দেশের প্রথম ফ্যান্টাসি ছবি 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' চলেছিল টানা আটমাস
সত্যজিৎ রায়ের 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবি মুক্তির পরের ইতিহাস কারও অজানা নয়, চলেছিল টানা আটমাস, আমাদের দেশে প্রথম ফ্যান্টাসি ছবি৷ ছবি তৈরির নেপথ্যে আছে চমৎকার গল্প।
শুনুন সেই মন ভাল করা গল্প, নেপথ্যে বাবা-ছেলের ভাললাগা ও স্নেহের অনবদ্য অনির্বচনীয় রসায়ন৷
বাবার ছবি নাকি ছেলের বিষণ্ণ লাগে, তাই সন্দীপ রায় সত্যজিৎ রায়ের কাছে বায়না ধরেছিলেন গুপী-বাঘার ছবি দেখবেন৷
নিজের এগারো বছরের পুত্র সন্দীপ রায়কে খুশি করতে সত্যজিৎ রায় চিত্রনাট্য লিখতে বসেছিলেন 'গুপী গাইন' গল্প থেকে সিনেমা করবেন৷
আমাদের দেশে প্রথম ফ্যান্টাসি ছবি যদি বলা হয় নিশ্চিতভাবে 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবির কথা বলতেই হবে৷ ছবিতে গান আছে উনিশটি, রচনা, সুর এবং সংগীত পরিচালনা সব কৃতিত্ব একটি মানুষের তিনি প্রবাদপ্রতিম চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়৷
এই ছবিটি সব কালে সব প্রজন্মের কাছে প্রবল জনপ্রিয় একথা নতুন করে বলার কিছুই নেই৷
ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোরের 'গুপী গাইন' গল্পটা সত্যজিৎ রায় মহাশয় পড়েছিলেন সেকালের 'সন্দেশ' পত্রিকায়৷ মুগ্ধ হয়েছিলেন অসম্ভব, যখন তিনি সিনেমা জগতে প্রবেশ করেছেন তখন থেকে মাথায় ঘুরপাক খেত 'গুপী গাইন' গল্প থেকে সিনেমা করবেন৷
শেষ পর্যন্ত তিনি ছবির জন্য চিত্রনাট্য লিখতে বসলেন তাঁর এগারো বছরের পুত্র সন্দীপ রায়কে খুশি করতে৷ ছেলে বাবার কাছে গুপী-বাঘার ছবি দেখবে বলে বায়না ধরেছিল৷
আশ্চর্য লাগলেও সত্যি এই ছবি তৈরির নেপথ্যে আছে আছে আর একটা গল্প৷
যেখানে পরিচয় মেলে সত্যজিৎ রায়ের শিরদাঁড়া কতটা সোজা ছিল৷
পরিচালকের পরিকল্পনা ছিল ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে ছবির কাজ শুরু করে দেবেন৷
তাঁর বছর খানেক আগে হিন্দি ছবির অভিনেতা প্রযোজক তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি যে ছবিই করুন না কেন টাকার সমস্যা হবেনা৷
ছবির কাজ শুরু করা যাচ্ছিল না আর্থিক সমস্যার জন্য, বাধ্য হয়ে বোম্বেতে যেতে হল সেখানে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সেই প্রযোজক-অভিনেতার কথা হয়, সমস্যা মিটেই যেত, কিন্তু অভিনেতা-প্রযোজকের আবদার তাঁর ভাই ও বাবাকে ছবির প্রধান চরিত্রে সুযোগ দিতে হবে, প্রস্তাব পত্রপাট নাকচ হয়ে গেল কারণ সত্যজিৎ রায়ের সিদ্ধান্ত রবি ঘোষ বাঘার চরিত্র করবেন আর তপেণ চট্টোপাধ্যায় করবেন গুপীর চরিত্র।
সেখান থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই, সেই বছর বড়দিনের আগের দিন চলচ্চিত্র -প্রযোজক নেপাল দত্ত মহাশয় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করে বললেন তিনি ছবির বাজেটের অর্ধেক টাকা দেবেন, অন্যজন তাঁর পরিচিত বাকিটা দেবেন৷
সবমিলিয়ে ছবি তৈরির সব বাধা কেটে গেলো৷
তারপরের ইতিহাস কারও অজানা নয়৷
সত্যজিৎ রায় নিজের মুখে একবার বলেছিলেন 'প্রতিভা সর্বকালে সর্বদেশে বিরল।' মজার বিষয় তিনি নিজেই সেই বিরল প্রতিভার মানুষ৷
সিনেমা, সাহিত্য, কথা, সুর সর্বত্র স্বমহিমায় ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সত্যজিৎ রায় রেখে গিয়েছেন অজস্র মণিমাণিক্য৷ শুধু বাংলা, ভারত নয় সমগ্র বিশ্বের মানব জাতি গর্ব করেন সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে৷
গ্রন্থঋন ও কৃতজ্ঞতা- অদ্বিতীয় সত্যজিৎ-মঞ্জিল সেন, সত্যজিৎ রায় সাক্ষাৎকার সমগ্র-সম্পাদক সন্দীপ রায়৷
প্রতিবেদন- অরুণাভ সেন
Post a Comment