Header Ads

'রেডরেস' ছবির মাধ্যমে নিজের সেরাটা দিলেন পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী

অবশেষে মুক্তি পেল সৌরদীপ্ত চৌধুরী পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি 'রেডরেস' ( Redress)। অল্প বাজেটে উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হয় এই ছবি। ঝকঝকে সিনেমাটোগ্রাফি ও অসাধারণ আবহের মিশেলে ছবিটি এককথায় দেখার মতো।



'রেডরেস' ছবিটির গল্প একটি প্রতিহিংসাকে ঘিরে। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল সাসপেন্স থ্রিলার ঘরানার ছবি। গল্পসূত্রে বলা যায় একজন মেয়ের বাবার হত্যাকারীকে শায়েস্তা করার গল্প হলো 'রেডরেস'৷ ছবির মূল চরিত্র হলো অ্যানি। যে তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দীর্ঘ দশ বছর অপেক্ষা করেছিল। সে তার বাবার মৃত্যু নিজের চোখের সামনে দেখেছিল।  যে তার বাবাকে হত্যা করেছিল সে আসলে বাইরের কোনো ব্যক্তি নয়। তার বাবার হত্যাকারী হলেন তার মা। এমনই এক নৃশংস মায়ের কাহিনীও উঠে আসে এই ছবিতে। অ্যানি যখন ছোটো ছিল তখন তার মা-বাবার মধ্যে মানসিক অশান্তির সূত্রপাত ঘটে। ছবিতে অ্যানির মায়ের চরিত্রের নাম স্বাগতা। যে স্বাধীনচেতা মহিলা হয়ে বাঁচতে চেয়েছিল। যে স্বাধীনতার বাস্তবে কোনো মূল্য নেই। সে নিজের মেয়ের কথা একবারও না চিন্তা করে রাগের মাথায় হত্যা করে নিজের স্বামীকে। অ্যানির অন্তরে দশ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ হঠাৎই একদিন জেগে ওঠে। পাড়ার একজন প্রতিবেশীর সহায়তায় প্রতিশোধ নেয় অ্যানি। সে যেভাবে তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেয় সেটা আলাদা করে না বললেও চলে। কারণ গল্পের ক্লাইমেক্স এ জায়গায়। এমনিতেই ছবির ক্লাইমেক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। 

ছবির গল্প অল্প কথায় লিখলাম। বেশ কিছু জায়গার কথা বলা হয়নি কারণ এগুলো নিজের চোখে না দেখলে আপনাদের আগ্রহ হারাতে পারে। যারা এখনো এই ছবি দেখেননি তারা একবার দেখতেই পারেন ছবিটি। পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী অত্যন্ত সূক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে সাধারণ একটা ঘটনাকে এতো ভালো করে ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন যে প্রশংসা না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায়না। 



ছবিটি যদি নাম্বার দিয়ে বিচার করা হয় তাহলে দশে দশ। তবে আমরা মনে করি যে ভালো ছবিকে কখনোই নাম্বার দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক রাত-দিন এক করে প্রচন্ড পরিশ্রম করে একটা ছবি বানান। তারপর বাকীটা দর্শকদের ওপর ছেড়ে দেন৷ দর্শকেরা কতটা ভালোবেসে ছবিটা গ্রহণ করবে না করবে এটা নিয়ে চাপা উত্তেজনা পরিচালকদের প্রতি মুহূর্তে কাজ করে। 

'রেডরেস' ছবিতে অ্যানির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিকা নাথ। অ্যানির মায়ের চরিত্রে ইন্দ্রাণী সরকার, বাবার চরিত্রে সুরোজিৎ সাহা। পাড়ার প্রতিবেশীর চরিত্রে যশমিথ সিং। অ্যানির ছোটোবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সমৃদ্ধা দাস। রকরুলজ স্টুডিও পিকচারের ব্যানারে মুক্তি পেয়েছে এই ছবি। 

ছবিতে সকলের সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করার মতো। ছোটো দৃশ্যে সুরোজিৎ সাহার অভিনয় মনে রাখার মতো। অ্যানির চরিত্রটি ঋত্বিকা অত্যন্ত যত্ন সহকারে করে তুলেছে প্রানবন্ত। অ্যানির মায়ের চরিত্রে ইন্দ্রানী সরকারও একদম প্রানবন্ত। 

ছবিতে লাইটের কাজ, আবহের ব্যবহার, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল প্রত্যেকটা বস্তুর কাজ চোখে পড়ার মতো। অনুরাগ হালদারের 'আলোড়ন' গানটি ছবিকে অন্য মাত্রা দেয়। সায়ন দাসের আবহ সংগীতও মনে ধরার মতো। ছবির শেষে রয়েছে একটা সামাজিক বার্তা।  



পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে ভবিষ্যতে একজন সাবলীল পরিচালক হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ জায়গা নিতে পারেন তিনি। তার এই মহৎ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। আগের ছবিগুলোর মতো এ ছবিতেও তিনি তার সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments