Header Ads

মানুষ যেখানে বই হয়ে ধরা দেয়, কলকাতাতেও আছে হিউম্যান লাইব্রেরি


'হিউম্যান লাইব্রেরি' মানে মানুষের গ্রন্থাগার, এও কী সম্ভব? মানুষেরও লাইব্রেরি হয়! বিষয়টি অলীক লাগলেও একদম সত্যি। বইয়ের পাতায় আমরা জানতে পারি অনেক মানুষের কথা। তাদের জীবন নিয়ে কল্পনা করতেও ভালো লাগে আমাদের। গল্প হোক বা উপন্যাস সবই তো সেই কোনো না কোনো মানুষের জীবনকে ঘিরেই লেখা হয়। বই পড়ে তো আমরা অনেক মানুষের কথা জানি, কিন্তু কোনো মানুষের জীবন যদি সরাসরি শুনতে চাই আমরা কেমন হয়? ঠিক এই ধারণাটিকে কাজে লাগিয়ে ডেনমার্কের অধিবাসী রনি এবেরগেল ও তাঁর ছোটো ভাই ড্যানি এবং তাঁর বন্ধু আসমা মউনা ও ক্রিস্টোফার এরিকসন এই চারজন মিলে গড়ে তোলেন 'হিউম্যান লাইব্রেরি'। যা একেবারে লাইব্রেরির মতো যেখানে বইয়ের জায়গায় থাকে মানুষ। যারা তাদের জীবনের নানান গল্প দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। 


আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন যে আমাদের কলকাতা শহরেও এখন রয়েছে হিউম্যান লাইব্রেরি। ২০১৯ সালের ৬ ই জানুয়ারী কলকাতা শহরের প্রথম হিউম্যান লাইব্রেরির পথচলা শুরু হয়। হিউম্যান লাইব্রেরি কলকাতা চ্যাপ্টারের উদ্যোক্তা হলেন দেবলীনা সাহা। কলকাতার হিউম্যান লাইব্রেরি তে উপস্থিত দর্শকদের সামনে সমাজকর্মী, যৌনকর্মী, রূপান্তরকামী, এইচআইভি জয়ী মানুষ, অসহায় মানুষ, কবি ও অ্যাসিড আক্রান্ত মানুষেরা তাদের জীবনযুদ্ধের গল্প তুলে ধরেন। গুণগ্রাহী মানুষেরা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন ও তারা বিভিন্ন উত্তর দিয়ে থাকেন। এখানে মানুষের মুখে শোনা সত্যিকারের গল্পগুলো কাহিনীগাঁথার চেয়েও জীবন্ত।

স্মার্টফোনের যুগে মানুষ আড্ডা নামক বস্তুটাকে হারিয়ে ফেলছে। ছুটির দিনগুলোতে বেশিরভাগ লোকের ফোনের মধ্যে মুখ গুঁজেই দিন কেটে যায়। কোথাও বেড়াতে গেলেও লোকে আড্ডা তো দিচ্ছেই না, বরং সেলফি তুলতেই নিজেরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এই আড্ডা নামক বস্তুটা কিছুটা হলেও ফিরে আনতে সম্ভব হচ্ছে 'হিউম্যান লাইব্রেরি'র মধ্য দিয়ে। সমাজের চেনা ছক ভাঙতেই কলকাতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে 'হিউম্যান লাইব্রেরি'র। 

যে সব জীবন গল্প বলে, তাঁরাই হাতের কাছে বসে। এমন বই মন ছুঁয়ে যায়। বই থাকে মলাটে। কিন্তু, এই সব বইয়ের কোনও মলাট নেই। একজন জীবন্ত মানুষ বইরূপে ধরা দেয় এখানে। এ যেন অন্য রকম আবেগ৷ যার জীবনই গল্প, তার কাছ থেকে গল্প শোনা এক নতুন অভিজ্ঞতা। অন্যরকম বিনোদন করবারও সুযোগ থাকে হিউম্যান লাইব্রেরি তে।

হিউম্যান লাইব্রেরি সম্পর্কে হিউম্যান লাইব্রেরি কলকাতার উদ্যোক্তা দেবলীনা সাহা লিটারেসি প্যারাডাইসকে জানান "ইন্টারনেটে আমি একদিন পড়েছিলাম যে এরকম হিউম্যান লাইব্রেরি আছে যেখানে মানুষকে বড় করে তার গল্পটি শোনা যায়। যে গল্পগুলো একটা বাঁধাধরা নিয়ম ভাঙ্গার গল্প। আমাদের সমাজে আমরা জেনে এসেছি  এটা হতে হবে ওটা হতে হবে কিন্তু এর বাইরেও যে একটা সাধারণ জগৎ আছে তা জানার জন্যই 'হিউম্যান লাইব্রেরি'। ইন্টারনেটে যখন আমি পড়েছিলাম তখন আমার খুব ভালো লেগেছিল বিষয়টা। আমি দেখলাম যে কলকাতায় কোনো এরকম লাইব্রেরি নেই তাহলে আমি যদি এ বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি কেমন হয়। সেই থেকে আমি কলকাতায় হিউম্যান লাইব্রেরি বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করি। সমাজের উন্নতির জন্য এই লাইব্রেরিগুলির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ আমাদের সমাজে বেশ কিছু নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা হয়। সকলে তো আর সেই নিয়মে চলতে পারে না। সময়ের সঙ্গে যেমন সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে ঠিক তেমনই নিয়মেরও পরিবর্তন হবে। হিউম্যান লাইব্রেরি সেই পরিবর্তনটা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে থাকে।  যখনই সমাজে কেউ নিয়মের উল্টোপথে হাঁটতে চায় তখনই তাকে অনেক নেগেটিভ চোখে দেখা হয়। হিউম্যান লাইব্রেরি সেই নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিকে সহজে দূর করে দেয়।"  

প্রতিবেদন- সুমিত দে



1 comment:

  1. খুব ভালো উদ্যোগ, পাশে আছি।

    ReplyDelete