এক সেরিব্রাল স্ট্রোক আক্রান্ত রুগির জীবন বাঁচালো কলকাতার দুই ট্র্যাফিক পুলিশ
সততা ও মহৎ কাজই মানুষকে মানুষ করে তোলে। সৎ মানুষের কর্মকাণ্ড সমাজকে অনুপ্রেরণা দেয়। গত ৩০ শে জানুয়ারি কলকাতা দেখলো এক মানবিকতার ছবি৷ যা প্রমাণ করে সমাজে সৎ মানুষের সততা আজীবন বেঁচে থাকবে। কলকাতার 'মা' ফ্লাইওভারের কাছে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন তিনজলা ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি সৌভিক চক্রবর্তী এবং সার্জেন্ট সুমন্ত পাল। হঠাৎ তাদের কানে খবর আসে ষাটোর্ধ বয়সী সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত এক সঙ্কটাপন্ন রুগিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ফ্লাইওভারের উপর বিকল হয়ে গিয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।
সাত-পাঁচ চিন্তা না করে তারা দুজনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তারা পুরো পরিস্থিতি লক্ষ্য করেন। সংকটাপন্ন সেই রুগীটিকে হাসাপাতালে ভর্তি করার জন্য তারা বিকল্প হিসেবে সায়েন্স সিটির কাছে রাখা কলকাতা পুলিশের একটি 'ট্রমা কেয়ার' অ্যাম্বুলেন্সকে ডেকে নেন। যদিও তাতেও কাজ হয়নি কারণ রুগিটির অবস্থা এতোটাই সংকটময় ছিল যে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি ইন্টেনসিভ কেয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। প্রয়োজন ছিল তেমনই একটি অ্যাম্বুলেন্সের।
কোনোরকম বৃথা সময় অপচয় না করে নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সার্জেন্ট সুমন্ত পাল। তিনি বাইকে করে নিকটবর্তী কারখানা থেকে একজন মেকানিকের খোঁজ চালাতে থাকেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই একজন মেকানিক পেয়ে যান। তারপর দ্রুত গতিবেগে তিনি বাইক চালিয়ে মেকানিক নিয়ে এনে বিকল অ্যাম্বুলেন্সকে সারানোর ব্যবস্থা করে দেন৷
সুমন্ত পাল যখন দাঁড়িয়ে থেকে অ্যাম্বুলেন্স সারাচ্ছিলেন ঠিক তখন সৌভিক চক্রবর্তী দেখেন অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তাই তিনি সমাধান স্বরূপ ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সমন্বয়ে 'গ্রিন করিডর'-এর ব্যবস্থা করেন, যাতে রুগিটির আর কোনওরকম দেরি না হয় হাসপাতালে পৌঁছতে। অবশেষে আট মিনিটের মাথায় হাসপাতালে পৌঁছে যায় অ্যাম্বুলেন্স। ওই রুগি আপাতত চিকিৎসাধীন।
আমরা অযথা রাস্তায় ট্র্যাফিক আইন মেনে চলিনা। আমরা ভুলে যাই যে এই ট্র্যাফিক আইনকে সঠিক রাখতে রোদ-জল ও ঘামে ভিজে দিনরাত ট্র্যাফিক পুলিশেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। মানুষের অসাবধানতা অনেক সময় তাদের জীবন কেড়ে নেয়। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের উচিৎ ট্র্যাফিক পুলিশদের সম্মান জানানো। আজকে যদি সৌভিক চক্রবর্তী ও সুমন্ত পালের মতো ট্র্যাফিক পুলিশেরা না থাকতো তাহলে হয়তো সেই রুগিকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। সৌভিক চক্রবর্তী ও সুমন্ত পালের এমন মহৎ কাজকে কুর্নিশ জানাই।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment