Header Ads

"ছবি পরিচালনাটা পেশা হবে বলে নেশা হয়নি। নেশা তো অনেকদিন আগেই ধরেছিল" - মুখোমুখি আলাপচারিতায় উঠে এলো বাংলা ছবির অন্যতম পরিচালক অর্ণব পালের নানা কথা।

"ছবি পরিচালনাটা পেশা হবে বলে নেশা হয়নি। নেশা তো অনেকদিন আগেই ধরেছিল"। 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ছবির পরিচালক অর্ণব পাল। যার মুখে উঠে এলো বাংলা ছবি নিয়ে নানান বাক্যালাপ। লিটারেসি প্যারাডাইসের নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তুুলে ধরলাম পরিচালক অর্ণব পালের নানা কথা।




লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার পরিচালিত নতুন ছবি 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ১৪৯ দিন চলেছিল। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

অর্ণব পাল- এই ছবিটা দর্শকদের হয়তো ভালো লেগেছে নিশ্চয়৷ সেই জন্যই হল মালিকেরা ছবিটা চালিয়েছেন। আমাদের যা প্রচেষ্টা ছিল আমরা প্রত্যেকেই তো ছবি বানাই মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য। রেদার হয়তো তাদের ভালো লেগেছে নিশ্চয়ই৷ হয়তো তাদের যা এক্সপেক্টেশেন ছিল তা তারা এ ছবির সাথে রিলেট করতে পেরেছে। দর্শকরা দেখেছেন বলেই হল মালিকেরা চালিয়েছেন৷ তার মধ্যে একটা হল কালিকা হাবড়াতে এগারো সপ্তাহ নিয়মিত ছবিটা চলেছে। এককথায় বলতে গেলে ছবিটি একদম এগারো সপ্তাহ ননস্টপ চলেছে।  
        
লিটারেসি প্যারাডাইস- টিভিতে আকাশ আটে আপনার পরিচালিত ছবি 'তান্ত্রিক' দেখানো হলো। এ ছবিটা বানাতে পেরে আপনার কেমন লাগছে?

অর্ণব পাল- দেখুন মূলত আকাশ আট থেকে আমার কাছে একটা অফার আসে। যে ওদের একটা থ্রিলার স্লট হয়েছে৷ যারা ছবি-টবি বানিয়েছেন তাদেরকে ওরা অফার করছেন ছবিটা বানানোর জন্য। এটা ইন হাউস কাজ৷ আমাকে ইন হাউস ডিরেক্টর হিসেবে ছবিটি করতে হবে৷ একঘন্টার স্লটের একটা ছবি৷ যেহেতু থ্রিলার বানাতে আমি ভালোবাসি৷ শুধু ভালোবাসাই তো নয় ওটা পছন্দও করি৷ ওদের এই স্লটটার নাম সেকশন থ্রি জিরো টু। এখানে ওরা সবাই থ্রিলার গল্পই দেখান৷ ওনারাই পাঁচ থেকে ছটা থ্রিলার গল্প পছন্দ করে আমাকে পাঠান৷ তার মধ্যে থেকে 'তান্ত্রিক' গল্পটিই আমার ভালো লাগে৷ আমি তখন বলি যে এই ছবিটি বানাতে পারলেই আমার ভালো লাগবে৷ তাই ওরা আমাকে অফার করলো। আমিও কাজটা করলাম আর কি৷  


           
লিটারেসি প্যারাডাইস-  আপনি তো আগে বিজ্ঞাপনের কাজ করতেন। সেই কাজের অভিজ্ঞতাটা যদি একটু বলেন?

অর্ণব পাল- দেখুন পর্দাতে একটা ছবি দু'ঘন্টাতেই আমরা মানুষকে বোঝাই। দু'ঘন্টা বা পৌনে দু'ঘন্টা। আর বিজ্ঞাপনে একটা ছবি আমাকে পয়তাল্লিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে প্রোডাক্ট এক্সারসাইজ করতে হয়৷ প্রোডাক্টটিকে যদি আমি ছবির সঙ্গে তুলনা করি তার মানে একমিনিটের মধ্যেই আমাকে পুরো ছবিটার গল্প বলতে হচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে বিজ্ঞাপনের কাজ অনেক বেশি কঠিন৷ তার থেকেও ছবি বানানো কম কঠিন।  তার কারণ ছবি তৈরিতে অনেকটা সময়, অনেকটা প্ল্যানিং সব করা যায়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। বিজ্ঞাপন হচ্ছে যেখান প্রোডাক্ট, কোম্পানিগুলোর ক্লায়েন্টরা প্রোডাক্ট সম্বন্ধে ব্রিফ করে দেন। একটা স্টোরিবোর্ড বানিয়ে জমা করতে বলেন। তাদের হাইয়ার অফিসার্স, এইচআরডি, মার্কেটিং অফিসার তারা সেগুলো দেখে সেটিসফায়েড হলে তারা তখন অফার করে। এটা অনেকটা বেশি চ্যালেঞ্জিং আর কি৷ আবার সেক্ষেত্রে যখন এটা সড়গড় হয়ে যায় তখন এটা সহজও বলতে পারেন৷ সবমিলিয়ে কোনো তুলনা না করে বলা যায় ক্রিয়েটিভিটি দুটো ক্ষেত্রেই আছে৷ বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে খুব ছোট্ট পরিসরে বলে দেওয়া আর ছবির ক্ষেত্রে একটু বড় পরিসরে বলা এটাই। 

লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার পরবর্তী ছবির পরিকল্পনা কী?


অর্ণব পাল- পরবর্তী একটা ছবির পরিকল্পনা যেটা সারোগ্যাসির ওপর হবে৷ আজকাল অনেক মায়েরা যারা গর্ভধারণ করতে পারেন না তাদের হয়ে যারা গর্ভধারণ করেন সার্বিক ভাবে তাদেরই উপরই গল্পটা। এটা যেহেতু লোকেশন বেসড গল্প তাই এইসময় পাহাড়ের উঁচুতে শ্যুটিং করা সম্ভব নয়। আমরা ঐ মোটামুটি ভাবে ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ পরিকল্পনা করছি৷ নভেম্বর নাগাদ সেখানে এতোটাই বরফ থাকে যে শ্যুটিং করা সম্ভব নয়৷ আমরা সমতলের লোক৷ আমরা ঐ একটু গরম পড়লে ফেব্রুয়ারি বা মার্চে একটা প্ল্যান করে রেখেছি৷ 


লিটারেসি প্যারাডাইস- বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য আপনার কেমন চিন্তাভাবনা আছে?

অর্ণব পাল- আমি একটা জিনিসই বুঝি৷ আমি যাদের সাথে কাজ করেছি তারা অনেকেই এখন নেই। তারা খুব নড়বড় লোকজন ছিল৷ আমি একটা সময় তাদের অ্যাসিস্ট করেছি৷ বেশ কিছুদিন যাবতই। তাদের কাছে একটা কথাই শিখেছিলাম যে ছবি তো মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য বানানো হয় ঠিকই তার মধ্যে এমন কিছু একটা ট্যাগলাইন রাখা উচিৎ যেটা মানুষ বা সমাজ কল্যাণের হীতার্থে ব্যবহৃত হতে পারে৷ সেখানে একটা মোরাল বা কোনো একটা কনক্লুশন দেওয়া যা একটু হেল্পফুল হয়। সেটা যে-কোনো রকম ভাবে হতে পারে যেমন ডাক্তারি পরিভাষা থেকেও হতে পারে, অন্যরকম থ্রিল ইলিমেন্টের মধ্যে থেকেও আসতে পারে কিংবা লোকশন সম্বন্ধীয় ব্যাপার থেকেও আসতে পারে। এভাবে কোনোরকম একটা শিক্ষা নিয়ে অথবা সকলের জানা একটা বিষয়কে হাইলাইট করা৷ আমি স্টোরি নির্বাচনের সময় সেটাকেই একটু নজর করি। একটা পাবলিকের জন্যও ম্যাসেজ ছাড়া যায়৷ প্রথম ছবিটাতে চেষ্টা করেছিলাম৷ পরবর্তী ছবিতেও কিন্তু সারোগ্যাসি মানে বুঝতেই পারছেন সেখানে আমি দুটো জিনিস আমি জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এক ঐ উচ্চতর গ্রামগুলিতে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করা যায় তার সঙ্গে সারোগ্যাসির প্রভাব ও লোকের মনে সারোগ্যাসি যে ধারণাটা রয়েছে। তো আমার স্তিমিত ধারণা দিয়ে যদি কিছু করা যায়। শিক্ষণীয় বা এন্টারটেইনম্যান্টের সাথে যদি ক্রিয়েটিভিটা প্রয়োগ করা যায় এরকমই একটা চেষ্টা আমার মধ্যে রয়েছে। 
                          
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার ছবি পরিচালনার নেশা কীভাবে আসে?

অর্ণব পাল- আসলে আমি অ্যাক্টিং করতাম যখন। প্রথমে তো আমি বিজ্ঞাপন বানাতাম৷ বিজ্ঞাপন বানাতে গিয়ে আমাদের সেই ফ্লোরে কাজ শিখতে হয়েছে। তারপর বলতে গেলে ক্রিয়েটিভে চান্স পেয়েছি৷ তখন থেকেই ছবি বানানোর একটা ভীত তৈরি হয়ে রয়েছিল৷ কাজেই পরিচালনাটা ভালোভাবে করার জন্য বেশ কিছু ছবি ও সিরিয়ালে অভিনয় করেছি৷ পুরো বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেছি। আপনি সেই অর্থে বলতে পারেন বিজ্ঞাপনে কাজ করবার সুবাদে ছবি পরিচালনাটা অনেক বেশি আকর্ষণ করেছিল। ঐ সময় থেকেই রক্তের মধ্যে ছবি পরিচালনার নেশাটা ঢুকে গেছে৷ ছবি পরিচালনটা পেশা হবে বলে নেশা হয়নি৷ নেশা তো অনেকদিন আগেই ধরেছিল। এবার ভাগ্যের জোরে বা বাইচান্স এখন সেটা পেশা হয়ে গেছে।     
    
লিটারেসি প্যারাডাইস- 'বৃষ্টি তোমাকে দিলাম' ছবিতে দর্শকদের রেসপন্স দেখে আপনার কী মনে হয়েছিল?

অর্ণব পাল- দর্শকদের রেসপন্স থেকে আমি খুবই অভিভূত। আমি কলকাতার প্রতিটি হলে গেছি পার্টিকুলারলি। দর্শকরা হল থেকে বেরিয়ে আমার ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন৷ আরো ভালো যে ফেসবুক বা অন্যত্র ওরা অনেক লিখেওছেন যে আপনার ছবি আমরা এতোদিন দেখছি। আপনি যে বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এটা আমাদের ঘরে ঘরে আছে৷ কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারিনা। আপনি সেই বিষয়টাকে চোখে আঙুল দিয়ে তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন এবং এই ধরণের রোগীদের কীভাবে ট্রিট করা উচিৎ। আমাদের ছবিতে একটা ট্যাগলাইনও রয়েছে এই ধরণের লোকজনেরা কারাগারের বন্ধ কুঠুরি নয়, এদের দরকার একটা খোলা আকাশ৷ একটু ভালোবাসা বা স্নেহ পেলে এরাও সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করতে পারে। তো এই যে ডায়লগটা দীপকদাকে দিয়ে বলানো হয়েছিল৷ দীপকদা এই ছবিতে একজন সাইকিয়াট্রিকসের ভূমিকায় ছিলেন৷ দর্শকরা এই জায়গাটা ভালো মতো সমর্থন করেছিলেন। তারা বেশ খুশীও হয়েছেন বলে আমার মনে হয় তাদের সাথে বলে৷  


            
লিটারেসি প্যারাডাইস- টলিউডে নবাগত-নবাগতা অভিনেতা বা অভিনেত্রীদের সাথে আপনি কাজ করে ঠিক কতটা মজা পান?

অর্ণব পাল- খুব ফ্যাঙ্কলি আমি যতদিন কাজ করছি। আমি প্রচুর সিরিয়াল ও প্রচুর টেলিছবি করেছি। তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু সব জায়গায় আমি নতুনদেরকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমার স্তিমিত ক্ষমতা থেকে৷ আপনি যদি বাড়িতে কোনো একটা গাছ রোপণ করেন সেটা যখন বড়ো হয় আপনি তখন বেশ আনন্দ অনুভব করেন। আরো আনন্দ অনুভব করেন যখন সেই গাছটিতে কুঁড়ি হয়। এরপর সেই কুঁড়িতে ফুল এলে মনটা কীরকম আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়৷ ঠিক সেরকমই অনেকেই আমার কাছে কাজ করেছেন। তারা ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। বেশ সুনামও তারা অর্জন করছেন। স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি করার তো মানুষের মধ্যে একটা সহজাত প্রবৃত্তি থাকে। মানে প্রত্যেকেই ক্রিয়েটার। নিজের ক্রিয়েটিভিটা প্রকাশ হলে ডেভিনেটলি খুব ভালো লাগে সবার ৷   

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments