Header Ads

ডোকরা শিল্পকে থিমের মাধ্যমে তুলে ধরছে সাঁইথিয়া অগ্রণী সমাজের পুজো


লাল মাটির দেশ বীরভূমের সেরা পুজোর মধ্যে একটি হলো সাঁইথিয়া শহরের অগ্রণী সমাজের দুর্গাপুজো। সাঁইথিয়ার নজরুল সরণিতে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক ক্লাব হলো অগ্রণী সমাজ। এই ক্লাব প্রথমে একটি ফুটবল ক্লাব ছিল। ১৯৪৪ সালে প্রাক্তন বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নীহার দত্ত এলাকার কয়েকজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষজনদের নিয়ে এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা করেন। 


একটা সময় ছিল যখন নজরুল সরণিতে কোনো দুর্গাপুজো হতো না। এই পাড়ার লোকেরা পুজো দেখার জন্য অন্য পাড়াতে হাজির হতেন। খেলা ও সমাজসেবার সুবাদে অগ্রণী সমাজের সে সময় বেশ নাম ডাক। একদিন নীহারবাবুর স্ত্রী  প্রয়াত স্মৃতিকণা দেবী স্বামীর কাছে পাড়ায় পুজো প্রচলনের আবদার করেন। স্ত্রীর দাবি মেনে, ১৯৬৭ সালে অগ্রণী সমাজে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন তিনি।  


এবার তাদের পুজোর বয়স ৫৩ বছর অতিক্রম করলো। এখানকার পুজোর সবচেয়ে বড়ো দিক হলো পুজোর থিমে নতুনত্বের ছোঁয়া। কখনো অবলুপ্ত প্রায় কুটির শিল্পের মণ্ডপ, কখনো সম্প্রীতির বাতাবরণ আরো কত কত থিম বানিয়ে নজর কেড়েছে এই ক্লাবের পুজো৷ এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর তাঁরা মণ্ডপের মাধ্যমে তুলে ধরেছে বাংলার ডোকরা শিল্পকে। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র সোমনাথ নন্দন ও তাঁর টিম নির্মাণ করেছেন সমগ্র মণ্ডপটি। টানা দু'মাস ধরে ৬০ জন দক্ষ শিল্পী এই কাজকে পরিণতি দিতে ব্রতী হয়েছেন।

ডোকরা হলো "হারানো মোম ঢালাই" পদ্ধতিতে তৈরি একটি শিল্প কর্ম। এই শিল্পের ইতিহাস প্রায় ৪০০০ বছরের পুরানো। সিন্ধু সভ্যতার শহর মহেঞ্জদোড়োতে প্রাপ্ত "নৃত্যরত নারী মূর্তি" হল ডোকরা শিল্পের নিদর্শন। এটি একটি প্রাচীন শিল্প কর্ম। সেই শিল্পকে বর্তমানে পুজোর থিম রূপে এবারের দুর্গাপুজোয় তুলে ধরেছে সাঁইথিয়া অগ্রণী সমাজ।


মণ্ডপের শরীরজুড়ে ডোকরার কারুকার্য চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। ডোকরার সাজে মণ্ডপসজ্জা হলেও প্রতিমা একদম চিরাচরিত, কিন্তু আকর্ষণের জন্য ডোকরার একটি মূর্তিও থাকবে। এছাড়াও মণ্ডপ সজ্জায় ৪০ টির কাছাকাছি ডোকরার মূর্তি বানানো হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, "আমরা ডোকরা শিল্পকে মানুষের সামনে আবার এগিয়ে নিয়ে আসতে চাই, সেজন্য আমরা কিছু ডোকরা শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।" 

ক্লাবের দুই কর্মকর্তা শ্রী সব্যসাচী দত্ত ও শ্রী বিপ্লব দত্ত মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এই পুজো। এ বছর তাদের পুজোর বিশেষত্ব হলো খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা এই কাজ সম্পন্ন করেছেন। 

প্রতিবেদন- সুমিত দে



No comments