Header Ads

যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশে উঠে গেছে ঢেঁকির ব্যবহার


'ঢেঁকি স্বর্গ গিয়েও ধান ভানে' এই বাগধারাটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বর্তমানে সেই ঢেঁকি আর নেই। সেকেলে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতে রাখা থাকতো একটি করে ঢেঁকি। এটি বিশেষত চাল গুঁড়ো করে গুঁড়ি বা আটা বানানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। এখনকার মতো চাল গুঁড়ো করার এতো উন্নতমানের যন্ত্রপাতি তখনকার দিনে ছিলনা। ফলে কষ্ট করে ঢেঁকিতেই শস্য কুটতে হতো। 


হেমন্ত ও শীতকালে বিশেষত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ঢেঁকিতে কাজ হতো। গ্রামের মহিলারা এ কাজ করতেন। শীতের আমেজে পিঠে করার একটা বাতিক থাকতো গ্রাম্য মহিলাদের মধ্যে। তারা রাতদিন পরিশ্রম করে চাল কুটে গুঁড়ি ও আটা বানাতো। এর পাশাপাশি শস্য কোটার জন্যও মাঝেমধ্যে ঢেঁকি ব্যবহৃত হতো। ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার জন্য প্রচন্ড বল প্রয়োজন হতো। সেকেলের মহিলাদের অধিকতর ক্ষমতা ছিল তাই ঢেঁকিতে কাজ করা তাদের কাছে সামান্য ব্যাপার ছিল। 

এক বিশাল কাঠের টুকরো দিয়ে বানানো হতো ঢেঁকি। শস্য কোটার জন্য এক খণ্ড পাথরের গর্ত খোঁড়া হয়। মুষলের আঘাতে শস্য কোটার জন্য মুষলটির মাথায় লোহার পাত জড়ানো থাকতো। মুষলটি চার থেকে পাঁচ হাত ভারী কাঠের আগায় জোড়া লাগিয়ে গর্ত বরাবর সমান মাপের দুটি শক্ত খুঁটির ওপর পুঁতে রাখা হতো।   
      
গুঁড়ি বানানোর পূর্বে একটি পাত্রে জলে চাল ভিজিয়ে বাড়ির চালাতে পাত্রটি রেখে দেওয়া হতো। বেশ কিছু ঘন্টা পর ঐ চালগুলো থেকে জল নিঙড়ে চালগুলো অন্য একটি পাত্রে রাখা হতো। এরপর ঢেঁকির গর্তে চাল বা শস্য ঢেলে দিয়ে দুজন মহিলা ক্রমাগত ঢেঁকির গোঁড়াতে চাপ দিতেন। ঢেঁকির অন্যমুখে মুষলের আঘাতে ফাঁকে ফাঁকে আরেনজন গর্তের কাছে বসে শস্য বা চালগুলো নাড়াতে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা একটানা চলতো এই কাজ। এই কাজে তারা কখনো নুইয়ে পড়তো না। এই কাজের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে গ্রামের মহিলাদের শরীরচর্চাও হয়ে যেত।     
     
ঢেঁকিতে চাল কুটে গুঁড়ি বা আটা বানানো বাংলার এক প্রাচীন সংস্কৃতি। যা এখন ইতিহাসে পরিণত হতে চলেছে। এ প্রজন্মের মানুষ ঢেঁকি দেখলেও পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আর ঢেঁকি দেখতে পাবেনা। এক সময় গ্রামে ঢেঁকির অভাব ছিলনা। সময়ের স্রোতে বদলে গেছে ঢেঁকির চিত্রটা। গ্রামের মানুষের জীবনও আর আগের মতো নয়। তারাও আজকাল উন্নত হয়ে উঠছে। গ্রামবাংলাতে এখন গুঁড়ি বানানোর জন্য মিক্সচার গ্রাইন্ডার ব্যবহার করা হয়। যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশ শহর-নগর ছাড়িয়ে গ্রামবাংলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

আজকে বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি। আগামীদিনে এই ঢেঁকি একমাত্র দেখতে পাওয়া যাবে মিউজিয়ামে। পরবর্তী প্রজন্মকে গল্পের মধ্যে ঢেঁকির নানান কথা শুনতে হবে আগের প্রজন্মের কাছ থেকে। এভাবেই জন্ম হয় প্রাচীন ইতিহাসের।

No comments