Header Ads

হুদহুদ নিবেদিত প্রেম এবং অপ্রেমের স্বাধীন গান 'অনন্যা'

সদ্য মুক্তি পেয়েছে হুদহুদ মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের নতুন গান 'অনন্যা'। শৌর্য সেনগুপ্তের সুরে গ্রন্থিক ব্যানার্জীর কণ্ঠে গত ৮ ই জুন মুক্তি পেয়েছে এই গানটি। যার কথা লিখেছেন শমীক মুখার্জী। মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন সৃজিত ভট্টাচার্য। গানটির ব্যাক ভোকাল করেছেন ঝিলিক মিত্র। গানটির চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন শৌর্য সেনগুপ্ত। এই গানটির ভিডিওতে সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ করতে দেখা গেছে তৈর্থিক মন্ডল, গৌরব শাসমল এবং তথাগত মৌলিককে। চলচ্চিত্র সম্পাদনা করেছেন আকাশ পাত্র কোয়ান্টিমো স্টুডিও থেকে। 


এই গানটি বানানোর নেপথ্যে রয়েছে একটি লম্বা গল্প। সেই গল্পের ফ্ল্যাসব্যাকে একটু যাওয়া যাক। 

শমীক মুখার্জি ও শৌর্য সেনগুপ্ত সম্পূর্ণ অচেনা দুটি মুখ। এদের হাত ধরে বাংলাতে তৈরি হয়েছে একটি ইউটিউব চ্যানেল হুদহুদ মিউজিক অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট বা সংক্ষেপে হুদহুদ। দেখতে দেখতে প্রায় দুই বছর অতিক্রম করে ফেলেছে হুদহুদ। ২০১৭ সালে হুদহুদের যাত্রা শুরু হয়। 
   
প্রথমে তারা বিভিন্ন গানের কভার বানিয়ে মনোরঞ্জন করতেন দর্শকদের৷ তারপর হঠাৎ করে একদিন এনারা ঠিক করেন চ্যানেলে ইন্টারভিউ সেশন করা যাক। লেখক স্মরণজিত চক্রবর্তীর ইন্টারভিউ করলেন তারা। বেশ কিছু দর্শক সেটা দেখলেনও । এর মধ্যেই প্রথম মৌলিক কাজ হিসেবে শৌর্য সেনগুপ্ত একটা শর্ট ফিল্ম রিলিজ করলেন। যে সিনেমার নাম "বুবু"। ইউটিউবের পাশাপাশি আই.এস.আই, কলকাতা আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শিত হয় সিনেমাটির।

তারপর কিছু দিনের ব্যবধান৷ তাদের দুজনকেই কলকাতার বাইরে চলে যেতে হলো চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার খাতিরে। শমীক মুখার্জি রইলেন ব্যাঙ্গালোরে আর শৌর্য সেনগুপ্ত কানাডাতে। বড়দিনের ছুটিতে তারা দুজনে একসাথে মিলিত হওয়ার পরই আবার তারা ঠিক করেন পরের কাজটা করতে হবে। সেইমতো শমীক মুখার্জি একটা লেখা লিখেন। আজ থেকে প্রায় বছর খানেক আগে লেখা। যেটা ঠিক কবিতা ছিলনা, ছিল গানের কথাই। কারণ তিনি লেখার পরপরই লেখাটিতে একটা সুর আরোপ করেন। যদিও সে সুর তার নিজেরই পছন্দ হয়নি। এরপর তিনি লেখাটা তখন শৌর্য সেনগুপ্তকে পাঠান। তিনি দু-একদিনের মধ্যেই একটা সুর করে পাঠান শমীকবাবুকে। যা শমীকবাবুর একনিমেষে ভালো লেগে যায়। 

তারপর হুদহুদের একটা গানে কাজ করতে দেখা যায় গ্রন্থিককে। তিনি একটা বাউল গানের কভার করেন। যিনি শৌর্যবাবুর স্কুলের জুনিয়র। তারা ঠিক করেন ওনাকে দিয়ে গানটা রেকর্ড করাবেন। আর এটাই হয়ে উঠলো তাদের প্রথম রেকর্ডিং করা পেশাদারী গান। শৌর্যবাবুর গানের শিক্ষক শ্রী সৃজিত ভট্টাচার্য এই গানটির সুর বিন্যাস করেন মধ্যমগ্রামের একটি স্টুডিও থেকে। 

একইসাথে 'অনন্যা' প্রেম এবং অপ্রেমের গান। কিন্তু সেই অনুভুতি কোনো একজন প্রেমিকা বা নারীর প্রতি নয়। বরং একজন মানুষের বা অনেকজন মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি, স্বপ্নের প্রতি। সেই চাওয়াই যেন অনন্যার রূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই সরল, নিরেট, নির্লিপ্ত আকর্ষণ নির্দ্বিধায় আর সবের চেয়ে অন্য, ভিন্ন। তাই সে অনন্যা। সেও আমাদের ততখানিই চায়, কিন্তু আমাদের মতই পায় না। অথচ, আমাদের উভয়ের অটল অস্তিত্বই এই সময় বহন করে। 

কানাডায় বসেই এই ভাবনার উপর ভিত্তি করে শৌর্যবাবু একটা চিত্রনাট্য তৈরী করেন এবং তারা  ঠিক করেন যে এর উপরেই ভিডিও তৈরী হবে। এমন  সময়ে তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেন তৈর্থিক মন্ডল, তথাগত মৌলিকএবং গৌরব শাসমল। ওনারা নিঃস্বার্থে, নিজেদের দায়িত্বে গ্রন্থিককে নিয়ে শ্যুট করেন এবং তাদের পরিকল্পনা মতো ড্রোন অপারেটরদের দিয়ে গানটার বিভিন্ন অংশের চিত্রায়ন করেন। এনারা  না থাকলে এত দূরে দূরে বসে থেকে কোনো ভিডিও মুক্তি দেওয়ার কথা ভাবা, সত্যিই অবান্তর হতো। 

আরো মজার কথা হলো ভিডিওটি সম্পাদিত হয়েছে মুম্বাইয়ে। শৌর্যবাবুর  আরেকজন বন্ধু আকাশের দৌলতে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তারা দুজনে  কয়েকমাসের বিক্ষিপ্ত পরিশ্রমে মিউজিক ভিডিওটা মুক্তি দিলেন তাদের ইউটিউব চ্যানেলে৷ তাদের চ্যানেলের পরিসর ক্ষুদ্র হলেও, হুদহুদকে নিয়ে যে একবুক স্বপ্ন তারা দেখেছেন। তা একদিন না একদিন সফল হবেই। সবচেয়ে বড়ো কথা এনারা কেউই পেশাগত নয়। তারা কিছুটা শখের বশে কাজ করেই আনন্দ পেতে চান। এটাই এনাদের আসল উদ্দেশ্য। এসবের মাঝে  দর্শকেরা যদি গানটা শোনে আর তা জানায় কেমন লেগেছে, তবে সেটা তাদের ভালোই লাগে। আগামীদিনে তারা চ্যানেলে আরো ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে চান৷

প্রতিবেদন- সুমিত দে

No comments