বাচিকশিল্পী রাজা দাসের সাক্ষাৎকার
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনি তো বর্তমানে একজন বিখ্যাত বাচিক শিল্পী?
রাজা দাসঃ-এটা জানা নেই।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনার জীবনের প্রথম পর্বটা কেমন ছিল?
রাজা দাসঃ-বুঝতে পারলাম না।প্রথম পর্ব বলতে..
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-মানে আপনার শৈশব পর্বটা কেমন ছিল?
রাজা দাসঃ-ও শৈশব পর্ব।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-হ্যাঁ।
রাজা দাসঃ-শৈশব থেকে কলেজ
পর্যন্ত আমার সঙ্গে কবিতার কোনো জানাশোনা, আলাপ-পরিচয় ছিলনা।আমি যা করেছি সব স্কুল পেরিয়ে কলেজে উঠে তারপর থেকে।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনার জীবনের প্রথম স্বপ্ন কী ছিল?
রাজা দাসঃ-প্রথম স্বপ্ন।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-হ্যাঁ।
রাজা দাসঃ-প্রথম স্বপ্ন তো আজকাল আর মনে থাকেনা।প্রথম স্বপ্ন, দ্বিতীয় স্বপ্ন পেরিয়ে এখন কততম স্বপ্ন তাতো বলতে পারব না।এখন স্বপ্ন সারা পৃথিবীতে কবিতা বলার।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আচ্ছা।আপনার বাচিকশিল্পী হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে?
রাজা দাসঃ-অনুপ্রেরণা তো অনেককিছু থেকেই।একজন মানুষ তো নয়।এই ছোটো থেকে বড় হওয়ার পিছনে রেডিও ছিল,টেলিভিশন ছিল চারিদিকে অনুষ্ঠান ছিল,অনেক মানুষের সংস্পর্শে এসেছি। তাদের দেখে মনে হয়েছে যে আমিও চেষ্টা করলে পারি হয়তো।অনেক মানুষ উৎসাহ দিয়েছে।তাদের উৎসাহ সব মিলিয়ে আর কী।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-বর্তমানে দেখেছি অনেক শিক্ষিত মানুষও রবীন্দ্রভাবনা থেকে সরে আসছে। আপনি কী মনে করেন সাহিত্যে বা বাচিকশিল্পে রবীন্দ্রনাথ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
রাজা দাসঃ- আমি রবীন্দ্রনাথকে আলাদা করে তাঁকে তুলে দেখার পক্ষপাতী নয়।রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করেছেন অনেককিছু।দিয়েছেন অনেককিছু। কিন্তু এরকমটা নয় যে রবীন্দ্রনাথ এবং বাকিরা।এরকমটা আমি মনে করিনা।রবীন্দ্রনাথ তাদের মধ্যে একজন এবং রবীন্দ্রনাথের আলাদা করে রবীন্দ্রভাবনা বা ওমুখ ভাবনা তাহলে এরকম অনুরূপজুল ভাবনা কেন বলবো না।কেন বলবো না সুনীলভাবনা,কেন বলবো না অন্যভাবনা,শক্তিভাবনা।আমার মনে হয়না সেরকম ভাবে।কবিতার জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে যার যেটা পছন্দ,যার যেরকম মনে হওয়া।আসলে আমি কবিতা ঐভাবে দেখিনা যে কে কতটা হিট কবিতা লিখেছেন,কত বেশি লিখেছেন।আমার নিজের যেটা বলতে ইচ্ছে করে সেই বলাটা যদি কারোর লেখাতে থাকে কিন্তু যেই হোক সেটা একজন একদম নতুন চোয়ালও যিনি হতে পারেন।যার লেখাটা আমার মনগোঁয়াড়ে এটাই তো আমি বলতে চাই।সেটা কিন্তু অনেকক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রেও হয়েছে যে বা, এ লেখাটা তো আমার মতোই।আমি যেটা বলতে চাই সেটাই লিখেছেন।সেকারণেই কিন্তু প্রিয়।প্রিয়তা এটার জন্য নয় যে তাঁর একটা সাংঙ্ঘাতিক সাহিত্য বলে।সাহিত্যমূল্য ডেফিনেটলি প্রত্যেকটি কবিতারই আছে বলে এটা আমার বিশ্বাস।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনি 91.9 ফ্রেন্ডস এফএমে কাজ
করেন।আপনার রেডিও জীবনের ১০ বছর পূর্ণ হলো। এই ১০ বছরে আপনি কতটা সফল এবং কতটা
বিফল হয়েছেন?
রাজা দাসঃ-সেকথা আমি বলবো নাকি যারা শোনেন তাঁরা বলবেন।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-হ্যাঁ।
রাজা দাসঃ-তাইনা।আমিতো আমার কাজটা করি।সফল-অসফল এই ব্যাপারটাতো আমার জায়গা নয় বলার।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আমরা দেখেছি প্রত্যহ সানডে সাসপেন্সের মতো রেডিও পোগ্রামের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
রাজা দাসঃ-হ্যাঁ রেডিও তো সবচেয়ে ইনটিন্যান্ট মিডিয়া। রেডিও, প্রত্যেকের আলাদা একটা নিজস্ব রেডিও শোনার সময় আছে। প্রত্যেকের প্রিয় একটা কোনো যারা রেডিও কণ্ঠস্বর সেরকম আছে।সবটা মিলিয়ে রেডিও ভীষণ 1:1 অর্থাৎ আমার নিজের যেটা টেলিভিশন নয়।টেলিভিশন কিন্তু আমরা সবাই মিলে একসাথে দেখি।রেডিও তা হয়না। একটা ঘরে যদি রেডিও চলে তাহলে পাঁচজন মানুষ যদি একসাথে শোনো সে প্রত্যেকেই ভাববে আলাদা করে আমার জন্য বলছে। সেটা কিন্তু অন্য মিডিয়ার হয়না।যার ফলে রেডিওর জনপ্রিয়তা বাড়াটাই স্বাভাবিক এবং রেডিও এখন তো রেডিও নয়।রেডিও এখন মোবাইলে শোনা যায়।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আমার রবীন্দ্রনাথ এই যে একটা অনুষ্ঠান যা মহানগরী কলকাতার খুবই একটা প্রিয় অনুষ্ঠান।চায়ের চুমুকের সাথে আমার রবীন্দ্রনাথ সে যেন এক রূপকথা।এই পোগ্রাম নিয়ে আপনি কতটা এক্সাইটেড?
রাজা দাসঃ-আমার রবীন্দ্রনাথ বলে একটি অনুষ্ঠান আমি লঞ্চ করি। এই 91.9 ফ্রেন্ডস এফএমে সেটা প্রতি রোববার সকালবেলাতে হয়। সেখানে আমি নিজে পারফর্ম করি।আমার মতো করে কবিতা, গদ্য, গল্প যেটা আমার ভালোলাগা সেগুলো আমি বলি।এছাড়াও মুখস্ত অতীতকে দিয়েই কিছু একটা করে পড়ে শোনানোর ভাবনাচিন্তা করি।সেখানে কিন্তু ইন্টারভিউ নেওয়া হয়না। ইন্টারভিউ তো হতে পারেনা। রবীন্দ্রনাথের অনুষ্ঠানে অন্য কারো ইন্টারভিউ ,তাঁর রবীন্দ্রনাথকে জানার চেষ্টা করি। তাঁর জীবনে রবীন্দ্রনাথের কতোটা ইনফ্লুয়েন্স আছে কী নেই, কতোটা আছে, কীরকমটা আছে সেরকম একটা জানার চেষ্টা করি। আর এ অনুষ্ঠানটাই বছরে দুবার মিনিমাম মঞ্চে অনুষ্ঠীত হয় অর্থাৎ রবীন্দ্রসদণী, কলামন্দিরে ইয়ে হরেক বিভিন্ন অংশে আমরা অলরেডি চারটে অনুষ্ঠান আমরা করে ফেলেছি।এরও রেসপেন্স খুব ভালো সবসময় হাউসফুল হয়েছে। এবং সেখানেও আমরা পারফর্ম করি। ওখানে লাইভ আমি কবিতা বলি। আরও আমার সঙ্গে আরো অনেকে গানের লোকেরা আসেন। তাঁরা পারফর্ম করেন। শুনুন এটা একটা অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে, এই অনুষ্ঠানটা।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আমার রবীন্দ্রনাথের অতিথি হিসেবে সুতপা সেন,সুতপা চক্রবর্তী এবং মৌমিতা ঘোষ এনাদের সাথে কাজ করে আপনার কেমন লাগছে?
রাজা দাসঃ-ডেফিনেটলি ভালো।সবাই খুব ভালো।সবাই নিজেদের মতো করে তাদের মতো করে তাঁরা পরিবেশনা করেছেন।এবং সেটাই অনেক মানুষ শুনবেন।সেটাই আমার ভালোলাগা।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-বর্তমান সময়ের একজন প্রখ্যাত তরুণ কবি রুদ্রশংকরের কবিতা আপনার কণ্ঠে দারুণ লাগে।এই রুদ্রশংকর দার সাথে আপনার রিলেশন কেমন?
রাজা দাসঃ-খুব ভালো।রুদ্র তো আমার বন্ধু।রুদ্রের সাথে আমার পরিচয় কলকাতাতেই।কলকাতাতে আসলে দেখা হয়।রুদ্রের বেশকিছু কবিতা আমি বলেছি।আর সেগুলো শুনেছি ওর, ওর কাছেই শুনেছি যে অনেকের কাছেই খুব প্রিয় হয়েছে কবিতা।যে দেশে থাকে ও সেদেশেও।আমার অনেকটাই ভালো লাগা ওর কবিতা।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনি কবি জয় গোস্বামী,রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ইন্দ্রাণী সেন আরও অনেক বিখ্যাত মানুষের সাথে কাজ করেছেন। তাদের সাথে কাজ করেছেন।তাদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কী রকম?
রাজা দাসঃ- দেখুন প্রত্যেকের কাছ থেকেই অভিজ্ঞতা বলতে শেখাটা অনেক এখন যখনি একটা কাজ হয়, তখন আর একজনের কাছ থেকেও তো অনেকটা শেখা যায়। তো আমি যাদের সাথে কাজ করেছি তাঁরা মানে আমার প্রথম স্টেজ অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট করে দিয়েছিলেন জয়দা। মানে প্রথম আমি যখন মঞ্চে আসি যে কী কবিতা বলবো সেই কবিতা নিয়ে সারাদিন কেটেছে,কোনো কবিতা বাঁছবো, এমন সময়ও কেটেছে। সেটা আমার কাছে অনেকটা পাওয়া। কারণ জয় গোস্বামী কবিতা বেঁছে দিচ্ছেন। এবং সেখান থেকে আমার অনেক কবিতা নতুন করে লিখতেছে না। কবি মানে পরিচয় হওয়া অনেকটা অর্থাৎ সাহিত্যের সাথে পরিচয় হওয়া। সেখান থেকে শুরু। শ্রাবণী সেন তাঁর সঙ্গে আমি সবচেয়ে বেশি স্টেজ পারফর্ম করেছি। জয়তী চক্রবর্তী, লোপামুদ্রা মিত্র, শ্রীকান্ত আচার্য তাছাড়াও আরো অনেকেই আছেন যাদের সাথে আমি কাজ করেছি। ইন্দ্রাণীদির সাথে আমি কাজ করেছি।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বাচিকশিল্পের অবস্থা কেমন?
রাজা দাসঃ-আঃ।বাচিকশিল্প বলতে কী বোঝাচ্ছে আমি ঠিক জানিনা।বাচিকশিল্প মানে যদি কথা বলা হয় তা বা কবিতা বলা হয় কিংবা সঞ্চালনাকে, সবকিছুই তো বাচিকশিল্পের মধ্যেই পড়ে।আমি মনে করি কবিতা, শ্রুতি নাটক, সঞ্চালনা, রেডিওতে কাজ, টেলিভিশনে কাজ এই সবটাই বাচিকশিল্পের আওতার মধ্যেই পড়ে। তাই এই কাজের স্কোপ স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বাড়ছে।আর বাড়াটাই স্বাভাবিক।আমার মনে হয় এই যে এতগুলো চ্যানেল, এতরকম কাজ, এই গোটাটাকে যারা বাচিকশিল্প ভাবেন, তাদের কাজ আছে।আর আমি যদি non-commercially ভাবি তাহলে কাজ নেই।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আপনার কবিতার কণ্ঠস্বর অসাধারণ।গলা পরিস্কারের জন্য আপনি নিয়মিত কী করেন?
রাজা দাসঃ-কিছুই করি না।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-যারা কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন বা আবৃত্তিকার হতে চান।তাদের উন্নতির জন্য আপনি কী টিপস দেবেন?
রাজা দাসঃ-আমার মনে হয় যে তাঁরা শুধু যদি কবিতা না পড়ে জীবনটাকে উপভোগ করে। অর্থাৎ কবিতা ছাড়াও যে আরো অন্য শাখাগুলো আছে সেই শাখা থেকে অনেক বেশি পায়।অর্থাৎ কবিতা পড়েই যে কবিতা বলা যায় এটা আমি বিশ্বাস করিনা।অনেকেই আছেন না শুধুই কবিতা পড়ি।অথচ আমি সিনেমা দেখি কম,আমি গল্প পড়িনা।আমি তো গল্প পড়ব না।তার জন্যে আমার কী লাভ।কিংবা গান শুনিনা, কিংবা আমি খেলাধূলো করিনা,দেখিনা।তা আমার মনে হয় যে সে পুরো যে সামাজিক এই সময় দাঁড়িয়ে যা যা কাজ হচ্ছে, যেখানে যা কাজ হচ্ছে সবকিছুর সঙ্গে যদি ওয়াকিবহাল থাকি,তাহলে সেই ইমোশানটা,সেই ফিলিংসটা,সেই যে একটা মনন তৈরি হয়। একটা মানুষ তো জানতে জানতে,একটা প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়া উচিৎ।আমার মনে হয় সবকিছু মিলিয়ে কিন্তু কবিতার মধ্যে আমরা যখন আমার গলার স্বরটা দিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করি।সেটা কিন্তু শুধুই কবিতাচর্চা নয়।শুধু কবিতার চর্চা করলেই কিন্তু সেই মনোবাঞ্ছা পূরণ হবেনা।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-আজকাল কবির সংখ্যা বেশি কিন্তু ভালো কবিতার বড়ই অভাব।আপনি কী বলতে পারেন যে কীভাবে বাংলা কবিতার উন্নতি করা যায়?
রাজা দাসঃ-দেখুন আমি তো লিখতে পারিনা।তাই লেখা নিয়ে আমার বলাটা ঠিক মানায় না আমাকে।তো লিখা একটা আলাদা জিনিস, গলা একটা আলাদা জিনিস ঠিক আছে।আমার মনে হয় যে কবিতার অভাব বললে ভুল হবে।কারণ এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রচুর ভালো ভালো লেখা আসছে।সেটা সময়েই বলবে সেটা কতদূর কার্যকারী হবে,সেটা কতদিন থাকবে,থাকবে না।সব জায়গাতেই তাই।নতুন সিনেমা যেমন হচ্ছে,নতুন গান হচ্ছে।এখন আমরা শুধু স্বর্ণযুগ স্বর্ণযুগ করে কাটাতে পারিনা।এখন আমার সময়ের যা কাজ হচ্ছে।আমার সময়ের সিনেমা নিয়ে আমি গর্বিত,গান নিয়ে আমি গর্বিত।আমার সময়ের বেশকিছু কবি আছে যাদের কবিতা আমার দারুণ লাগে।এবং তাঁরা লিখছেন তো।এবার আমি যদি আঁকড়ে বসে থাকি যে আমি পুরো পঞ্চাশটা কবির নাম জানি।তাদের বাইরে বেরোবনা।এদের কবিতা পড়ব না। কতজন পড়ে আগে বলুন তো আগে?এদের যে নতুন বই বেরিয়েছে, কটা বই বেরিয়েছে,কজন খবর রাখি এটা শুনি আগে? তারপরে তো সে ভালো লিখছে না খারাপ লিখছে।আমি যদি চিরকালই মনে করি যে আমার ডিপথ মানে হচ্ছে এই মহীরুহ তাঁরা এর পরে লেখা হয়না।আগেই যদি ওটা বলে দিই তাহলে তো তাঁর মূল্যায়ণ হচ্ছেনা।আমি আমার সময়ের তাঁর মূল্যায়ণ কীকরে করবো? আগে তো আমাকে পড়তে হবে।আগে তো জানতে হবে কোথায় কী লেখা বেরিয়েছে।যারা বলেন যে তাদের এই প্রশ্নই করবো আপনি জানেন যে কার কোনটা বই বেরিয়েছে?
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ-এবার যে প্রশ্নটা করবো এটাই শেষ প্রশ্ন। উত্তর ভারতের ছবিগুলোতে দেখেছি যে কবিতার ব্যবহার সেরকম ভাবে হয়না অথচ বাংলার আর্টফিল্ম যেমন বাইশে শ্রাবণের মতো ছবিগুলোতে কবিতা খুব ভালোভাবেই ব্যবহার হচ্ছে। সিনেমার সঙ্গে কবিতার সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
রাজা দাসঃ- গুলজার একটা সিনেমা করেছিলেন তাঁর নাম ইজাজাত। ইজাজাতের রিভিউ বেরিয়েছিল। সেই রিভিউতে লেখা হয়েছিল Poetry in celluloid অর্থাৎ সিনেমার প্রত্যেক ফ্রেমে কবিতা তৈরি করা হয়েছে। যে-কোনো ভালো জিনিসকেই বলা হয় কবিতার মতো। অর্থাৎ কবিতা এমন একটা জিনিস যেটা ইউনিক যেটা সবচেয়ে সুন্দর বলে ধরে নেওয়া হয়। এবং যেহেতু আয়তনটা তাঁর ছোটো থাকে কিন্তু ছোটোটার মধ্যেই এতো জিনিস জুড়ে দেওয়া থাকে সেখানে তা আস্ত উপন্যাস পড়া থাকে। যে দেখতে পায়, বুঝতে পারে তার মধ্যেই সে সেটাকে খুঁজে নেবে। আর বাইশে শ্রাবণের উল্লেখ যেমন বলাবাহুল্য সৃজিতের সিনেমা। সৃজিত কবিতাপ্রেমী। সৃজিত যেমন কবিতা পড়তে ভালোবাসে, কবিতা নিয়ে প্রচুর চর্চা করে, নিজে লিখেও। তার ফলে এটা কিন্তু ম্যান টু ম্যান দায়ী করছে যে পরিচালক। আঃ তাঁর উপর অনেকটা ডিপেন্ড করে যে আমি আমার ছবিতে কবিতা কীভাবে। আমি রিসেন্টলি সিনেমাতেও একটি আমার কবিতা মানে আমার সৃজাতের লেখা একটি কবিতা আমি বললাম আর কী। সিনেমাতে শেষ যে হয় ঐ কবিতাটা দিয়েই। তো সে কবিতা ব্যবহার যদি মানে যারা সুরকার যারা মিউজিক করছেন তাঁরা যদি মনে করেন যে কবিতা ব্যবহার করবেন আমার মনে হয় সেটা কিন্তু শক্তিশালী মিডিয়া হয়ে দাঁড়াবে সিনেমার জন্য। তাই কবিতার ব্যবহার হচ্ছে। কবিতার ব্যবহার অনেক সিনেমাতেই হয়েছে। আঃ বেশ কিছু সিনেমা যেমন দোসরের কথা মনে পড়ছে। সেখানে যে বিখ্যাত কবিতা ছিল সেই কবিতাটাই কিন্তু পুরো দোসরের মূল কাঠামোই বলবো যে সেই " তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট ছুলো। যদিও এ প্রথমবার নয়। চুম্বন তো আগেও বহুবার। এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়।" সৃজাত বন্দোপাধ্যায়ের এই কবিতা দোসরের মতো সিনেমার কিন্তু মূল জায়গা ঐ কবিতাটায়। সুতরাং ঋতুপর্ণ যেমন নিজে লিখেন, ওদের প্রচুর পড়াশুনোও। সুতরাং দেখতে হবে কে সিনেমা বানাচ্ছে। সুতরাং আমার মনে হয় যে কবিতা তো চিরকালই মানে সিনেমার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবার যদি কবিতা ব্যবহার না করতে চান তাহলে রবীন্দ্রনাথের গানই ব্যবহারের ইচ্ছা আছে তাঁর নিজের। কারণ অমোঘভাবে কিছু লাইন চলে আসে সেই লাইনগুলো মনে হয় যেন - আরে বাবা, আমি যে গল্পটা বলতে চেয়েছি তার জন্যেই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের মজাটা এইখানে। এইখানে হঠাৎ মনে হয় এটা তো আমার কথা। আমার জন্য লিখেছেন। সেই হিসেবে রবীন্দ্রনাথেরর গানই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমাতে। এটা আমার মনে হয় তাই।
লিটারেসি প্যারাডাইসঃ- ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই সাক্ষাৎকারের জন্য।
সাক্ষাৎকার গ্রাহক- সুমিত দে
Post a Comment