Header Ads

বাঙালির কথোপকথনে কমছে বাগধারার ব্যবহার


'কি রে তুই কি ডুমুরের ফুল হয়ে গেলি?', 'আকাশকুসুম কি এত ভাবছিস?', 'মহীনের ছেলেটা আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছে পরীক্ষায় ও ভালো ফল করবেই', এ ধরণের কথাগুলো একসময় বাঙালির মুখে মুখে লেগে থাকতো। মিলিয়ে মিলিয়ে কথা বলার চল-ও ছিল একসময়। 'ভূতের ভবিষ্যৎ' ছায়াছবির কিছু দৃশ্যেও এরকম কয়েকটি সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছিল, যেমন "হ্যাঁয় বলিস কিরে, হ্যাঁয়। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে। তাহলে সরকার বাহাদুরের পাওনা মেটাবে কে? আমার পিশে?এই বিশে। ঘুরে আসি মহল, তোমার চাকরি থাকবে না বহল।"



কিন্তু কেন জানিনা বর্তমানে বাংলা ভাষার চর্চা যেন হ্রাস পাচ্ছে। এই বাংলা ভাষার অবনমনের পিছনে সংস্কৃতাইজেশন তত্ত্বের একটি প্রভাব রয়েছে। সমাজবিদ্যার কিছু নিয়ম আছে যার মধ্যে সংস্কৃতাইজেশন তত্ব অন্যতম। এই তত্ত্ব অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত বেশি প্রভাব বিস্তারকারী কোনো ভাষা এবং সেই জাতি ও ভাষার প্রভাবে অপেক্ষাকৃত নিচু প্রতিপন্ন হওয়া জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই নিচু প্রতিপন্ন হয়ে যাওয়া জাতি ক্রমশ উচ্চ প্রতিপন্ন হওয়া জাতির ভাষা, সংস্কৃতি সব কিছু অনুকরণ করতে শুরু করে এবং একসময় সেই ভাষা ও জাতি হারিয়ে যায় এবং শেষে সেই জাতি নির্বাক হয়ে যায়। 

এ বিষয়ে পশুপতি প্রসাদ মাহাত এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন 'সংস্কৃতাইজেশন ভার্সেস নির্বাকাইজেশন' বইটিতে। উনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন তাঁর কবিতায় "এইসব নির্বাকদের কথাও তোমায় বলিতে হইবে।"

এত কথা বলার একটাই কারণ এই সংস্কৃতাইজেশন ঘটানো হয় কিছু প্রভাবশালী মানুষের দ্বারা ইচ্ছাকৃত ভাবে। অর্থনৈতিক ভাবে এটা ঘটানো সহজ। একটি জাতির মন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বিভিন্ন ভাবে‌। যেমন একটা উদাহরণ দিই শিশুরা যে কার্টুন দেখে ওই কার্টুন যদি হিন্দিতে দেখানো হয় তখন দেখবেন ঐ শিশুর মননে চিন্তনে হিন্দির প্রভাব থাকে। এবার যেহেতু সেই কার্টুন হিন্দি ভাষীদের দ্বারা নির্মাণ করা তাই যে শিশু দেখবে তার মধ্যে হিন্দির প্রভাব আসবে। কোনোভাবেই সে রবীন্দ্রনাথ বা বিদ্যাসাগর শিখবে না।

বর্তমানে দেখতে পাই শিশুরা বলছে 'ও শিঠ' বা 'ও মাই গড', ডালমে কুছ কালা হ্যাঁয় কিন্তু বাংলার কোনো সংলাপ শোনা যাচ্ছে না। বর্তমানে বাংলা বাগধারা কমে যাওয়ায় কি আর কোনো কারণ থাকতে পারে? বাগধারার ব্যবহার কমে যাওয়া কি বাংলা ভাষার জন্য বিপজ্জনক। কিন্তু সমাজের কোনো অংশে দেখছিনা এ বিষয়ে কেউ ভাবিত বলে? আমাদের কি উচিৎ নয় এসব নিয়ে চর্চা করা, সেমিনার করা?

প্রতিবেদন- অমিত দে


No comments