণের কথা বলছে। কিন্তু সরকারি ল্যাবে টেস্ট হলেই তারা বিভিন্ন ভাবে সরকারি মতটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তো এইসব ইভিডেন্সকে একসাথে দেখলে এটা নিয়ে কোনো সন্দেহই থাকেনা যে গুমনামীই নেতাজী।




লিটারেসি প্যারাডাইস- তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছিল। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

চন্দ্রচূড় ঘোষ- এর পিছনে যে উদ্দেশ্য থাকতে পারে সেটা পলিটিক্যাল উদ্দেশ্য। এবং কংগ্রেস ইউপিএ সরকার বলুন বা অন্য সরকার বলুন এরা কখনই নেতাজীর রহস্য উন্মোচন করতে চায়নি, কোনোদিনই চায়নি। এবং কোনো উৎসাহও দেখায়নি। যা কমিশন হয়েছে হয় পাবলিকের প্রেসারের জন্য হয়েছে এবং শেষ যে কমিশন হয়েছিল মুখার্জী কমিশন সেটা হয়েছিল হাইকোর্টের অর্ডারে। এবং হাইকোর্টের অর্ডার ছিল তার কারণ একটা পিআইএল ফাইল করা হয়েছিল সেটা সরকারি উদ্দ্যেশ্যে হয়নি।সরকারের একটা অজুহাত দরকার ছিল এবং সে অজুহাতটা হল যে মুখার্জী কমিশনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে মৃত্যু হয়েছিল না হয়নি এবং যদি মৃত্যু না হয়ে থাকে তাহলে তার কি হল।তো জাস্টিস মুখার্জী প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যে মৃত্যু হয়নি বিমান দুর্ঘটনায় এবং ওটা সাজানো ঘটনা। এবং তারপরে যেটা হল সেটা জানা এখনও সম্ভব হয়নি প্রমাণের অভাবে।তো সরকার বলে যে যেহেতু পুরোপুরি উত্তর পাওয়া যাচ্ছেনা তখন এই সিদ্ধান্তটাকে আমরা মানতে পারছিনা। এবং তারা পুরো ঘুরে গিয়ে উল্টো ঘুরে গিয়ে বলেন যে আমাদের মনে হয় শাহনাওয়াজ কমিশন যেটা বলেছিল এবং খোসলা কমিশন যেটা বলেছিল সেটাই বেশি গ্রহণযোগ্য। ফলে হাইকোর্টের সামনে এক কথা বলা পরে ঘুরে গিয়ে আর এক কথা বলা এটা পরিষ্কার করে দেয় যে সরকারের উদ্দেশ্য মানে অন্তত সৎ নয়। এবার এর পিছনে রাজনীতি কাজ করছে এবং এটা পরিষ্কার বোঝা যায় নেতাজী এরপরে ১৯৪৫ এর পর যাই হয়ে থাকুক যেভাবেই থাকুন সেটা নিয়ে কোনো সরকার  বিশেষ কথা বলতে রাজী নয়। এবং সেটাকে চেপে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল এটাকেই বার বার প্রচার করা যে ১৯৪৫ সালেই ওনার মৃত্যু হয়েছে এবং সেটাই উদ্দেশ্য।

লিটারেসি প্যারাডাইস- বিদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে, বারবার এই অজুহাতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কিত ফাইলগুলো কেন্দ্র সরকার প্রকাশ করেনি। তো ফাইলগুলো প্রকাশ হলে বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের কী সত্যিই অবনতি হতে পারে?

চন্দ্রচূড় ঘোষ- নেতাজীর রহস্য উন্মোচন না করার জন্য বিভিন্ন রকম অজুহাত দেওয়া হয়ে থাকে। আমরা যখন আরটিআই গুলি ফাইল করতাম তার উত্তরে এই ধরণের কথা সরকারের কাছ থেকে আমরা শুনতে পেতাম। প্রায় দশ বছর ধরে একই কথা আমাদের বলে আসছে। যার আরটিআই অ্যাপ্লিকেশন আমরা ফাইল করতাম তারই উত্তরে এটাই লিখেছে। কিন্তু সেই করতে করতে তার মধ্যে সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশনের আদেশে অনেক ফাইল সরকারকে রিলিজও করতে হয়েছে।এবং তার উত্তরে দেখা গেছে কোন দেশের সাথেই সম্পর্কের অবনতি হয়নি।আর দেশের ভিতরেও কোনোরকম অরাজকতার সৃষ্টি হয়নি।তাহলে সরকারকেই এটা এক্সপ্লেন করতে হবে যে কেন একথাটা বার বার বলে যাচ্ছেন। তার মানে এটাই হতে পারে যে এখনও প্রচুর তথ্য গোপন করে রেখেছেন। এখন বিদেশী রাষ্ট্র কার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে? সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে যে সমস্ত দেশ তখন জড়িত ছিল তারা কারা? একনম্বরে ছিল ব্রিটেন, এখন তো ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে গেছে ব্রিটেন তখন কী করেছে সেটা যদি এখন প্রকাশ করা হয় সেটা ৭০-৭৫ বছর আগেকার ঘটনা তার সঙ্গে এখনের সম্পর্কের অবনতির কোনো প্রশ্ন নেই। তারপর তিনি ছিলেন জার্মানীতে। জার্মানীতে তখন ছিলেন হিটলারের সরকার, হিটলারের সরকারের সঙ্গে তারপরের কোনো সরকারেরই কোনো সম্পর্ক নেই সুতরাং এখানেও অবনতির কোনো প্রশ্ন নেই। বাকি রইলো সোভিয়েত ইউনিয়ন যা এখন ভেঙে গেছে। তো তখনের কমিউনিষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যা কিছু ইন্টারফেয়ার হয়ে থাকুক বা যতই রাজনৈতিক টানাপোড়েন হয়ে থাকুক তা নিয়ে বর্তমান রাশিয়ান সরকারের সঙ্গে অবনতি হবে তারও কোনো চান্স নেই। জাপানেরও যে সরকার ছিল সেটাও পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এই যে বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হবে এটা যদি আমরা সত্যি বলে মেনে নিই এর মানেটা কিন্তু এটাই দাঁড়ায় যে সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিদেশী রাষ্ট্রের কথা বলছে না, বলছে তার পরের কথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের যে সব রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে। সেটা একদিক থেকে তাহলে এটাই বোঝায় যে নেতাজী তাহলে জীবিত ছিলেন এবং তাঁর নানারকম কার্যকলাপ এই বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও ছিল। তিনি কোনোভাবে হয়তো কোনো কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাহলে সেটাই মনে হয় কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ ১৯৪৫ এর আগে কী হয়েছে সেটা নিয়ে যে আজকে ৭০-৭৫ বছর পরে খারাপ হবে সেটা একটা বাচ্চা ছেলেও বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু সরকার যদি সত্যি সত্যিই এটা বলে থাকে তার মানেই হচ্ছে ওরা ৪৫ এর পরের কথা বলছে। তার মানেই নেতাজীর ৪৫ এ মৃত্যু হয়নি।


লিটারেসি প্যারাডাইস- সৃজিৎ মুখার্জি পরিচালিত 'গুমনামী' ছবিটি আপনার কেমন লাগলো? 

চন্দ্রচূড় ঘোষ- গুমনামী সিনেমা তৈরি হওয়ার একদম প্রথম থেকেই অনুজ ধর এবং আমি জড়িত ছিলাম। এবং পুরো টিমের সাথে সৃজিত, বুম্বাদা পুরো টিমে যারা জড়িয়ে ছিল তাদের সাথে নানারকম আলোচনা করা বলুন বা ওদের টিমকে উত্তর প্রদেশ নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তারপর ওখানে লোকাল যে পার্মিশন দরকার সে পার্মিশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া নানারকম কাজের সঙ্গেই একদম প্রথম থেকেই আমরা জড়িয়ে ছিলাম। তাছাড়া যা কিছু রিসার্চ সাপোর্ট দরকার হলে তা আমরা দিয়েছি সিনেমার জন্য বা স্ক্রিপ্টের জন্য। প্রোডাকশনের যা দরকার তাতে সাহায্য করা তাহলে এত ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলাম তাহলে আমরা বাইরে থেকে যে অডিয়েন্স হিসেবে অ্যাপ্রিশিয়েট করবো সেই জায়গাটায় নেই, মুভীটাতে আমরাই জড়িত। কিন্তু একদম অডিয়েন্স হিসেবে বলতে পারি একটি অসাধারণ মুভী কারণ এই মুভী করতে খুবই সাহস লাগে। সে সাহস সৃজিত এবং বুম্বাদা দুজনেই যথেষ্ট পরিমাণেই দেখিয়েছেন।যথেষ্ট বাধা বিপত্তি এসেছিল, যথেষ্ট হুমকি দেওয়া হয়েছে ওনাদেরকে, যথেষ্ট হ্যারেসমেন্টও হতে হয়েছে এবং সেটাকে ওনারা যেভাবে মোকাবিলা করেছেন তার সামনে থেকে দাঁড়িয়ে মুভিটি করেছেন, মুভিটি রিলিজ করেছেন। এবং চারিদিকে মানুষ ইমোশনালি যেভাবে গ্রহণ করেছেন তা একটা অসাধারণ ব্যাপার। সিনেমার দিক দিয়ে দেখতে গেলে সিনেমাটা খুব-ই ভালো, এরকম সিনেমা নেতাজীকে নিয়ে দেশে আগে হয়নি। এবং এর সাথে লোকের ইমোশনাল কানেকশেন যেটা বহুবছর পর লোকের কাছে গল্পটাকে নিয়ে যাওয়া সেটা একটা অসাধারণ অ্যাচিভম্যান্ট বলবো। আবারও বলি এই সিনেমাটা করিয়ে সৃজিত এবং বুম্বাদা প্রচন্ড সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।




লিটারেসি প্যারাডাইস- 'কোনানড্রাম' বইটি লেখার অনুপ্রেরণা কার কাছে থেকে আপনি পেয়েছিলেন? 

চন্দ্রচূড় ঘোষ- কনানড্রাম বইটি লেখার অণুপ্রেরণা কারো কাছ থেকে পাইনি।ঘটনাটা এরকম হয়েছিল যেটা ২০১৩ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট অর্ডার দেন একটা নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করার। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এর প্রতি কোনো রাজ্য সরকার এর প্রতি কোনো উৎসাহ দেখাননি। আমরা যখন অর্ডার আসে তখন মায়াবতীকে চিঠি লেখি উনিও কোনো ইন্টারেস্ট দেখাননি। তারপর সরকার পরিবর্তন হয় অখিলেশ যাদবের সরকার তৈরি হয় সেখানে প্রথম প্রথম তারাও কোনো উৎসাহ দেখাননি।২০১৬ সালের প্রথম দিকে আমরা বেশ কয়েক জন, মিশন নেতাজীর কয়েকজন, বসু পরিবারের কয়েকজন গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি এবং তাঁকে সব জানানো হয় তখন তিনি ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর ইন্টারেস্ট দেখান। ওনার সাথে মিটিং করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উনি অ্যানাউন্স করেন যে নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো। প্রাক্তন বিচারপতি বিষ্ণু সহায় এর তত্বাবধানে। তো এই সহায় কমিশন তৈরি করা হলো ২০১৬ সালে। সহায় কমিশনের কাজ যখন শুরু হল তখন অনুজ আমি, আমরা গিয়ে তারপর বসু পরিবারের যারা ছিলেন জয়ন্তী রক্ষিত উনি অশোক নাথ বসুর কন্যা।অশোক নাথ বসুর দুই কন্যাই গিয়েছিলেন জয়ন্তী রক্ষিত এবং তপতী ঘোষ। জয়ন্তী রক্ষিতের পতি অমিয় রক্ষিত। আমরা সবাই যাই এবং ড. সহায়কে বিশেষ করে অনুজ আর আমি একটা ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে আসি যে কি কি হয়েছে এতদিন ধরে,এবং কোথায় কোথায় গোলমাল রয়েছে, কোন জায়গাগুলো দেখা উচিত কোন ধরণের প্রমাণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কোথায় কোথায় ইনফরমেশনে গ্যাপ রয়েছে। সব একটা মোটা নোট বানিয়ে আমরা ওনার কাছে দিয়ে আসি। আমরা আশা করেছিলাম যে এটা একটা ভালো তদন্ত হবে এবং তিনি নিরপেক্ষ ভাবে গোটা জিনিসটা তদন্ত করবেন। কিন্তু কিছু সময় যেতেই আমরা বুঝতে পারি যে এটা একটা লোক ভোলানো কমিশন বসানো হয়েছে এবং কমিশনের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছেনা। তার কারণ উনি নিজে গিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে কোনো তদন্ত উনি করেননি। কোনো ডকুমেন্টস, কোনো ফাইল উনি কারো কাছ থেকে চেয়ে পাঠাননি যে ফাইলের প্রয়োজন ছিল। কোনো আগেকার লোক যারা জড়িত ছিল তাদের কাউকেই ডেকে পাঠাননি। এমনকি কোলকাতা থেকে যারা যাতায়াত করতেন ভগবানজীর কাছে তাদের মধ্যে যারা জীবিত ছিলেন তাদেরকেও তিনি ডেকে পাঠাননি। খালি ওনার পদ্ধতি এটাই ছিল যে উনি নিজের অফিসে বসবেন এবং যার কিছু বলার আছে সে গিয়ে তাকে বলবেন এবং সেইগুলো কালেক্ট করে তার ভিত্তিতে উনি নিজের মতামত জানাবেন। এমনকি যে শয়ে শয়ে চিঠি পাওয়া গেছে যে হাজার হাজার ডকুমেন্টস পাওয়া গেছে সেগুলোর যে একটা অর্ডার ছিল হাইকোর্টে যে সায়েন্টিফিক অ্যানালিসিস করতে হবে, হাইকোর্টের যে রায় ছিল ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টটা মেনে যায়না ফলে ফ্রেস ফরেন্সিক কিছু অ্যাড্রেস করাতে হবে এর কিছুই উনি করাননি। ফলে আমরা এই কমিশনের কী রায় হতে যাচ্ছে তা অনেকটা বুঝেই যাই। সেইমতো তখনকার যে নতুন মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাকে আমরা বিশদে চিঠি লিখে জানাই যে এই এই সমস্যা হয়েছে এই তদন্ত কমিশনে এবং এর যাই সিদ্ধান্ত হোক তা মেনে নেওয়া যায়না। তার কারণ কোনোভাবেই এটাকে তদন্ত বলা যায়না, কোনোরকম ভাবেই কোনো তদন্ত হয়নি। সেটা ২০১৭ এর শেষের দিকেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিই। ফলে আমরা যেটা আশা করেছিলাম সেটাই হলো। তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট যখন আসে তখন উনি বলেন যে উনি নেতাজী নন এবং উনি কে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা হয়তো উনি নেতাজীর কোনো সহযোগী ছিলেন মানে ভাষা ভাষা করে একটা রিপোর্ট দেন। এই যখন তদন্ত কমিশনের কাজ চলছে তখন আমরা দেখি যে এর থেক কিছু বেরোবেনা। তখন অনুজ আর আমি কথা বলে ঠিক করি যে আমাদের ১৫ বছর ধরে যা রিসার্চ রয়েছে সেটাকে আমরা এক করে এক জায়গায় নিয়ে এসে অ্যানালিসিস করে নতুন ফরেন্সিক ইনফরমেশেন দিয়ে প্রকাশ করবো। কারণ লোকের জানা দরকার সত্যিটা কী, আসল ঘটনাটা কী।তারপরে কে মানলো কে মানলোনা সেটা পরের ব্যাপার কিন্তু পুরো জিনিসটা প্রকাশ করা খুবই প্রয়োজনীয়। সেইখানেই আমাদের কাজ শুরু হয় 'কনানড্রাম।'



লিটারেসি প্যারাডাইস- নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য সত্যিই কী একদিন মানুষের সামনে আসবে বলে আপনার মনে হয়?

চন্দ্রচূড় ঘোষ- দেখুন মানুষের সামনে অন্তর্ধান রহস্য শেষের ঘটনা শেষ পর্যায়ে আমরা মানুষের সামনে নিয়ে এসেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা। এবং যা জিনিস এখনও অজানা রয়েছে, যেগুলো জানা সম্ভব শুধুমাত্র যদি সরকার ফাইল ডিক্লাসিফাই করেন লোকের সামনে নিয়ে আসেন তবেই জানা সম্ভব।সেইটা হবে কী না বা তা কবে হবে সেটা বলা শক্ত। কিন্তু যে প্রশ্নটা এতদিন ধরে ছিল, এতদিনের প্রশ্নচিহ্ন যে নেতাজীর কী হলো তার উত্তরটা আমরা জানি, তার উত্তরটা আমরা আজকে পেয়েছি। এবার সরকারি ভাবে সেটা কবে গ্রহণ করা হবে এবং যা আমরা এখনও জানতে পারিনি সেটা কবে হবে সেটা নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি আশা করি আমরা একদিন না একদিন সফল হবই। একদিন না একদিন সে তথ্য সামনে আসবেই।


প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments