Header Ads

মুখোমুখি যকের ধন সিনেমার চিত্রনাট্যকার সৌগত বসু

লিটারেসি প্যারাডাইস:-   আপনি যকের ধন সিনেমার স্ক্রিপ্ট, আলিনগরের গোলকধাঁধা সিনেমার গল্প ও স্ক্রিপ্ট এছাড়াও ডার্ক ওয়েব, ব্যোমকেশ ওয়েব সিরিজ, সাগরদ্বীপে যকের ধন ও টেনিদা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। তো আপনার এ সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের স্ক্রিপ্ট লিখে আপনি কী কী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন?

সৌগত বসু:-   কী কী অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন এটা তো খুব বড়ো একটা প্রশ্ন হয়ে গেলো। অভিজ্ঞতা তো অনেক রকম হতে পারে ভালো অভিজ্ঞতা, খারাপ অভিজ্ঞতা, কী কী শিখেছি। স্পেশিফিক কিছু বললে বলা হয় কী রকম মানে কী, অভিজ্ঞতা তো অনেক রকমের আছে। অনেক ভালো ভালো অভিনেতাদের সংস্পর্শে এসেছি, ভালো সাহিত্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, নিজের সাহিত্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সব কিছুরই একটা আলাদা আলাদা চার্ম আছে।

লিটারেসি প্যারাডাইস:-  আলিনগরের গোলকধাঁধা সিনেমাটি আপনার হাত ধরেই উপন্যাসে রূপান্তর হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দু-এক কথা আমরা জানতে চাই?

সৌগত বসু:- ছবিটি এগিয়ে যাওয়ার পর থেকে সাহিত্যমহলের কয়েকজন পাঠক, কয়েকজন লেখক যারা রীতিমতো লেখেন তাঁরা আমাকে বলেছিলেন পারলে আলিনগরের গোলকধাঁধা যদি বই আকারে করা যায় একটু দেখুন। কিন্তু সময় নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছিল। আমিতো আরো অনেকগুলি চিত্রনাট্য লিখছি তখন। আমি মূলত একজন চিত্র-নাট্যকার, আমি আগে চিত্র-নাট্যকার পরে লেখক, সেই কারণে আমার চিত্রনাট্য লেখার চাপ থাকে আমি সময় দিয়ে উঠতে পারছিলাম না। শান্তনু ঘোষ আমায় বুক ফার্ম থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এটা লেখার জন্য। প্রথম বার আমি না করে দিয়েছিলাম যে দাদা সময়ের বড় অভাব আছে। দ্বিতীয় বার উনি আবার যোগাযোগ করেন যে আপনি একটু ভেবে দেখুন যদি সম্ভব হয়। তখন একটু সময়ও ছিল তাছাড়া এতজন বলছে সেই কারণেই চিত্রনাট্য থেকে উপন্যাস লেখার কথা ভাবলাম। এবার লেখার সময় তো উপন্যাস আকারে রূপ দিতে হবে। চিত্রনাট্যের ফর্ম আলাদা আবার উপন্যাসের ফর্মও আলাদা তাই ওটাকে আবার পুনরায় পুনর্লিখন করতে হলো।


লিটারেসি প্যারাডাইস:- বাংলা সাহিত্য নিয়ে আপনি কীরকম স্বপ্ন দেখেন?

সৌগত বসু:- বাংলা সাহিত্য এমন এক জিনিস যা চিরকাল থাকবে। হয়তো জানিনা বই থেকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে চলে আসবে সেও হতে পারে। কিংবা আমার মনে হয় না বই এর মজা কোনোদিনও যাবে বলে। কিন্তু এখন ডিজিটাল ওয়াল্ডেও বাংলা সাহিত্যের উপস্থিতী মারাত্মক রকম ভাবে বাড়ছে দিনে দিনে। বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে বিভিন্ন নতুন তরুণ লেখকরা সুযোগ পাচ্ছে। নতুন সময়ে নতুন নতুন গল্প তারা লিখছে। আমার তো মনে হয় খুবই উজ্জ্বল বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যত। আমাদের যা লিগ্যাসি আছে তার পরেও এই লিগ্যাসিকে ক্যারি ফরোয়ার্ড করা। আমার মনে হয় খুবই উজ্জ্বল। যথেষ্ট দক্ষ দক্ষ এক একজন লেখক, সাহিত্যিকরা আছেন এখন তাদের লেখা রীতিমতো চমতকৃত করে। খুবই উজ্জ্বল আমার মনে হয়।

লিটারেসি প্যারাডাইস:- স্ক্রিপ্ট রাইটিং এ আপনি কীভাবে এলেন?

সৌগত বসু: - আমি ছিলাম একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করতাম। প্রথমে টিসিএস এ ছিলাম চার বছর। তার পর আই বি এম এ ছিলাম আট বছর। আইবিএম তে থাকার সময়-ই আমি স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করি। যকের ধন আমার আইবিএম তে থাকা অবস্থায় লেখা।তারপর ব্যোমকেশ লেখা হলো, তারপর আলিনগর লেখা হলো। হইচই এর জন্য ল্যাবরেটারির চিত্রনাট্য লিখেছিলাম রবীন্দ্রনাথের গল্প থেকে। তারপর ব্যুমেরাং বলে একটা ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। বিনোদ ঘোষালের গল্প অবলম্বনে ডার্ক ওয়েব লিখেছিলাম। স্ক্রিপ্ট লেখার শখ আমার বরাবরই ছিল আমি নিজেও ছবি বানাতে চাই ভবিষ্যতে। ছবি বানানোর প্রথম পদক্ষেপ আমি মনে করি চিত্রনাট্য লেখা। আর আমি চিত্রনাট্য লিখে নিজেও খুব মজা পাচ্ছি। চিত্রনাট্য লেখার সে অর্থে কোনো বইও আমি কোনোদিনও কিছু পড়িনি, আমার যেরকম ধারণা ছিল চিত্রনাট্য কেমন হওয়া উচিত আমি সেইভাবেই লেখা শুরু করি। এভাবেই চলছে। পরে আমার চিত্রনাট্যগুলো বা ছবিগুলো মোটামুটি কিছুটা পপুলার হয় যদি বলা যায় আর কী। তারপর থেকেই কাজের ভলিউম বাড়ছে, এভাবেই চলছে। 


লিটারেসি প্যারাডাইস:বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকেরা কোন ধরনের চিত্রনাট্য বেশি করে পছন্দ করছেন বলে আপনার মনে হয়?

সৌগত বসু:- এই মুহুর্তে বাংলা ছবিতে থ্রিলার গল্পের একটা মারাত্মক ডিমান্ড আছে। থ্রিলার গল্প শুনলেই লোকে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আর অ্যাডভেঞ্চার গল্পেরও একটা স্পেস তৈরি হয়েছে। আমাদের যকের ধন তারপর আলিনগরের গোলকধাঁধা তারপর গুপ্তধনের সন্ধানে বলে ছবিটা হল এসভিএফ থেকে। তারপর সাগরদ্বীপে যকের ধনও একটি অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা হতে চলেছে । এই গল্পগুলো থেকেই আমি বুঝতে পারি অ্যাডভেঞ্চার গল্পেরও একটা স্পেশ তৈরি হয়েছে। তাই থ্রিলার যা একদম রূঢ় জীবন থেকে উঠে আসবে বা কোনো এক কল্পজগতে নিয়ে যেতে পারে এমন কোনো গল্প। তার সাথে এই মুহুর্তে যে সিনেমা সবচেয়ে বেশি চলছে তা হল অরিজিন্যাল বাংলা ফ্লেভারের গল্প মানে বাংলা সাহিত্য থেকে উঠে আসা গল্প। বাংলা সাহিত্য মানে যে বই এর পাতা থেকেই উঠে আসতে হবে তার তো কোনো মানে নেই, এখন একটা চিত্রনাট্যও সাহিত্য হতে পারে আর কী। সেরকম বহু গল্প যেমন এখন হচ্ছে সেরকমই অনেক ছবি যেগুলো বাঙালির নিজস্ব জীবন, বাঙালি মধ্যবিত্তদের নিজস্ব জীবনের কথা বলে এরকম ছবিও হচ্ছে। মানে সেই অ্যাকশন, সাউথ কপি এসবের দিন কিন্তু পেরিয়ে গেছে। সেসব কোনোদিনও সাকসেস হয়েছে বলে আমার তো ঠিক মনে হয়না। বাংলা এখন মৌলিক গল্প, বিভিন্ন সাহিত্য থেকে উঠে আসা গল্প,সাধারণ মানুষের গল্প, নানান রকমের ছোটো ছোটো কত ভালো ভালো ছবি হল আগের বছরে। সৌকর্য ঘোষালের রেনবো জেলি হলো, পরমব্রতর সোনার পাহাড় এ ধরণের ছবিগুলি হিউজলি অ্যাপ্রিশিয়েটেড হয়েছে। এ ধরণের ছবি আস্তে আস্তে আরো হবে মানে জাঁকজমক এসব থেকে বেরিয়ে কম বাজেটে খুব সুন্দর গল্প হতে পারে এমন ছবিরই আমার মনে হয় ভবিষ্যত উজ্জ্বল এখন।

লিটারেসি প্যারাডাইস:- বাংলা চলচ্চিত্রে স্ক্রিপ্ট রাইটারদের অবস্থা এখন কেমন মানে ভবিষ্যত কেমন?

সৌগত বসু:- স্ক্রিপ্ট রাইটারদের ভবিষ্যত তো থাকতেই হবে। স্ক্রিপ্ট না লিখলে ছবিটা হবে কীকরে। আর এনটারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি সারা জীবন-ই থাকবে কারণ মানুষ বিনোদন খোঁজে। সবসময় তাদের বিভিন্ন কাজ থেকে বেরিয়ে এসে মাথা হালকা করতে তারা সিনেমা হলে ঢুকবেই। সিনেমা হল না হোক এখন কোনো একটা ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ঢুকে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে মোবাইলে সিনেমা দেখবে, এ জিনিস তো থাকবেই। সারা জীবন থাকবে। বিনোদন মাধ্যম থাকতে হলে কন্টেন্ট লেখককেও থাকতে হবে। স্ক্রিপ্ট রাইটার তো থাকবেই আদি অনন্তকাল। যতদিন এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি থাকবে ততোদিন স্ক্রিপ্ট রাইটারদের ভবিষ্যত থাকবে। এইবার তার মধ্যে থেকেই এই যে প্ল্যাটফর্মটি পাচ্ছে বা যে স্পেশটি পাচ্ছে সেটাকে চিত্রনাট্যকাররা বা গল্পকাররা কত ভালভাবে ব্যবহার করতে পারছেন, গল্প লিখতে পারছেন বা গল্প বলতে পারছেন সেটাই ডিটারমিনেন্ট হবে আর কী। বাংলায় বহু ভালো ভালো চিত্রনাট্যকাররা আছেন তারা ভালো কাজও করছেন। আমার তো মনে হয় যথেষ্ট ভালো জায়গা আছে।


লিটারেসি প্যারাডাইস:- আপনার জীবনের বেড়ে ওঠার গল্পটা কেমন ছিল?

সৌগত বসু:- দেখুন আমি একটা খুবই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমার বাবা ছিলেন একজন ভলিবল কোচ আমার বাবার নাম সত্যেন্দ্রনাথ বোস আমার বাবা ন্যাশনাল লেভেলের ভলিবল কোচ ছিলেন আমার বাবা তাঁর নিজের বোনদের মানে আমার পিসিদের  ভলিবল খেলায় এনেছিলেন এমন একটা সময় যখন মেয়েরা মানে বাড়ি থেকে বেরোতে মানে মেয়েরা যে হাফ প্যান্ট পরে মাঠে গিয়ে খেলবে সেই সময়েরই অনেক রকম ইনফরমেশন ছিল আর কী বাড়ির লোকেদের ষাট-সত্তর দশকের কথা বলছি আর কী সেই অবস্থা থেকে সেই পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা আমার মা একজন স্কুল টিচার ছিলেন মা এখন রিটায়ার্ড আমার বাবা মারা গেছেন অনেকদিনই আমার মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই বাবা মারা গেছেন সেই অবস্থা থেকেই সেইরকম কোনো প্রাচুর্যের মধ্যে আমি কোনোদিন বড়ো হয়ে উঠিনি৷ আমি মানে অভাবীয় বলবো না কোনো প্রাচুর্যও আর কী সেই অর্থে ছিলনা মানে এটা চাইলেই যে আমি পেয়েছি এরকম টাইপের ব্যাপার নয় আমার স্কুলিং সাউথ পয়েন্ট থেকে সাউথ পয়েন্ট থেকে আমি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দুটোই পাশ করার পর আমি যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করি তো আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর তারপর তো চাকরি ক্ষেত্রে যেভাবে যেতে হয় আর কী আর আমার এই টোটাল প্রসেসটার মধ্যে আমার লেখালেখি বা লেখালেখির সাথে যোগাযোগ আমার অনেক পরের দিকে হয়েছে, আমি যখন কলেজের শেষের দিকে এসেছি সেই সময় থেকে লেখালেখির দিকে আমার ঝোঁক আসে সাধারণত বই পড়ার দিকে আমার মারাত্মক ঝোঁক আর সেটা আমার অনেকটা বলা যায় বাড়ির মা-বাবা বা পিসি, মাসি তাদের থেকেই এসেছে অনেকটা


লিটারেসি প্যারাডাইস:- আপনার জীবনের ভবিষ্য পরিকল্পনা কী রয়েছে


সৌগত বসু:- আমার জীবনের ভবিষ্য পরিকল্পনা দেখুন ভবিষ্যতের জন্য আমি এতোটা ভাবিনা, আমি বর্তমান নিয়েই ভাবতে বিশ্বাস করি আমি বর্তমানে লিখছি আরো ভালো লিখতে চাই এটুকুই ভবিষ্য পরিকল্পনা এর থেকে বেশি পরিকল্পনা আর কিছু নেই তবে একটা পরিকল্পনা আমি নিজেই ছবি করতে চাই তার মধ্যে একটা ছবি অতি অবশ্যই করতে চাই সেই ছবিটা নিয়েই আমি এখন মানে ফিউচারে আরো অনেক লোকজনের সাথে যোগাযোগ করবো আর কী এসব দিয়ে এখন ছবিটা করার পরিকল্পনা চলছে   

[সৌজন্যে-সুমিত দে ও অমিত দে ]                                              

                                                


No comments