Header Ads

"আমি এই দেশের নাগরিক এবং আমি এই সিনেমা তৈরি করবই"- সৃজিৎ মুখার্জি

নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য সকলের কাছেই অজানা। আর এর ওপর লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। লেখক চন্দ্রচূড় ঘোষ ও অনুজ ধর একটি বই লেখেন এর ওপর। তবে এই বইয়ের বিষয় গুমনামী বাবাকে নিয়ে। কে এই গুমনামী বাবা? তার বেশ কিছু উত্তর লুকিয়ে রয়েছে তাদের লেখা বই 'কনানড্রাম-সুভাষ বোস'স লাইভ আফটার ডেথ' বইতে। যে বইতে গুমনামী বাবার লেখা ১৩০ টি চিঠির উল্লেখ পাওয়া যায়। যে চিঠিগুলির হাতের লেখার সাথে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর হাতের লেখার হুবহু মিল ছিল। যা থেকে অনেকটাই আন্দাজ করা যায় যে গুমনামী বাবাই হয়তো সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন। এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে পুরো পৃথিবীতে।



এই গুমনামী বাবাকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। ছবির নাম 'গুমনামী'। এই ছবিটিকে ঘিরে নানা বিতর্কের ঝড় বইছে। এ ছবি বানানোর জন্য প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হচ্ছে পরিচালক সৃজিত মুখার্জিকে। 

বসু পরিবারের একাংশের মনে আপত্তির মেঘ দানা বেঁধেছে। বসু পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু ছবি বানানোর প্রসঙ্গে আপত্তি জানিয়ে বলেন যে - " গুমনামী বাবার নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় পাওয়া যায়না। সুতরাং এই ছবিতে তাঁকে নেতাজী হিসাবে দৃশ্যায়িত করা যাবেনা।" তিনি এ বিষয়ে কেন্দ্র সরকারেরও দারস্থ হবেন বলে জানান। যার কঠোর জবাব দেন সৃজিৎ মুখার্জি। তাঁর কথায়- "গুমনামী বাবাকে নেতাজী হিসাবে দেখাব কি দেখাব না এই সংক্রান্ত কোনো প্রতিশ্রুতি আমি চন্দ্র বাবুকে দিইনি। আমি বলেছি, সুভাষ চন্দ্রের শেষের দিনগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে এবং নির্দিষ্ট তত্ত্বের ভিত্তিতেই ছবিটা তৈরি হবে৷ এছাড়া মুখার্জি কমিশনের তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।"   

সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক যখন একটা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে একজন মানুষ ছবি বানাচ্ছেন। তখন একটা দেশপ্রেমিকের পরিবারের আপত্তি তোলা বেশ একটা বেমানান ব্যাপার। স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও আমরা জানতে পারিনি নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্য। বসু পরিবারের বর্তমান সদস্যরাও অন্তর্ধান রহস্য পুনরুদ্ধারে যোগ দেয়নি। এমনকি তাদের মতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই আগস্ট জাপানের তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। যা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। কারণ জাপান সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে ঐদিন কোনো বিমান দুর্ঘটনায় ঘটেনি। এমনকি মুখার্জি কমিশনের রিপোর্টও তাই বলেছে। বিভিন্ন ইন্টারনেট সাইটেও রয়েছে এই রিপোর্ট। রেয়ার বুক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া সাইটের একটি লিঙ্ক নীচে দিলাম। 

ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করার পরেও রাশিয়াতে দু-একটা সভাতেও নাকি নেতাজীর দেখা মেলে। এমনই বলে থাকেন কেউ কেউ। নেতাজীকে নিয়ে যেন রহস্যের কোনো অন্ত নেই। 

ভারতের সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ আছে। কাজেই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যে-কোনো বিষয় নিয়ে সকল মানুষের চলচ্চিত্র নির্মাণের অধিকার রয়েছে। সব বিষয়ে শুধু বিতর্ক বা চাপ সৃষ্টি করলেই সমস্যা মেটেনা। আপনি যদি কোনো বই পড়ে সে বিষয়ের ওপর গবেষণা করে একটি চলচ্চিত্র বানান। তাতে হস্তক্ষেপ করা নিছকই নির্বোধদের কাজ। বসু পরিবারের বর্তমান সদস্যদের অন্তত "গুমনামী" ছবি নিয়ে অভিযোগ তোলার ব্যাপারটা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে।  




আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকরকম অজানা তথ্য জানতে পারি। এই ইতিহাসকে আমাদের উচিৎ সবার সামনে তুলে ধরা। মানুষ ইতিহাস ভুলে গেলে সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। অতীতকে সঠিকভাবে না জানলে বর্তমানকে জানা সম্ভব নয়।

লেখক চন্দ্রচূড় ঘোষ ও অনুজ ধরের লেখা বই "কনানড্রাম-সুভাষ বোস'স লাইভ আফটার ডেথ" থেকে অনুপ্রাণিত "গুমনামী"। যার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। চলতি বছরের ২৩ শে জানুয়ারি মুক্তি পায় "গুমনামী" সিনেমার পোস্টার।

বসু পরিবারের বর্তমান সদস্যদের পাশাপাশি পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ও টুইট করে অভিযোগ তোলেন "গুমনামী" ছবি নিয়ে। তার মতে " কনানড্রামে ঐ ভন্ড গুমনামী বাবাকে নেতাজী হিসাবে প্রমাণ করার জন্য যে যুক্তি সাজানো হয়েছে তা হাস্যকর। সৃজিত বুদ্ধিমান ও শিক্ষিত পরিচালক৷ তিনি নিশ্চয়ই গুমনামীকে প্রতারক বলেই দেখাবেন"। 

অনিকেত চট্টোপাধ্যায়েয় টুইটের প্রতিবাদে লেখক চন্দ্রচূড় ঘোষ দাবী করেন যে দীর্ঘ পনেরো বছরের গবেষণার ফসল হলো 'কনানড্রাম' বইটি। যেখানে নেতাজীর অন্তর্ধানের পরের ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ এই বইয়ের অন্য আরেক লেখক অনুজ ধর বলেন যে "যেহেতু গুমনামী বাবার কোনো ডিএনএ টেস্ট এখনও করা হয়নি, বা করা হলেও তার ফলাফল সরকারী সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে আসতে দেওয়া হয়নি, তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় না গুমনামী বাবা নেতাজী ছিলেন কি না। সেই কারণেই অনিকেতের অভিযোগ ভিত্তিহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু অনুমানের ওপর নির্ভর করে একজন ব্যক্তিকে প্রতারক বলা যায়না।"

লেখক চন্দ্রচূড় ঘোষ একটি টুইটের মাধ্যমে "গুমনামী" বিতর্ক নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি ঐ পোস্টে লেখেন "২০০৬ সাল থেকে যখন বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছিল, তখন কেন এরা প্রতিবাদ করতে আসেননি। উপরন্তু তাঁর দাবী, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এবং অনুজ এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করেছেন। কিছু না জেনে একটা চরিত্রকে মিথ্যেবাদী বা ভিত্তিহীন বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না। অনিকেত আদৌ বইটা পড়েননি। বইতে গুমনামী বাবাকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। সেই অধ্যায়টি পড়ে থাকলে তিনি এই অভিযোগ করতেন না।"     

                 
কিন্তু অবশেষে সব বিতর্কের জল্পনা সরিয়ে ২০২০ তে মুক্তি পেতে চলেছে "গুমনামী"। মুক্তি প্রসঙ্গে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি চন্দ্র বসুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন যে- "আমি এই দেশের নাগরিক এবং আমি এই সিনেমা তৈরি করবই। আপনার সঙ্গে দেখা হবে ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে সিনেমার প্রিমিয়ারে।"




No comments