Header Ads

আসামের বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর কথা বলার জন্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা


আসামে বাঙালি খেদানোর চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে। যা আজকের ঘটনা নয়। ১৯৬১ সাল থেকেই আসামে বাঙালিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলেছে। তৎকালীন আসাম সরকার আসামের জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কেবল অসমিয়াকে। যার প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল বরাক উপত্যকার বাঙালি সমাজ। শিলচর রেল স্টেশনে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় এগারো জন বাঙালিকে। বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৯ শে মে শহীদ হলেন কমলা ভট্টাচার্য। যিনি ভারতের প্রথম বাঙালি মহিলা ভাষাশহীদ। রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার ফিরে আসে। 


এরপর নেলি হত্যাকান্ড, বঙ্গাল খেদাও আন্দোলন, তিনসুকিয়া হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে প্রাণ যায় অজস্র বাঙালির। আজকে এনআরসি করে বাঙালিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে তিলে তিলে মেরে ফেলার চেষ্টা চলছে। অসমিয়া ভাষী  বেশ কিছু বাঙালি জাতিবিদ্বেষি সংগঠন ক্রমাগত ভীতির সঞ্চার ঘটাচ্ছে বরাক উপত্যকা, গুয়াহাটিতে বসবাসকারী বাঙালিদের মনে। আসামের বাঙালি চরম বিপদের সাক্ষী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ালে হুমকি দেওয়া হচ্ছে আসু, লচিত সেনাদের তরফ থেকে। যারা বাঙালিদের প্রতি অনেকটাই অমানবিক হয়ে উঠছে। 

আসামের লচিত সেনারা বারবার কেন্দ্র সরকারের সংবিধান বিরোধী সিএবি বিলের সমর্থন জানাচ্ছে। আসামের একটি বড়ো সংবাদ চ্যানেলের সূত্রে দেওয়া একটি খবরে দেখা মেলে যে লচিত সেনারা বাঙালিকে পেটানোর হুমকি দিচ্ছে মিডিয়ার প্রকাশ্যেই। আসামের বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানান ভারতে জাতীয়তাবাদী বাংলা সংগঠন বাংলা পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বারবার আসামে বাঙালির ভয়াবহ অবস্থার চিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আসামের পানবাজার থানায় ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৩০৫ ও ৩০৬ ধারায় গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নামে এফআইআর করা হয়েছে।
     
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। নিজের জাতির জন্য লড়াই করাটা যেন পাপে পরিণত হচ্ছে। প্রতিটি রাজ্য যখন তাদের নিজেদের অধিকার বুঝে নিচ্ছে সেখানে বাঙালি নিজের অধিকারের কথা বললে তাঁর গায়ে প্রাদেশিকতার স্ট্যাম্প বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হওয়া এফআইআর একটি অত্যন্ত অমানবিক ও ভিত্তিহীন। গণতান্ত্রিক দেশে একজন জাতীয়তাবাদীর জাতি সম্পর্কে কথা বলার বিশেষ অধিকার রয়েছে। অথচ আসামে যারা একজন বাঙালি জাতীয়তাবাদীর নামে এফআইআর করে এলো তা বিচার করে বলা যায় এটি সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী একটি কাজ। 

আসামের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে বলা হচ্ছে গ্রেফতার হতে চলেছে গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গ্রেফতার হওয়ার প্রবল আশঙ্কায় সকল বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক জানিয়েছে বাংলা পক্ষ। অসমিয়া পুলিশ সেই রাজ্যের কিছু বাঙালি জাতিবিদ্বেষী সংগঠনের হয়ে বহুদিন ধরে কাজ করে চলেছে৷ বাঙালি নিজের পায়ের মাটি হারাতে বসেছে। আসামের একাধিক জায়গার বাঙালি অধিবাসীরা জানান যে আসামের বাইরের কোনো বাঙালি আসামের বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর কথা বললে তাকে খুনের হুমকি ও দেশছাড়া করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। 

যে  সকল বাঙালি বিশ্বমানবতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। আগে দেশ পরে রাজ্য এসব বলে যারা গলা চড়ায়। তাদের সকলকে বাঙালির অধিকারের কথা বুঝতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা কোনো জায়গাতেই বাঙালি ভালো নেই৷ স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালির কপালে জুটেছে একগুচ্ছ অপমান, যন্ত্রণা ও শত লাঞ্ছনা। বাঙালি জাতি ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে। বাঙালির ধ্বংস আসন্ন। আসামের বাঙালির জন্য গলা চড়ানোর অপরাধে যদি একজন জাতীয়তাবাদী নেতার নামে এফআইআর হয়। তাহলে ধরে নিতে হবে বিপ্লবীদের প্রাণের বিনিময়ে দেওয়া স্বাধীনতার কোনো মানেই নেই। স্বজাতির সন্তান হয়ে স্বজাতির হয়ে কথা বলা কখনই অন্যায় নয়। গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের নামে এফআইআরের মাধ্যমে আবারো স্পষ্ট বাঙালি জাতিবিদ্বেষ। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে                                                                                                                                                                                        

No comments