মানসিক রোগ ও সামাজিক লাঞ্ছনাকে চড় মেরে এক মহিলা আবৃত্তিকারের উঠে আসার গল্প
মেয়েরা যেমন চুল বাঁধতে জানে, ঠিক তেমনই কবিতা পাঠ করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে জানে। শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির ডানায় ভর করে যে এক আকাশে ওড়া যায় তার অন্যতম উদাহরণ হলো পারমিতা প্রামাণিক। যে একটা সময় নিয়মিত ঘুমের ওষুধের গ্রাহক ছিল সেই মেয়েটার কবিতা পাঠ ই এখন অন্য মেয়েদের মন খারাপের সাথী ঘুম না আসার স্লিপিং পিলস।
তাঁর কবিতা পাঠের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় হাজার হাজার মেয়েদের না বলতে পারা কথাগুলো, মনের ভাব, যন্ত্রণা। প্রতিটা দিন প্রত্যেকটা মেয়ে যে ঠিক কতটা সাংসারিক দায়বদ্ধ, মানসিক কষ্টে ভুগছে, সবকিছুই কতো সহজে সাবলীলভাবে তাঁর কবিতার মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। কোথাও যেন তাঁর কবিতাগুলি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কে দুবার ভাবতে বাধ্য করছে। নম্রতা ভদ্রতা এবং কবিতা পাঠের মধ্যে তাঁর অপার ভালোবাসা আকৃষ্ট করেছে শ্রোতা তথা দর্শকদের। প্রতিটা কবিতার মধ্যে কোথাও যেন সে বার্তা দিয়ে ওঠে আর সহ্য না করে এইবার গর্জে ওঠা যাক। শুরু করা যাক নিজেদের মতো লড়াই। নিজেদের ইচ্ছে, ভালোবাসা কি দাম দিতে শেখায় প্রতি মুহূর্তে।
ফেসবুকে এখন তাঁর কয়েক লক্ষ ফলোয়ার্স, ইউটিউবে ও তাই। তবে এই পথটা মোটেও সুগম ছিলনা শুরুর দিকে। কেউ কেউ বলেছে 'ন্যাকামি করে' আবার কেউ বলেছে 'সস্তার পাঠক', কিন্তু সে সব কথায় কান না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জেদ আর কবিতা পাঠ এর প্রতি ভালোবাসা তাঁকে এনে দিয়েছে এই সাফল্য। তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সবার ওপরে।
ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সব সময় কবিতার ভাবনায় তিনি নিমজ্জিত থাকতেন। এর জন্য পড়াশোনাটা ভালোভাবে করতে না পারার জন্য বারবার গৃহ শিক্ষক এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে মানসিক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল ছোট্ট মেয়েটাকে। সব সময় তুলনা করা হত তাঁর বড় দিদির সাথে যেটা তাঁর মোটেই ভাল লাগত না এবং এই না ভালো লাগাটাই কয়েক বছর পরে মানসিক রোগের জন্ম দিল। ক্রমে ক্রমে অ্যাংজাইটি তাঁকে গ্রাস করে নিচ্ছিল, দিনে দুবার নিয়ম করে নিতে হত ঘুমের ওষুধ। তবে ডাক্তার দেখিয়ে সেগুলো এখন পুরোটাই কমে গিয়েছে।
আজ তাঁর সাফল্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। রোজ রোজ কত নতুন লেখক লেখিকাদের কবিতা নতুন জন্ম পাচ্ছে তাঁর কণ্ঠে। অভিষেক রায়ের লেখা 'আমার এক তরফা ভালোবাসা' কবিতার মাধ্যমে তাঁর পরিচিতি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যারা ডিজিটাল মিডিয়া কে ভালবেসে কবিতাকে নিয়ে ভবিষ্যতে এগোতে চাইছেন তাদের কাছে নিশ্চয়ই একটা ইনস্পিরেশন পারমিতা।
প্রতিবেদন- পৌলমী হালদার
Post a Comment