Header Ads

'কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক?' রচয়িতা ফজলল করিমকে কি আমরা মনে রাখলাম?


কোথায় স্বর্গ?
কোথায় নরক?
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক
মানুষেতে সুরাসুর। 

এই লাইনগুলো জানেনা হয়তো এমন বাঙালি নেই। একসময় যখন সারা বাংলাতেই মাটির বাড়ি বেশি ছিল সেই সময় অনেক বাড়ির কার্পেটেই এই কবিতা গুলো লেখা থাকতো। কিন্তু এই কবিতার রচয়িতা কে কি আমরা চিনি? 


নবম-দশম শ্রেণীর ভাব-সম্প্রসারণেও এই লাইনগুলো থাকতোই। কিন্তু এর রচয়িতার নাম সেভাবে কোথাও আলোচনা হয়নি বললেই চলে।

'সুন্দর হে, দাও দাও সুন্দর জীবন
হউক দূর অকল্যাণ সকল অশোভন।' 

এই লেখাগুলো তো আমরা সকলেই পড়েছি‌ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এমন সব বাঙালির লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের আমরা চিনি না!

এই কবিতাগুলোর রচয়িতা ছিলেন শেখ ফজলল করিম। ১৮৮২ থেকে ১৯৩৬ সাহিত্য জগতে ফজলল করিমকে চিনতেন না এমন কোনো বাঙালি ছিল বলে মনে হয়না। ঐ সময়ে হিন্দু বাঙালি সাহিত্যিকগণ ওনাকে বাঙালির শেক্সপিয়ার বলতেন। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে নদীয়া সাহিত্য সভা থেকে তিনি 'সাহিত্যবিশারদ' উপাধিতে ভূষিত হন। 'পথ ও পাথেয়' গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্য পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি 'চিন্তার চাষ' গ্রন্থের জন্য নীতিভূষণ উপাধি লাভ করেন। 

সারা বাংলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পেয়েছিলেন একের পর এক উপাধি যেমন বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকর, কাব্যভূষণ ইত্যাদি।

কবি শেখ ফজলল করিমের সমাধি

ফজলল করিমের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হল 'পথ ও পাথেয়', 'চিন্তার চাষ', 'ভুক্তি পুষ্পাঞ্জলি', 'ভগ্নবীণা বা ইসলাম চিত্র', 'তৃষ্ণা', 'গাঁথা', 'পরিত্রাণ কাব্য' ,'সরল পদ্য বিকাশ' 'প্রেমের স্মৃতি', 'উচ্ছ্বাস' অন্যতম।

কাব্য রচনার পাশাপাশি উনার লেখা উপন্যাস ও জীবনীমূলক ও ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলিও সমান জনপ্রিয় ছিল‌। লায়লী-মজনু ও হারুন-অর-রশিদ নামে তিনি এক আখ্যানধর্মী উপন্যাসের রচনা করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় উনি রচনা করেছেন একের পর এক কবিতা। এরকম একজন দিকপাল কবিকে আমরা ভুলতে বসেছি যা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য লজ্জার।

ওনার রচনায় ফুঁটে উঠতো মানুষের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা। ওনার প্রত্যেকটি লেখাতেই নীতিকথার স্থান ছিল প্রথম পর্যায়ে। যেমন-
'পেটের ক্ষিদে মেটে না যার
এই রাতে ঠাঁই কোথা তার?
বাঁচতে হলে লাঙ্গল ধর রে
আবার এসে গাঁয়।'

অথবা

'শত শত ক্রোশ করিয়া ভ্রমণ জ্ঞানীর অন্বেষণে,
সহসা একদা পেল সে প্রবীণ কোনো এক মহাজনে।
শুধাল, "হে জ্ঞানী! আকাশের চেয়ে উচ্চতা বেশি কার?"
জ্ঞানী বলে, "বাছা, সত্যের চেয়ে উঁচু নাহি কিছু আর।"

কবি শেখ ফজলল করিমের নামে বাংলাদেশে রয়েছে পাঠাগার

আমাদের শৈশব থেকে এমন লেখা পড়ানো হলে শৈশব থেকেই মানুষের মতো মানুষ হবার সুযোগ পেত প্রতিটি বাঙালি শিশু। কিন্তু বর্তমানে বাঙালি বাবা-মায়েদের কাছে বাংলা জটিল তাই ছেলেমেয়েদের বাংলা না শিখলেও তো চলে। তাহলে এমন সব নীতিমালা থেকে বাঙালি শিশু বঞ্চিত হবেই এতে তো অবাক হবার কিছুই নেই।

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments