দুধ বিক্রেতা থেকে শিল্পপতি, খোকন ভট্টাচার্য ক্রীড়া জগতের কাছে পরিচিত মুখ
কষ্টের জীবন থেকে শিল্পপতি। বাঙালি শিল্পপতি খোকন ভট্টাচার্যের শিল্পপতি হওয়ার লড়াই। খোকন ভট্টাচার্য শিলিগুড়ির বাসিন্দা। পরিবারে অভাব থাকার জন্য পড়াশোনা বেশিদূর চালিয়ে যেতে পারেন নি তিনি। পারিবারিক অভাব মেটাতে তিনি কখনো দুধ বিক্রি করেছেন। আবার কখনো হাটে-বাজারে সব্জি ও ছাগল বিক্রিও করেছেন৷ এরপর একটি ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানে তিনি মাসিক ১২৫ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন।
বর্তমানে খোকন ভট্টাচার্য ক্রীড়া জগতের এক পরিচিত নাম। বাংলা তো বটেই দেশের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে তাঁর নাম। দেশের নানা প্রান্তে রয়েছে তাঁর নিজের কারখানা৷ তাঁর কারখানার উৎপাদিত সামগ্রী অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতেও সরবরাহ হচ্ছে। ভারতের ক্রিকেট জগতের তারকা সৌরভ গাঙ্গুলী, সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল গাভাসকার, কপিলদেব, প্রখ্যাত অ্যাথলিস্ট পিটি উষা ও ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়ার কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
কলেজে ফুলপ্যান্ট পরার টাকা ছিল না তাঁর। কিন্তু কলেজে ফুল প্যান্ট পরা বাধ্যতামূলক তাই তিনি পায়জামা পরে কলেজ যেতেন। তিনি পায়জামাতে মাড় দিয়ে ওটাকে মোটা করার চেষ্টা করতেন। তিনি মনে করতেন পায়জামাতে মাড় দিয়ে মোটা করলে দেখতে প্যান্টের মতো হয়ে যাবে। কেউ তাঁর ফুলপ্যান্ট পরার বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রশ্নও করবে না। কলেজ কর্তৃপক্ষও ওটাকে ফুল প্যান্ট ভেবে তাঁকে মুক্তি দেবে। আদতে তা হয়নি। তাই তিনি পড়াশোনাকে চিরজীবনের মতো বিদায় জানিয়ে নিজের আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করতে থাকেন।
তাঁর বাবা ও মা দুজনেই স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাঁর বাবা প্রয়াত দ্বিজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্য তাদের পরিবারের নিত্যসঙ্গী ছিল। তিনিও একটা সময় প্রচণ্ড ভালো ফুটবল খেলতেন। খেলার জগতে তিনি বহুবিধ সামাজিক কাজও করেছেন। বহু ছেলেমেয়েকে তিনি ফুটবল দান করেছেন। কোনো দক্ষ ক্রীড়াবিদ টাকার অভাবে খেলার সরঞ্জাম কিনতে না পারলে তিনি বিনামূল্যে তাকে খেলার সরঞ্জাম দান করেন। এতোটাই বৃহৎ তাঁর মন।
একদা শিলিগুড়িতে কোনো খেলা হলে তিনিই ছিলেন ভরসা। তাঁর কারখানাতে তৈরি জার্সি পরে খেলা হতো। তিনি ক্রীড়া সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্রের থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তাঁর নিজের তৈরি কারখানাকে। তাঁর কারখানাতে খেলার বুট, ফুটবল, টেনিস বল, কিট ব্যাগ, জার্সি, স্কিপিং রোপ ও পিংক বল তৈরি হয়। সিকিমের রাজ্য ফুটবল টিম তাঁর তৈরি জার্সি ব্যবহার করে।
তিনি ক্রীড়া সামগ্রীর গুণগত মান আরো বেশি উন্নত করতে ও কারখানার পরিকাঠামো বিশ্বমানের গড়ে তোলার জন্য একনাগাড়ে কাজ করে তুলেছেন তিনি। তাঁর ছেলে গৌরব ভট্টাচার্য তাঁকে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী উৎপাদনে বিভিন্ন নকশা তৈরিতে সাহায্য করেন। তিনি বিদেশে গিয়েও তাঁর প্রোডাক্টগুলির মার্কেটিং করছেন। খোকন ভট্টাচার্যের মতে, বাংলার ছেলেমেয়েদের চাকরি করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বনির্ভর হওয়ার মানসিকতা। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ কেউ চাইলে তিনি স্বইচ্ছায় তা দিতে প্রস্তুত।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment