Header Ads

রায়বাহাদুরের পুত্র হয়েও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার


তৎকালীন সময়ে সাহিত্য জগতের সুচিন্তকদের মিলন ঘটিয়েছিলেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার। মধ্যযুগীয়  সমাজ-সংস্কৃতিকে কঠোর ভাবে দমানোর জন্য ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার বুকে নবজাগরণের ঢেউ উপচে পড়েছিল। সেকেলে যে কজন কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও মুক্তচিন্তাবিদরা মধ্যযুগীয় সমাজ-সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম হলো অক্ষয়চন্দ্র সরকার। 


ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার। প্রথম যৌবনে তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় লেখালেখি আরম্ভ করেন। ১৮৭২ সালে বঙ্গদর্শনের প্রথম সংখ্যায় তাঁর 'উদ্দীপনা' নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়৷ এরপর তিনি ১৮৭২ সালে মাসিক নবজীবন ও ১৮৭৩ সালে সাপ্তাহিক সাধারণী নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। নবজীবন চলেছিল ১৮৭৮ সাল অবধি। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মতো লেখকেরা এই জনপ্রিয় চিন্তাশীল পত্রিকাটিতে লেখালেখি করেন। রামেন্দ্রসুন্দরের প্রথম বাংলা রচনা এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। চুঁচুড়া থেকে প্রকাশিত সাধারণী পত্রিকাটির উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক আলোচনা ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে যুবসমাজকে সচেষ্ট করা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঙ্গবাসী পত্রিকার যোগেন্দ্রচন্দ্র বসু প্রমুখ প্রথম সারির সাহিত্যিকের রচনাবলি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত।

১৮৭৪ সালে গোচারণের মাঠ নামে একটি যুক্তাক্ষর বর্জিত শিশুপাঠ্য কাব্য ও সেই বছরেই শিক্ষানবীশের পদ্য নামে আর একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। সারদাচরণ মিত্রের সহযোগিতায় সম্পাদনা করেছিলেন প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ নামে একটি কাব্যসংকলনও। ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৭ সালের মধ্যে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত এই কাব্যে স্থান পায় বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, গোবিন্দদাস, মুকুন্দ চক্রবর্তী প্রমুখ মধ্যযুগীয় কবিদের কাব্যকৃতি।

অক্ষয়চন্দ্র সরকার ১৮৬৪ সালে হুগলির চুঁচুড়া শহরে ভূমিষ্ঠ হন। তাঁর পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর গঙ্গাচরণ সরকার। তিনি ১৮৬৮ সালে আইন পাস করে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ওকালতি শুরু করেন। পরে অবশ্য চুঁচুড়াতেই তিনি ওকালতি করতে শুরু করেন। রায়বাহাদুরের পুত্র হয়েও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার। তিনি দেশীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও স্বায়ত্তশাসনের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রেন্ট বিল ও এজ অফ কনসেন্ট বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। তিনি স্বদেশী দ্রব্য প্রচলনের জন্য আন্দোলনও করেছেন। 

অক্ষয়চন্দ্র সরকারের গভীর দেশপ্রেমের অত্যন্ত প্রশংসা করে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছিলেন -- "বলিবেন, অক্ষয়বাবু বাঙালিকে কী দিয়াছেন যে আমরা তাঁহার এত বড়াই করি? আমি বলি, যাহা আর কেহ দেয় নাই৷ সেটা কী? বাঙালিয়ানা, বাঙালিত্ব, আমি বাঙালি এই বোধ।" 

বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ষষ্ঠ অধিবেশনের প্রধান সভাপতি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-পরিষদ ও ভারতসভার প্রথম যুগ্ম সহ-সম্পাদকের পদে আসীন হন তিনি। ১৮৮৬ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এক অধিবেশনে উৎসাহী কর্মীরূপে যোগদান করেন। রায়তদের স্বার্থরক্ষাতেও সচেষ্ট ছিলেন তিনি। 

তথ্যসূত্র- বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত (অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়), সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান  

প্রতিবেদন- সুমিত দে


No comments